তারিক-উল
ইসলাম
আপনাকে
আবার আপনার
সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে,
আপনি কথা
বলার চেষ্টা করবেন
কিন্তু
বলতে পারবেন না।
বাউরি
বাতাসে গাছে পাতার মতো
কাঁপতে
থাকবে আপনার চোখের ভ্রু
জলে পাখির
পায়ের শব্দের মতো কাঁপবে ঠোঁট।
আপনি একবার
সামনে তাকাবেন
আরেকবার
পেছনে।
আপনি রোদ
দেখবেন,
আবার মেঘে
কম্পমান ছায়াও দেখবেন।
এ এক অন্যরকম
অস্থিরতা,
আকাশে
দিব্যি দেখবেন একটি মাছরাঙা
একটু ওপরে
উঠে ডিগবাজি দিয়ে
সিঁড়িতে
পায়ের মতো নিচে নেমে আসছে।
একটি কাঠবিড়ালী
গাছের পাতা গলিয়ে তাকিয়েই হারিয়ে গেল!
দেবদারুর
হলুদ পাতাগুলি বাতাসে ঢেউ তুলে ঝরে পড়লো।
একটি সবুজও
শরীরে আলো মেখে ঝরে পড়েছে।
বৃষ্টি
কী হবে আজ!
ব্যালকনিতে
আপনার হাতে চায়ের কাপ, ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে
অথচ আপনি
চুমুক দিতেই ভুলে গেছেন।
ধুলো জমেছে
আপনাদের বাড়ির কার্নিশে এবং জানালার ওপরে
চশমার
বাই ফোকাল প্রগ্রেসিভ গ্লাসেও জমেছে কিছুটা।
দোতলায়
উঠতে যেখান থেকে আলো ঠিকরে এসে পড়ে, ঠিক সেইখানে
একটি বটের
গাছ বনসাই হয়ে শেকড় ছড়াচ্ছে।
আপনার
চুলের মতো সেই শেকড়
কেবলই
বাড়ছে।
ওপরে উঠতে
উঠতে চড়ুইয়ের কোলাহল আপনাকে অস্থির করে তুলছে।
কিন্তু
কিছুতেই দ্রত ব্যস্ততার সেই আপনি সামনে এগোতে পারছেন না।
কলাভবনে
এতো যে হল্লা, আপনি তার কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না।
ক্লাসে
ধ্বনিবিজ্ঞানকে আর দশটা বিজ্ঞানের বিষয়ের মতোই মনে হচ্ছে।
যেতে পারছেন
না কবিতা পাঠের আসরেও।
একটু দূরে
যে শব্দমালা চর্যাপদ আর পদাবলী পেরিয়ে
মঙ্গল-রবীন্দ্রনাথ
ছাড়িয়ে জীবনানন্দের শোবার ঘরে ঢুকে পড়লো
আপনি তার
কিছুটা শুনতে পাচ্ছেন, কিন্তু অনুধাবন করতে পারছেন না।
মনে হচ্ছে
আপনি ঘামছেন, কিন্তু হাতের কাছে রুমাল পাচ্ছেন না।
আপনার
খুব পিপাসা পেয়েছে, অথচ হাতের কাছে
একটুও
জল নেই, ওষুধের মতো বিস্বাদ ছাদ।
পদ্মপুকুরে
গোল পাতার ওপর একটা পেরিয়ে আরেকটায়
উড়ে যাচ্ছে
জলফড়িং, সত্যজিৎ কী সুন্দর করেই না
ক্যামেরায়
এঁকেছেন ছবির কবিতা!
