শাশ্বতী গোস্বামী
বাঁচার মতোই বাঁচ
অতীত কালের ভাবনা উদাসীন
মনের মধ্যে হালকা আবছা আলো
দেশে যখন অনন্ত উৎসব
পথশিশুর বুভুক্ষু মুখ কালো।
সন্ধ্যে নামে হৃদয় আকাশ জুড়ে
"আমার আমির" দিন হয় না পার
হাজার গন্ডী,লক্ষ শিকল পায়,
স্তব্ধ অতল মেয়ের
পারাবার!
হাজার একটা নিয়ম নীতি মানা
সব কিছুতেই শৃংখল যার পায়,
ইচ্ছে মতন ভাঙবো গড়ব যাকে
তার ই কেবল সমাজ গড়ার দায়?
সমাজ কেবল বন্ধ চোখের পাতায়
মনের খুশি সাজায় অন্ধকারে
মেয়ে হওয়ার দায় মেটানো মেয়েই
জ্যান্ত পোড়ে তীব্র হাহাকারে!
পথবালিকার উদাস অবাক চোখ,
দিনের আলো স্বস্তি কোথায় আনে?
সখ্যতা তার কুকুর বেড়াল সাথে
খাবার খোঁজা ডাস্টবিনে
ডাষ্টবিনে!
রাত্রি নামে পথবালিকার
দেশে
ক্লান্ত অবসন্ন দুচোখ চেয়ে,
আতঙ্কিত নির্ঘুম সে
রাতে
খাবার হলো খাবার খোঁজা মেয়ে!
শিকল বাঁধা সমাজ
এখন লড়ে
মাতাল কিছু পশুর বাঁচার তরে,
ও মেয়ে তুই বিচার খুঁজিস কোথায়?
এই দেশেতে মানুষ কি বাস করে?
"মান " গিয়েছে "হুশ "ও বেপাত্তা!
গর্ব করার আছে নাকি কিছু?
রাত নামলেই হিংস্র,নখর পশুর
সবেগ ধাওয়া পথবালিকার পিছু।
বোকার মতো পালাস নে তুই আর!
একবার ঠিক ঘুরে দাঁড়া ওরে!
নখ দাঁত কে কাজে লাগা এবার
নতুন সূর্য তবেই দেখবো ভোরে।
অশ্রু মুছে আগুন জ্বেলে চোখে
দাঁড়াবি তুই নখর পশুর মুখে
হাসবে দেখিস সবার দুনিয়া -
চোখ ছলছল আনন্দেরই সুখে।
"দুর্ভাগা "দেশ,অকর্মণ্য আমি,
স্বপ্ন চেনাস সুখের ই সংবাদে,
সব কিছু কে তুচ্ছ করেই বাঁচিস
"বাঁচার মত বাঁচার " তাগিদে ই ॥
অপ্রাপ্তি
অস্তরাগের লালিমা মাখানো , মনখারাপের স্মৃতি,
দিনমাস আর বছর পেরিয়ে শূন্যতা নিয়ে বাঁচি ॥
তবু কেটে গেছে বছর বাইশ তেইশ,
স্বপ্ন দেখার ছল খুঁজে নিয়ে পেরিয়েছি তেততিরিশ।
শেষ দেখাটাও বন্ধনহীন , চোখের অক্টোপাসে,
হেমন্তদিন ছবিও আঁকে না হৃদয়ের ক্যানভাসে।
গোলাকার পৃথিবীতে, শুধু
এই প্রত্যশা রাখি,
যদি কোনোদিন, হঠাৎ ই কখনো দেখা হয় মুখোমুখি!
তুমি কি বলবে? আমিই বা কি?
নাকি, বিষ্ময়ে চোখাচোখি রবে অতৃপ্ত দুই আঁখি।
সেদিন চৈত্রদিনে,
তুমি ছিলে মন জুড়ে,
মনের যা কথা, মনেই ছিলো তা, ফেলিনি অযথা খুঁড়ে।
কবি সুকান্ত, নজরুল আর
চির পরিচিত রবি,
মনের গহ্বরে সৃজনে ব্যাপৃত দুঃখের ছায়াছবি ॥
এটাই হয়তো রৌদ্র দিনের ছায়াঘন সীমানায়,
লিখে রেখে গেছে পড়ন্ত মন বিদূরিত সন্ধ্যায়।
বহুযুগ আগে সেই যে কবের মনখারাপের ছুতোয়,
আজও বুনে চলি নক্সীকাঁথা প্রাক্তনী সেই সুতোয়।
এখনো হারানো, হৃদয় ভরানো একতরফের স্মৃতি
ভাঙ্গা কার্নিস একঘেয়ে
চেয়ে সেই জীবনের প্রতি।
বেড়ে গেছে বেলা রৌদ্র প্রখর,সীমান্ত লালে লাল,
ছেড়ে যাওয়া নায়,
নাব্য গরিমা দিগন্তে নাজেহাল ॥
চৈত্রের দিনে ভরে শিহরনে সাজানো স্মৃতি বারতা
আবার কখনো যদি ফিরে আসি, পেতে ধরো পূর্ণতা!
