মৌ মধুবন্তী
ঘুষ নয়, ধর্ষন নয় ভাষার মুক্তি চাই।
এখানে পতাকা উড়াও স্বাধীনতার আস্তিন হাতে নিয়ে
এখানে ধুলায় পা ফেলো স্বাধীন বাংলার গান গেয়ে গেয়ে
এখানে পাখীর কলরব শোনো
তেতুলিয়া থেকে টাকনাফে
এখানে নদী বয়ে নাও বাধাহীন, মায়ের কলতান-আদরে
এখানে ধুপ জ্বালো, শিখা জ্বালো স্বাধীনতার গল্প কোলে নিয়ে
এখানে মাটি খুঁড়ে স্বপ্ন বানাও আদর্শের অস্ত্র হাতে নিয়ে
এখানে মানুষ বাংলা বলো নির্ভয়-নিঃশংক চিত্তে
এখানে কবিতাকে দুর্বার ভাসাও জয়ের নেশা চোখে নিয়ে
এখানে বালক-বালিকা খেলা করো স্বদেশী শ্লোক মুখে নিয়ে
এখানে মায়ের কবরে, বাবার কবরে বাংলা ভাষা রাখ কস্তুরী গন্ধে
ভরে
এখানে হাঁসগুলোকে
ভাসতে দাও স্বাধীন বাংলায় ডানা ঝাঁপটিয়ে
এখানে শাড়ির আঁচলে, শালে ও কামিজে বাংলা বোনো ঝাঁকে ঝাঁকে
এখানে একুশে ফেব্রুয়ারী, বাজাও “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো”-
এখানে ছাব্বিশে মার্চ এখনো টকটকে লাল তাজা রক্তে ভেজানো
এখানে ষোলোই ডিসেম্বর পদাঘাতের আওয়াজ –এ- কাঁপানো
এখানে এখনো হারানোর ব্যথা, ক্ষত দগদগে,
মায়ের চোখে কান্নার জল নয় শুকানো
তবে
এখানে এখন কেন ?
ঘুষ, রাহাজানি, ধর্ষণ কালোবাজারী?
এখানে এখন কেন? ব্যভিচারে মৃত্যু, নীতিহীন সরকারের চালবাজী?
মুক্তি-যুদ্ধে আমিও রাইফেল ধরেছি; দাও আমার অধিকার
একটাই দাবী জানাই, ঘুষ নয়, ধর্ষন নয় -
স্বাধীন বাংলা চাই
শুদ্ধ বাংলা চাই
ভাষার মুক্তি চাই।
বিউগল কবি
কতটা মজুর তুমি কবিতার মাঠে?
কতটা আঘাত পেয়েছ মনে
কবিতার শব্দ গিলতে?
কতটা নির্মমতা দেখেছ,৭১'এর
বর্বর পাক বাহিনীর আক্রমনে?
কতটা বাংলা শব্দের দিত্ব অর্থ জানো
ব্যাকরন? সমাস? কারক? বিভক্তি?
এক কথায় অসাধারণ? লাপাত্তা
হারামখোর, কবিতাকে ধর্ষণ করে
নিমেষে পলাতক ; যৌনবাজ।
যতি চিহ্নের নীচে বসে
আবগারী শুল্ক আদায়
দেখেছ? দেখেছো কি
শব্দের ক্ষেপনাস্ত্রে নিজেকে
ক্ষত-বিক্ষত, উলংগ হতে
কঠিন ভংগুর চিন্তাকে কতটা
জমায়েত করতে সক্ষম হয়েছ?
কবিতা নেমে গেছে গভীর
সমুদ্রে কন্যাকুমারীর হাত
ধরে, তাকে ফেরাতে কতটা
জলে ডুবেছ?
পাথরে আর ভাংগা নুড়ির নিষ্ঠুর পথে
কতটা একাকী হয়েছিলে? কবির
ভেতরে কতটা তুমি সত্য কবি আর
কতটা ঠগবাজ,তার বিচার করে দেখেছ?
নিক্তিতে তার ওজন করেছ?
সব প্রশ্ন শেষ হলে, জীবন কবিতা হয়ে ওঠে
কস্মিনকালে সে জীবনের
দেখা মেলে- অগ্রপথিক তুমি পথের
শেষ সীমানায় গিয়ে দাঁড়াও, দেখবে
কোথাও তোমার পথিক পা চিহ্ন রাখেনি।
তুমি কোনদিন কোটেশান হতে পারোনি।
এক কলম কবিতা লিখেই বিজ্ঞ কবি তুমি!
আহা বিউগল!
মায়ের জন্য প্রতিশ্রুতি
কতদিন দেখিনি তোমার মুখে সরল হাসির টান
তোমাকে কোনদিন কাঁদতেও দেখিনি অনির্বান
কি পাষাণ বুকে বেঁধে তুমি সন্তানের শোকে মুহ্যমান
চারিদিকে হরির লুট, হাহাকার, রাজাকার-ধর্ম সোলায়মান
কার কাছে যাবে তুমি , এই ভেবে ভেবে বিমুর্ত হয়েছ
দেখ না বুঝি সন্তানের
কাছে তুমি ও আপন মা রয়েছ
পর ও কি হয়েছে তারা একেবারে? নাকি বেশটাই বদলেছে
তোমার পরনে সেই ছেঁড়া কাপড় একাত্তর থেকে একই আছে
তাই তুমি ভেবে অবাক হও বুঝি মা, এরা কারা
আদর্শের বুলি তুমি যত শিখিয়েছ ভুলে গেছে আজ সব তারা
তবু ও দেখ মা আজ বাংলার ছেলেরা কেমন খেলেছে মাঠে
দোদন্ড শক্তি নিয়ে প্রবল প্রতাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে
আবার তারা নেবে হাতে অস্ত্র হাতিয়ার খুন্তি কুড়াল
যা কিছু পায় সামনে
লড়ে যাবে সমান তালে একাত্তরকে মনে রেখে
বীরমহাবিক্রমে।
শুধু তুমি জেগে থেকো সেইদিন দু'চোখ ভরে দেখতে
মুক্ত- প্রাণ খুলে সোনার বাংলায় আবার মানুষ হাসবে।
ও আমার বাংলা মা,
তুমি ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না
এমনি করে বিয়াল্লিশ গেলেও চুয়াল্লিশ তো পার হবে না।
বাংলার গৌরবোজ্জ্বল
বিজয়
ফিরিয়ে আনবেই তোমার সন্তানেরা
এইটুকু বিশ্বাস রাখো চেতনায়
শহীদের রক্ত কোনদিন বৃথা যাবেনা।