তৈমুর খান
সৌভাগ্য
সৌভাগ্যের দরজার কাছে বসে থাকি
একবার এসেও দ্যাখে না ;
সারারাত কাঁদছে আকাশ
কত নক্ষত্র ঝরে গেল
পাহাড়ে ও বনে ডাকছে নিশাচর ।
স্বপ্নের বিছানায় সৌভাগ্য কি ঘুমুচ্ছে এখন ?
আলতা রাঙা পায়ে তার সুষমা বৈভব
চুলেও লেগেছে রঙ্ বিদ্যুৎবেলার ।
হাওয়া বইছে ওর জানালায়, খুব ভালো হাওয়া
চাঁদ একা চুপিচুপি চুম্বন পাঠায়…
বসে আছি অবিশ্রান্ত
রাত বেড়ে যাচ্ছে জীবনের ভেতরে বাহিরে
থেকে থেকে ডাকছে ক্লান্ত নিশাচর
ভালো আছি
অন্ধকারে সব ক্ষত ধুয়ে নিই
তারপর নক্ষত্রের আলোয় ঢেকে রাখি
সভ্যতায় আমিও চুপিচুপি
হতে চাই বিজয়ী
রক্ত ক্ষরণের সেই গোপন প্রবাহ
এখনও ঘুমায় বুকে
টের পাও কেউ ? কেউ টের পাও ?
ভালো আছি , ভালো আছি
সমস্ত অবিশ্বাসের কাছে আমিও বিশ্বস্ত গান
গেয়ে চলে গেছি
দূর রাস্তার ধারে যেখানে ঔরস এক
মানবিক বোধ চায় অথবা পড়তে আসে বোধের স্কুলে
সেও জানে প্রজাপতি মরে গেলে
ফুল ঝরে যায় তার শোকে
অনাবিষ্কৃত
পথের পাশেই এক পথ পড়ে থাকে
তাকে কেউ আবিষ্কার করে না
মানুষের ভেতর আর এক মানুষ
তাকে কেউ চিনতে চায় না
প্রতিদিন অনাবিষ্কৃত এবং অচেনা
অন্ধকার সেখানে খেলা করে
পাথর ও কাঁটাগাছ জন্মায়
লাল টুকটুকে বন্য ফুল ফোটে
আমরা শীতে আপেল খেতে খেতে
একপাল পায়রার ওঠানামা দেখি
কেউ কেউ নারী হয়ে যায়
কেউ কেউ বেড়াল
কারোরই পোশাক নেই
কেউ কেউ নিতান্ত বাউল
আলো-আঁধারির একতারায় সুর কেটে কেটে যায়
সমস্ত শোকাঞ্জলির পর
অনুশোচনার সূচনা হলে
আমরা এখনও মরে যাইনি তো?
অক্ষম প্রশ্নটি জেগে ওঠে
সব দাবানল দূরে
আমরা শুধু তাপটুকু পাই
তবু হাওয়া কলঙ্কিত করে, উড়িয়ে আনে ছাই
এ জীবন মেঘদূতের হোক
আমরা সবাই ব্যর্থ কালিদাস
শব্দের চন্দ্রযানে চলে যেতে চাই নষ্ট মহাকাশ
সমস্ত শোকাঞ্জলির পর, হে জীবন
বসতে চাইছ অনুকরণ-প্রিয়ার পাশে!
প্রজাপতি ধরতে চাইছ নতুন বার্ধক্যে এসে!
হৃদয়ের টুকরোগুলি
রোজ কার ছায়া চাই আমি?
এই বেঁচে-থাকাটুকু রাখব ছায়ায়
নির্জন পড়শিনি এসে দেখবে আমায়
আমার কুশল নেবে ; দেবে প্রশ্রয়!
কত বাঁকা চোখ, তিব্র বজ্রের মেঘ যায়
ধর্মহীন দেশে ওরা ধর্মের আবেগ ছড়ায়
এক-একটি আলোর নামে কৌশলী আঁধারে
রোজ রোজ ওরা এসে ধর্ম খুন করে
অস্পষ্ট প্রেমের হাত, মৃত গান
রক্তে রাঙা সভ্যতার গোলাপবাগান
বাঁশি নেই? সুরে সুরে জেগে উঠতে চায়
ভাঙা হৃদয়ের টুকরোগুলি…..
মরীচিকা
এপাশে খুঁজে দেখি : কেউ নেই
ওপাশে খুঁজে দেখি : কেউ নেই
এপাশ ওপাশ জুড়ে শুধু মরীচিকা
ঘরকন্না করে
আমি তবে কার গর্ভে জন্মালাম?
একখণ্ড আকাশ বৃষ্টির অক্ষরে চিঠি লেখে
এক ঝলক বাতাস উড়িয়ে দেয় ধুলো
আমি খুঁজে পাই ফাগুন মাস
আমার নিগূঢ় ধান, আমার নিগূঢ় চাষ
মাঠ আর মহিমার সূর্য, নিগূঢ় পাখির গান
রোজ ফিরে আসে মরীচিকার মেয়ে
আমার দুর্গা
এক পাশে আজও এসে দাঁড়াই
আজও তুমি সংহারিণী দুর্গতিনাশিনী
আজও তুমি বরাভয় আলো সঞ্চারিণী
তবু আমার আকাশখানি কেন তবে ছোট?
সারল্য হারাচ্ছে চারিপাশ
হইচই আছে তবু নেই আনন্দের ডাক
মানব-দিঘিতে রোজ কত পদ্ম ফোটে
তোমার পূজার পদ্ম তুলে জমা করি
অঞ্জলি দিতে আসি রোজ
তুমি তো হৃদয়ে আছ
তুমি এক সর্বব্যাপী মানবিক বোধ।