তখনো কি সেই ছাতিম গন্ধে শূন্যতা ধরা দেবে?
তখনো কি সেই বেড়ে ওঠা ঘাসে শিশির বিন্দু রবে?
আমার জমানো গোপন সুরভি সৌরভে সৌরভে,
তোমায় ছুঁয়ে কি কখনো যাবে না প্রত্যয়ী গৌরবে??
এখনো আমার অস্ফুট হিয়া, সংগোপনের মাঝে,
তোমার না বলা কথার মালায় অলক্তরাগে সাজে ॥
সমস্ত পথ মিশে যায় শেষে অনুভূতিহীন হিমে,
চাওয়া না চাওয়ার গণ্ডি পেরিয়ে পাওয়া হয় টিমটিমে।
তুমিও কেমন পেরিয়ে
গিয়েছো, ছাড়িয়েছো শূন্যতা,
মনেও রাখোনি ভরাট বুননে, হারানো সে রূপকথা।
এক জীবনের নস্টালজিয়া গোধূলির স্তরে স্তরে
কখনো সখনো খুঁজে ফেরা তটে প্রতিহত থরে থরে,
বেলা হলো দেখি, সময় এসেছে দায়ভার নামাবার
শেষবেলা যদি এনে দেয় দোঁহে কাছাকাছি একবার!
ফিরে যেতে চাই স্বপ্নের কাছে রোদ্দুর ধূলো পায়
অর্বাচীনের গ্রন্থি সাজুক চূড়ান্ত মহিমায়!
লাজুক আনত, আঁকিবুঁকি রেখা বালুচর চলে বয়ে
মৃত যামিনীর কুলভাঙ্গা নদী পাড় গড়ে প্রত্যয়ে॥
জেরুজালেমের জনপদ বাড়ে
হিমালয় ঘেরা হিমে,
হারানো স্মৃতিরা রোপওয়ে বেয়ে রোটাং পাসের জ্যামে।
আমি ভেসে গেছি অক্টোবরের হাড়হিম গ্লেসিয়ারে
সুখ স্বপ্নের পৃথিবীটা আজ দুরমুশ, একাকারে ॥
দুঃস্বপ্নের ভাঙ্গা কার্নিসে লতানো লতার সারি
হেসে বলে ওঠে "তোমার স্বপ্ন আমি ও তো ছুঁতে পারি
"?
দিগন্ত জাগে ডুবে যাওয়া তটে বালুচর গোনে ঢেউ,
ছেড়ে আসি যেটা, নাপাওয়ার ভিড়ে, ফিরে তো পাই না কেউ!!!
বর্ষামঙ্গল
ভাবনা সেদিন, মেঘের রাজ্যে আড্ডা মারি,
চোখ ছলছল সেই ইতিহাস
কবে যেন
নদীর বুকে ঘর বেঁধেছে
চাতক হয়ে।
ও শ্রাবন তুমি নাইতে এসো আরেকটাদিন
কাঁসাই পাড়ের বন্যাসমেত।
তোমার প্রেমে ঝরঝরিয়ে মন মেটাতে
আবার এসো এই শহরে চেনা সুরে,
প্রান্তজুড়ে আগের মতো আবার এসো।
সে ..ই ফল্গুধারার সময় স্রোতে পড়ন্ত মন
ক্লান্তি যখন ডাক দিয়ে যায় হরেক সুরে?
মন কেমনের গন্ডী জুড়ে বিশ্ব তখন থমকে
থাকে অনেক দূরের স্থির দ্রাঘিমায়।
শ্রাবনী মেঘ আসলে যেমন ময়ূর শুধু
পেখম মেলে ইচ্ছেধারায়
বৃষ্টি ছুঁতে!
মনের যত ইচ্ছেগুলো
কোমর জলে কিলবিলিয়ে
দুরন্ত ঢেউ আছড়ে
মারে অনেক দূরে।
মেঘ জমেছে মনের পরে,
বর্ষা জুড়ে সৃষ্টি ছুঁয়ে উড়ন্ত ঢেউ আকাশ গাঙ্গে।
মেঘ বৃষ্টির প্রেমের ভাষায় গল্প আলাপ
দূরের বনে হাওয়ায় ভাসে,
রূপকথাদের অলীক দেশে।
মেঘবন্যায় সাঁতার কেটে ভালোবাসা
আবার যেন নাইতে নামে
জল কেলীতে।
হৃদয় ভাসুক হীরের দেশে, মন হারিয়ে ভালোবেসে,
জন্মান্তরের ছোট্টো দেশে জন্ম নিয়ে -
হারিয়ে যাবো, নতুন কোথাও অন্য নামে, অন্য বেসে।