কাকলি দাশ ব্যানার্জী
প্রাপ্তি
আইভি লতার মত এক লাজুকে গোধুলিবেলায়
লবঙ্গের গন্ধ মাখা রোদে স্নান করছি আত্মজার সাথে,
বুকে জাফরানের রং আঁকছে বিরল একটা উৎসবের ছবি
ওর হাতে ওর প্রাপ্য
মেহগনি সম্মান
আলোকবর্ষ দূরে,
কোন অপূর্ণ ইচ্ছের সাথে আমার যে গোপন অভিসার ছিল
তা প্রসব করেছে
অভিমুন্য মেঘ--
হঠাৎ তাই
বুকের অরণ্যে অঘোরে বৃষ্টি আনে,
একটু বাদেই উঠবে পঞ্চমীর চাঁদ
নীলকন্ঠ পাখির ডানায়
অনাবিল অবসরে
আমি এক ভালো লাগার বলয়ে
অণুকথার বাগান গড়ছি
জলফড়িংয়ের মত ....
আমার নিস্তব্ধ বাসনার
বীজ বুনে দেব আজ ,
তনয়ার নিজস্ব অক্ষরেখায় ।
না ফেরার দেশে পৌঁছনোর আগেই --
ওর বুকে একটা নির্নিমেষ নদীর জন্ম দিয়ে যাবো আমি ।
নির্লিপ্তা
চক্রব্যুহে যে লালসার লোভী ফাঁদ পেতেছিল ব্যাধের দল-
বুঝেতে পারেনি মেয়েটা
ওদের ঘৃণ্য কালো হাত ওর চিবুক ঠোঁট দেহের তিল
এমনকি সমস্ত গোপন রেখা ছুঁয়ে
শরীরের পংক্তির স্তব্ধতাকে হত্যা করেছিল
ঘৃণায় খাক হওয়া বজ্রাহত মেয়েটা আর নটার ট্রেন ধরে
কর্মস্থলে আসে না ...
ও জেনে গেছে ওটা হায়নার ডেরা
ওর দিনগুলো সখ্যতা করেছে হাহাকারের সাথে,
ভূমিকম্পের দেওয়া কোন শর্তই আর
বিচলিত করে না ওকে
এই অকাল মৃত্যুর আগ্রাসন
নিয়ত ওর আয়ুকে কফিন বন্দী করার পরামর্শ দেয় -
সংসারের পটভূমিতে এখন প্রলম্বিত শীত,
গহীন গহনে জমানো বিষাদ এখন গর্ভবত,
তবু পাঁজরের বুকে বাড়তে থাকা গাছটা
যখন সব গোপন শর্ত ভঙ্গ করে
চুপিসারে সঞ্জীবনী আশার ক্লোরোফিলে স্নান করে
তখন এলাকা দখল করে
পর্যায় সারণীর নতুন সমীকরণ..
পরম উদ্ভাসে মেয়েটি অনুসরণ করতে পারতো
পথের অন্য বাঁক,
সেখানে সমর্পণের পূর্ণতায়
নতুন ফসলের সঞ্চয় আছে জেনেও
চাহিদার লালা ঝরা জিভ
মেয়েটি উপড়ে দিল অনায়াসেই।
মুখ আর মুখোশের মধ্যে
আর তফাৎ করতে পারে না ও ...
একটা ভুজঙ্গমী দৃষ্টি ও দেখতে পায়
সব কটা চাহনিতে....
হৃৎপিণ্ডের মাঝে গেঁথে যাওয়া
উজ্জ্বল তীরটা দগদগে ঘা করে দিয়েছে
বিশ্বাসের দেহে
শুধু নির্লিপ্তি ....
জীবনের পাণ্ডুলিপিতে রোদের বাসর নয় এখন
স্তব্ধতার কারুকাজ
মেয়েটা বিপন্ন জীবনে একাই মহাকাব্য লিখবে বসে বসে ।
ডাকনামে জীবন
তোমার প্রেমিক মনে কারফিউ লেগেছে তা জানি
প্রজাপতি খুশির ডানায় দগদগে লাল যুদ্ধ রং
উথলনো আবেগে আর রূপকথার ঠাসবুনন নেই
তবু অভ্যেসে বাঁচো , চুল্লিতে পুড়ছে আহত ঢং।
আমার স্বপ্নরা জানো বেয়নেটের মুখে দাঁড়িয়ে
পুড়ছে শরীরগন্ধ মুদ্রায় তীব্র হলাহল
চোখের বারান্দায় মনের আর্তনাদী মেঘ
মূল্যবোধে আঁধার কথা এটাই নৈমিত্তিক চল ।
তবুও বেঁচে আছি
প্রাত্যহিকে ইহকালের
স্তব
বিসর্জনের চরাচরেও খুঁজে চলি
ভালোবাসার বৈভব ।
এটার ডাকনাম জীবন দিয়েছিল কেউ
শব্দগুচ্ছে ওৎপেতে বসে আছে নিজস্ব কঙ্কাল
পোষাকী আবরণে নামধারী অবয়ব ঢেউ
নিয়ত খোলস ছাড়ে নয়তো সব হবে বানচাল।