জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
প্রকৃতি ও প্রাণ
১.
জলছুঁই নদীটি দুহাতে জড়ালে টলটল হাসি
চৈত্রের ভরা রোদে শীতঘুম এখনও ভাঙেনি।
টিলা থেকে ঢাল নামে শুকনো পাতায় জলে
কার যেন চেনাপায়ে ছাপ মাঘীরাত গেয়েছিল
বন্ধ্যামিলন ব্যথাহরিণীর রাতজাগা চোখ
রড বেয়ে মগজের স্মার্টরুমে কতগুলি ছবি গেঁথে রাখে।
এইসব মারীচপ্রেমিকা নদী কাজলের বাণ সাধে।
২.
পাতার কাঁদনে কিছু ডাল জেগে থাকে
তারপর গান বাজে সবুজের ছায়া পেলে
হাসিমুখ পাতারা যে কোথায় হারায়!
মঞ্জরির আগুনে পতঙ্গের ঝাঁপ হাওয়া কাঁপে
গন্ধের প্রপাত ফুঁড়ে অরণ্যরক্ষীর ঘোড়া
খুলিগুহা পার।
৩.
বর্ষার বেলফুল রাত্রির স্নান সেরে ডাকে চাঁদ
সে তখন মেরিলিন মনরো বা গ্রেটা গার্বো
চটকলশ্রমিক এক লক আউট খেয়ে প্রথম
বিলিতি ছবি সাঁতরাই তারপর আরো কিছু গিলেটিলে
ছেঁড়া চটে চাঁদ ছেনে খাবো।
সকালে আমার বউ কেঁদেকেটে বেলকুঁড়িমালা
নিয়ে বাজারের সেই কোণে পসার সাজাবে।
৪.
কাজলির বর আজ দশদিন ফেরেনি কে জানে কী কাজ
জানা কোনো কারণ তো নেই নতুন বউয়ের বুকে মেঘ ডাকে
বিরহের চিতা জ্বলে ঘি মারে প্রতিবেশী দিদি
কার কাজলের টান তলোয়ার চোখ কোপ মারে
প্রেম নেই প্রেমিকার বুকে ভাঙে শ্রাবণের ঢেউ।
শব্দ- ৩
জানি কখনো বন্ধ হয়না পথ
ভারী দুপুরগুলোর উষ্ণতায় কিংবা
নির্ভার বিকেলের হিম মেশা মাধুর্যে
কথাগুলো মাথা কুটে মরে
ঘুমন্ত ঘাসবনে প্রজাপতি ওড়া বিকেল
কুয়াশাফুল, দখিনের সূর্যঢলা লাল,
সন্ধ্যাতারা টিপ, হিম নামছে……
বিশ্রামের ঘণ্টা দেয় ক্লান্ত পাখিরা
আকাশপ্রদীপ বড়ো বাঙ্ময়
দুএকটি উল্কা বেশ ডুব দেয় দূরে……
শিশিরের শব্দে কিছু শীকর ঝরে
নীরবতা বলে কিছু নেই তো কোথাও!
কথা শুধু কথারই মালা শব্দ সুনিশ্চয় ৷
হায় অরণ্য
অরণ্যের প্রবল ডাক দুপুরঝড়ে উড়ছে সবাই
যাচ্ছ যাও যেতেও পারি দ্বিধার রুমালে বাঁধি ছাই।
যেতে যদি হয় সকলের মতো,অপ্রিয় নদীর কিনারে
উজ্জ্বল আলোর দিকে উঠে যাওয়া টলমলে অলীক মিনারে।
তবে তুমি হেসে নিতে পারো এ সেতারে বাজবে না সুর
এখন পড়ন্তবেলা ছুটে যাও তোমার তো সাজানো দুপুর।
আমাদের বনসাই সাজানো স্বপ্ন ভরে ছিল অরণ্যসবুজ
ভেঙে গেছে খানখান তুষারকণার মতো তবু মন মানে না,অবুঝ।