শর্মিলা মাজী
রুপটান
রুপটান দিও, সকালের নীল আকাশ,
বাতাস সুগন্ধী দিও, দিও চন্দনবাস।
ও মেঘ তুমি কাজল না দিয়ে যেয়ো না চলে,
পলাশ-অশোক-কৃষ্ঞচূড়া রক্তিম আভা দিও কপোলে।
ভোরের সূর্য কপালে দিয়েছে অরুণরক্তলিখা,
ও সকাল তুমি জয়যাত্রায় পরিও জয়টীকা।
ধানীরঙা শাড়িখানি পরিয়ে দিও সবুজ কৃষিক্ষেত,
রোদের হলুদরঙা জামাখানি সঙ্গে মানাবে বেশ।
মুকুর দিও মুখটি দেখতে ও স্বচ্ছ সরোবর,
মহুয়া ফুল রাঙিয়ে দিও মোর দুটি অধর।
ও শিরীষ তোমার ফুলটি দিয়ে, কর্ণে পরিও দুল,
মাধবীলতা তুমি গলার হার হয়ে দুলবে দোদুল-দুল।
সবুজ গাছেরা সখী হয়ে, ঘিরে থেকো চারপাশে,
প্রেমিকের কথা বলো কানে-কানে, লাজ রক্তিম ভাষে।
চুল জড়িয়ে খোঁপা বেঁধে দিও, ওগো নীলমণিলতা,
জুঁইফুলের মালা জড়িয়ে দিও খুলবে খোঁপার শোভা।
বেলফুল দিও হাতের বাঁধন, দুখানি শোভন বালা,
এভাবে দুপুর-বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যে ঘনাবে ঘোর,
তখনি বাজবে চরণে নূপূর,
বাজবে শ্যামের বাঁশির সুর।।
রাস্তা পার হবো কি করে
রাস্তা পার হবো কি করে! দুদিকে যতদূর চোখ যায়-
সবুজগাছেরা হাত ধরাধরী করে মন্দির বানায় ভালোবাসার।
রোদের তুফানে শরতের মাতৃত্ব জেগে ওঠে,
কুমোরটুলিতে প্রতিমার শরীরে রোদ খেলা করে,
বাতাসে খুশীর টান।
মেঘেদের শুভ্রতা আর আশ্চর্য্য গড়ন সব,
মাথা উঁচু করে আকাশের নীলে ভাসমান বরফ যেন,
তবু সমস্ত উষ্ণতা মেখে মেখে এগিয়ে চলি
কিন্তু রাস্তা পার হতে গেলে মেঘেরা খিলখিল হেসে ওঠে,
একটি চিল একই রেখায় শরীরটি ভাসিয়ে
আকাশের নীলে আগমণির স্বাক্ষর লিখে যায়,
দুদিকের ট্র্যাফিক উপেক্ষা করার সাহস
শরৎরোদ্দুরে দানা বাঁধে,
এত এত শুভ্রতা দিয়ে পবিত্র করেছ,
অসুরনাশিনী মঙ্গলময়ী দেবী দশভূজা।
তোমার দশখানি হাতে দশদিগন্ত আজি মোহময়।
ওইতো মেঘের গরনে হস্তীপৃষ্ঠে বিশ্বকর্মা
তোমার আগমনবার্তার আমন্ত্রণলিপি বিলি করেন দিকে দিকে,
তাঁর পূজোর প্রস্তুতি নিয়ে মানবকুল কাগজের নৌকো ভাসায়।
এত সোনা রোদ্দুর এত আগমণি গান এত সাদা মেঘের তরণী
কালসমুদ্রে ভাসিয়েছে পাল!
কাশফুলের হাল্কা শরীর গান গায় নদীপারে,
প্রজাপতি ফড়িংয়েরা আনন্দে ঘোরেফেরে
বলো, রাস্তা পেরোব কি করে!
দীর্ঘবিকেলের প্রেমকথা
এক দীর্ঘ বিকেল, চুম্বকের মতো আটকে রাখে আমায় তার ধীর গতি
চলার ঢঙ্গে। এসময়ে তপন তার সব প্রখরতা সংহত করে মায়াকে ছড়িয়ে দেয় পৃথিবীর নানা কোণে।
এই প্রেম, এই হৃদয় দৌর্বল্য আমার সাথে মিলে যায়, অফিসকাজের সঙ্গে সে কিভাবে যেন সামঞ্জস্য
রক্ষা করে আমায় বেঁধে রাখে জানালায় তার সঙ্গে! পাশের বাড়ির ছাদের প্যারাপেটের উঁচুনীচু
মাথা, লাল রঙা দেওয়াল যতটা সে হাত পায়! ছুঁয়ে বসে থাকে দীর্ঘক্ষণ, কাঁচা হলুদের রঙ
মাখিয়ে দেয় সবুজ গাছের ডালপালায়, গম্বুজের স্থাপত্যকারুকাজ-এর প্রতিটি রেখা প্রতিটি
খাঁজ লম্বা আঙুল দিয়ে বুলায় পরম মমতায়। এমন মমতাভরা চোখ দিয়ে সে বেঁধে রেখেছিল দীর্ঘসময়
দীর্ঘপথের সাথে এই দীর্ঘ বিকেলের মতো। ওইযে রঙিনমেঘ তার চোখের চাওয়ার মতো আমার বুকনদী
ছুঁয়ে বসে থাকে। আর অন্য যে জন, সুর দিয়ে গান দিয়ে রচনা করে রেখেছে যে মধুর ক্ষণ! দৈহিক
কামনা আসঙ্গলিপ্সা অহরহ জানিয়েছে সহজসরল ছন্দে, তাকে বিকৃতি বলি কি করে! সবইতো ভেসে
আসে ঈথারতরঙ্গে! তার কামনার রঙ এবিকেল আলো, পৃথিবীকে কিভাবে যে ভালোবাসবে বুঝে পায়না
সূর্যহৃদয়! আমার সারাদিন কেটে যায় কাজের সাথে এ আকাশ নানা রঙা আলো ঘিরে থাকে গাছেদের
সবুজবলয়।