সপ্তদ্বীপা অধিকারী
বৃক্ষজীবন
চিহ্ন আছে, চিহ্ন থাকে
ফল্গুধারায় মিলেমিশে
চিনতে পারোনি;
কিম্বা হয়ত আমিই ভুল
চিনতে চাওনি তুমি নিজেই
চিনলেই দিতে হয় স্বীকৃতি, পরিচয়
তোমার তো বৃক্ষজীবন
শিকড় তোমার পাতালপ্রোথিত
শাখাপ্রশাখায় বসবাসকারী পক্ষীশাবক,
খড়কুটোবাসায় শান্তির সাদা প্রতীক;
এখানেই... এখানেই শুয়ে আছে দ্বন্দ্ব
মায়ের ওমের দিকে চেয়ে আছি দুজনেই
দশ মাস দশ দিনের অপেক্ষা শুধু,
তারপর দেখা যাক, প্রত্যাখ্যান না প্রাপ্তি...
উৎসব
রোজ সকালে
সুগন্ধী খেয়াল নিয়ে হাজির হও তুমি! মরুভূমির তৃষ্ণার্ত চাতক-মুখে। হাজার বছরের
পিপাসা তার চোখে, মুখে,কন্ঠে, হৃদয়ে!
পায়সান্ন হাতে সুজাতা হয়েছিলে তুমিই এইতো সেদিন! সময় আর পাত্র ভিন্ন। ভিন্ন সুখ। এও
এক মস্ত ভুল। ভিন্ন ভুল। কোনো এক দুপেয়ে নহবত
পিছুটান দেয়। চাঁদের আলো বোবা মনেহয়। মনেহয় নিষিদ্ধ গ্রহরা মিছিমিছি ভিড়
করে আছে। মিছিমিছি চন্দন মাখানো প্রেমচিঠি। মিছিমিছি সাজানো মঞ্চে যত নট আর নটী। উষ্ণতায়
গলে যাবে সকলের রঙ্গিন ফানুস। মৃত্যুর মতো নিষ্পলক এ দৃষ্টি লালিত হয় সেই মায়াবী
হাতছানি এলে। সত্য করে বলো,
তুমি কি সত্যই নিষ্প্রাণ পাষাণ? শুধুই সেকালে ছিলে পাথরের গায়ে? এখন এসেছো
কতো রঙ্গিন হৃদয়ে?
এ কোন্ খেয়ালি রূপে ভাষাও অন্তরে? পলাশের
রক্তিমা তবে কোথায় ছিল?
ভাষার ক্যানভাসে অসময়ের বৃষ্টিবিন্দুগুলি নাচাও কাহারে? তবু দেখো, সাগর
মোহনায় অনিবার্যতার শিকড় নেই। নেই কোনো সবুজ! আছে খালি
পাথরের মূর্তির চোখে অশ্রু,
কল্পনার অলিন্দে ভরা আতর; দেবদারু বনে আছে ঝড় আর কান্নার
ভায়োলীন ছেয়ে আছে যত উৎসব!
আদিমতা
মৃত্যুটা
ঠিক কবে ঘটেছিল; বোঝা
যায় নি। বস্তুত মৃত্যু মানে কি অপরিচিত মুখ? নাকী মুক্তমঞ্চে মুখোমুখি বসে থেকে
চেনা গন্ডির কার্টুন সাজা?অথবা
সমস্ত উষ্ণতা খুলে,
সমস্ত অসুখের ভান মুছে, সমস্ত আর্তচিৎকারের গলা টিপে ধরে, পলাশ রাগে
অনিশ্চিত ভয়কে রাঙিয়ে,
চেতনের প্রলেপ জড়ানো সুধা ঘুম!
অল্প
কয়েকটা শব্দ, দু'ঠোঁটের
ফাঁকে আদুরে রং মেখে,
কাগুজে ফুল ফুটিয়েছিল সেই কবে যেন! তাতেই মেয়েটির নাভিতে
কস্তুরি মৃগ, আর
ছেলেটি মাতাল মেঘদূতকে দিয়েছিল বিরহ-বারতা, পুকুরের কচি জল কেঁপেছিল চিহ্নিত
নগ্নতা নিরখি। সূর্যের অভ্রকুচি শব্দহীন নিষিদ্ধ দুয়ারের নহবতখানায় ভালোবাসা ফুল
হাতে দাঁড়িয়েছিল।
ফুল হাতে
ভুল ভেবে জীবন্ত ফসিল নাচে কামগন্ধ মেখে
প্রতিটি মৃত্যুর বাঁকে
এভাবেই আদিম হরিণী বেঁচে থাকে...