দৃশ্যকল্প
ঝাপসা মনে পড়লেও তার পাঠোদ্ধার করতে পারছেন না।
রাস্তায়
হুডখোলা রিকশাটি যেন কিছুতেই এগোতে পারছে না।
যতো জট
যেন আপনার সামনেই।
যেন দোকানের
সব ঘড়িতে এক সঙ্গে একই সময়ে অ্যালার্ম দেয়া।
শব্দে
ধ্বস্ত আপনি কেবলই হাসফাঁস করছেন।
আজ এখানে
আইসক্রিমওয়ালাও আসেনি, অথচ আপনার পিপাসা
তীব্র
থেকে তীব্রতর হচ্ছে, আপনি ঘেমে নেয়ে উঠছেন।
একজন বাদাম
বিক্রেতা বাদাম-বাদাম বলে চিৎকার করছে।
একটি কাক
তারস্বরে ডেকে ফিরছে, একটি সারমেয়ও আজ এলো কোথা থেকে!
ডেকে ফিরছে
সেও।
আপনি বাদামের
খোঁসা ছাড়িয়ে একটু নুন মিশিয়ে
তুলে দিতে
চাচ্ছেন আমার হাতে।
কিন্তু
আমি নিচ্ছি না।
আপনি ঘামছেন,
কেবলই ঘামছেন।
আপনার
চিবুকে নুন, ঠোঁটে নুন, জামায় নুন, নুন হাতের তালুতেও।
আর আমার
সামনে দুরন্ত দেশলাই।
আমি ঘাসের
জাজিমে ধরিয়েছি আগুন, পুড়ছে আপনার শরীরের নুন।
উড়ছে ছাই,
আপনাকে আজ তুমি না বলে আপনি বলতেই
সাচ্ছন্দ
বোধ করছি।
সীমান্তে
কাঁটাতারের ওপর পাখির মতো আপনি একলা দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
দেখছি
আপনাকে।
আলো-অন্ধকারের
চিঠি
প্ল্যানচেট-চৌকাঠে
দাঁড়িয়ে যেই তুমি একটু রোদ্দুর
আলো একটুখানি,
যেই তুমি টুকরো মেঘ, হাওয়া
যেই তুমি
তাকালেই পুড়তে উদ্যত আমার উদ্যান
হতোদ্যমও
খানিকটা, সেই তুমি এসো না কাছে।
আছি অন্ধকারে,
তবু জেনো আছি নেপোলিয়ন-হৃদয়
সম্রাজ্ঞী
জেসোফিন, ‘নিও তুমি আমার এক লক্ষ চুম্বন
দিও না
একটিও, পাছে আমার রক্তে আগুন ধরে যায়।’
প্রিয়তম
আলো, শুধু এটুকুই তোমাকে বলার আছে।
হোক
বৃষ্টি
ব্যালকনিটি
সিঁড়ির মতো উঠে পড়েছে ওপরে। চিলেকোঠার ছাদ পেরুলেই আকাশ।
বাতাসে
ভাসছে তোমার চোখের পাতার মতো বিষণ্নতা। কাঁদুক মেঘ অভিমানে।
হোক বৃষ্টি।
সলতের
মতো নিভতে নিভতে জ্বলে ওঠা আলোর মতো উড়ুক প্রজাপতি দল।
আসুক একটু
আলো, একটু অন্ধকার। ছাতার নিচে খেলা করুক এস্রাজের ইমেজ।
হোক বৃষ্টি।
‘আসছি’
বলে তুমি হচ্ছো নিরুদ্দেশ। গাছ থেকে ঝরে পড়ছে তৃষ্ণার্ত পাখির পালক।
নিরেট
নির্জনে খসে পড়ছে তোমার খোঁপা। রোপা ধানের সবুজে জল-বাতাসের ঢেউ।
হোক বৃষ্টি।
মেঘের
ময়ূর আজ সকাল-সকালই গাইছে গান। আর নেচেই চলেছে উদ্যানজুড়ে।
সপ্রাণ
উড়ছে তোমার উদাসী চুল। বাউলিয়ানা মন তোমার শুধু চাইছে আমাকেই।
হোক বৃষ্টি।
আজ পহেলা
আষাঢ়। আজ বইয়ের ভাঁজে রাখা শুকনো পাতা ফেলে দেয়ার দিন।
প্রিয়
বই নতুন করে পড়বার দিন। হোক বৃষ্টি। আজ ঝড়ের সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি হোক।
হোক বৃষ্টি।