বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৯

পুষ্পিতা চট্টোপাধ্যায়



পুষ্পিতা চট্টোপাধ্যায়

একলা পৃথিবী

সব কেমন যেন
ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে
সারাদিন মুসমুসিয়ে বৃষ্টি!

সন্ধ্যার পর থেকেই
বিরহী কোকিল
অলক্ষ্যে এঁকে চলেছে 
 __  মনখারাপ আর মিলনসুরের খণ্ডচিত্র।
শ্রাবণ সন্ধ্যায় একি বসন্তের বেহায়া বার্তা?
ভাবতে গিয়ে আমিও
কেমন ঢিলে হয়ে যাচ্ছি
মন উচাটন, ভীষণরকম
আলগা হচ্ছে রাশ!
ভয় ভয় নিঃসঙ্গ বাতাসে
হারিয়ে যাবার চরম সংকেত !
আলগা হাতের মুঠিও আজ
বিভ্রান্ত হয়ে জড়িয়ে ধরতে চায় শক্ত অবলম্বন
তারপর আবার হেঁটে চলা
একলা পৃথিবী
রাতের কোলাহলে আজ কোনো তারা নেই
শুধুই নিঃসঙ্গতা ফিসফিস
বাদল ঝরে পড়ছে অবিরত।






পরাগবন্ধন

"ভালবাসা ফুরিয়ে গেছে" বলে
তুমি যে অহেতুক গণ্ডগোল বাঁধাও আজকাল!
তাতে আমি দিন দিন আরো চঞ্চলা হয়ে পড়ছি
তা কি তুমি জানো?
আমার শক্ত হাতে
হালের বৈঠা পিছলে যাচ্ছে
ঢেউএর দোলায়
আমার পবিত্রধাম জুড়ে
কেমন যেন মড়কের নোটিস টাঙিয়ে রেখেছ !
ভালবাসার অভাবে
মরুভূমির মতো জলশূন্য এই বুক !
আমিও যে হাহাকার করি হে প্রিয়
 ...দাও না একঝারি জল!
এখনো তোমার হাতময় ফুলের রেণুর দাগ!
রোদ্দুরের গুঁড়োয় এখনো বসন্তের আহ্বান!
তবুও তুমি পালিয়ে বেড়াও
তুচ্ছ করো জাগতিক বন্ধন
একবার দ্যাখোই না শেষমেষ...
হয়তো ফুটবে অগোচরে
হাসনুহানা অথবা কামিনীর পরাগবন্ধন !






দীর্ঘ উপবাসের পর•••

দীর্ঘ উপবাসের পর
যে প্রথম জল দেবে কুসুম দুপুরে
মেঘ হয়ে ঢেকে দেবে চাঁদের শরীর
তার নাম কি দেওয়া যায় ভাবতে ভাবতে
ফিরে দেখা মৌতাতে বুঁদ হয়ে যায় পুষ্পপল্লব
বিন্দু বিন্দু তপ্ত ঘামে ভিজে যায়
জমি-ঘাসপাতা আর মেধাবী সময়
মায়াকানন জুড়ে মাধবীলতা ফোটে
ঝিলমিল লজ্জায় নত হয় ক্ষরাক্লান্ত শহর
বিন্দু বিন্দু জ্যোৎস্না জাগে নির্মল কপালে
চুম্বনে আদর মাখা গোপন সুখে
উপোসী ঈশ্বরীও নিবিড় হলে
হয়ে ওঠে রমণীয়••• রমণীর মত!






আলোময়

ঠোঁটে এত কথা আসে আলোময়
তোমার আমার প্রেম ঘন হয়
আড়ালের খাঁজে
ছুঁয়ে দিলে ভালবাসা থিরথির
কেঁপে ওঠে হয় স্থির
নদী আর অরণ্য মাঝে
ঘুম নেই তারা জাগে অনন্তকাল
আমি প্রেমের কাঙাল হতে পারি
পথ হাঁটি ধীর পায়ে ঝমঝম,
দেহি পদপল্লবমুদারম, এইপথে হব শুকসারি
মুঠো মুঠো ঘুম শুধু পায়চারি,
অন্তরা সঞ্চারী, গানেই ঋণের বোঝা শোধ
একা পথ হাঁটা নাক বরাবর,
ঝরা পালকের সাথে চরাচর
মিশে যায় অপরাধবোধ ।