সম্পাদকীয়
মার্চ মাস। উনিশ একাত্তর সাল। বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় পঁচিশে
মার্চ। কালরাত্রি নামে বাংলাদেশের আকশে।
শুরু হয় অপারেশান সার্চলাইট। সেই লাইটের আলোতে বাঙ্গালী যুদ্ধ করে নয়মাস ধরে। লক্ষ
লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়।আর লক্ষ লাক্ষ নারী হারায় মান ইজ্জত ও প্রাণ। বাংগালী অর্জন করে স্বাধীনতা। এইরকম যুদ্ধ কেবল
মাত্র বাংলাদেশেই ঘটেনি। আনুমানিক পৃথিবীর প্রায় চৌষট্টি (?) টি দেশ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে বলে জানা যায়। এইসব
যুদ্ধে কত কোটি কোটি লোকের প্রাণহানি ঘটেছে তার হিসাব পাওয়া ভার। এই পৃথিবীতে কত হাজার
নারী যুদ্ধ করেছে আর প্রাণ দিয়েছে তার ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য, সামাজিক
স্বাধীনতার জন্য, অর্থনৈতিক
স্বাধীনতার জন্য,তার
ইয়ত্তা নেই, হিসাব
তো দূরের কথা। স্বাধীনতা জন্মগত অধিকার
হলেও এর জন্য যুদ্ধ এক অতি আবশ্যকীয় প্রক্রিয়া। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের
উত্তর বড় জটিল। এতে আধ্যাত্মিক থেকে মানবিক,
সামাজিক অনেক কিছু বিষয়ই জড়িত রয়েছে। মানুষের সৃষ্ট নিয়মে মানুষ নিজেই নিজের
পায়ে শৃংখল পরায়। আবার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে। মানুষের দেহের ভেতরে হরমোন যেমন
অনবরত যুদ্ধ করে,মানুষের
মন মানসিকতা , আচার
আচরণ ইত্যাদিকে দায়ী করে,
পরিচালিত করে , তেমনি মানুষ সৃষ্ট নিয়ম নীতি, ক্ষমতা,
লোভ, সীমানা
, সার্বভৌম
রাষ্ট্রের প্রতি দুর্বলতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার মত এক প্রবঞ্চক ইস্যুর শিকার হচ্ছে
মানুষ ক্রমাগত। এই স্বাধীনতার উর্বর চিন্তা থেকেই মানুষ অথবা নারীগণ জেগে উঠেছিল
তাদের প্রবল দাবী নিয়ে অতীতের কোন একসময়ে। আজ দুহাজার উনিশ সালের বিশ্ব নারী
দিবসের দাবী, ব্যালান্স
ফর বেটার (Balance for Better)।পক্ষপাতিত্বের
বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ হতে বলছে। এই পৃথিবীকে জ্যান্ডার-ব্যালান্সড ওয়ার্ল্ড হিসাবে
দেখতে স্বপ্ন দেখতে বলছে। নিরন্তর এই লড়াই শুরু হয়েছে । প্রতিটি মানুষের এতে
অংশগ্রহনের সুযোগ থাকা দরকার ও ভুমিকা পালন করা কর্তব্য। সব সময়। সারা বিশ্বজুড়ে।
দাবী করা হচ্ছে , নারীরা
একটি যুদ্ধভূমি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে উজ্জ্বল আগামীর পথে –আর তা হচ্ছে
ব্যালান্স,সাম্যতা।
এই বিশ্বনারী দিবসের শপথ বা থিমগুলো শুধু একদিনের জন্য নয়, এগুলো এদিন
শুরু হয় সারা বছর ধরে এই থীমের ভিত্তিতে কাজ করে, প্রচার করে পরবর্তী বছরে আরো নতুন পথে এগিয়ে যাবার সোপান
তৈরী করে। এই ব্যালান্স কোন নারী বিষয়ক ইস্যু নয়। এটা মুলত একটি ব্যবসায়িক বিষয়।
এই রেসটা ব্যবসায়ীদের বোর্ড্রুম থেকে শুরু
করে সরকারী পর্যায়ে,মিডিয়া
পর্যায়ে, মাঠ
কর্মী থেকে শুরু করে করপোরেট এমপ্লয়ীদের ক্ষেত্রে, হেলথ এন্ড ওয়েল্থের ক্ষেত্রে, স্পোর্টস থেকে শুরু করে অর্থনীতি ও কমুনিকেশান প্রতিটি
ক্ষেত্রেই ব্যালান্স দরকার ।অতি আবশ্যক। এর ভেতর কোন রকম মুদ্রা দোষ থাকার সুযোগ
নেই । নারীর মেনোপজ হয়,কিন্তু
সিস্টেমের মেনোপজ বা মাসিক ঋতুস্রাব হয় না,
তাই সিস্টেমের মুড সুইং হবার সুযোগ নেই।
এগারশ পঁচাশী সালে প্রথম যে দেশ মুক্তিযুদ্ধ করে তা হলো
বুলগেরিয়া, আর
বিশ্ব নারীদিবসের প্রথম সূচনা হয় উনিশ এগার সালে। প্রথম কবিতা রচনা শুরু হয় এপিক্স
অফ গিল্গামেস, সুমেরিয়ান
পোয়েম সিরিজ, ২১০০
বিসিতে ।কিন্তু সম্পুর্ণ কবিতা লেখা হয় ১২ খ্রিশটাব্দে ব্যবিলনে। তেমনি কবিতা উৎসব
শুরু আজ থেকে চার বছর আগে একুশে ফেব্রুয়ারী। একেকটি যুদ্ধের অবতারণা হতেই চলে যায় কয়েকশ বছর। তবুও
মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করলে তার মর্যাদা বোঝেনা , মর্যাদা রাখতে পারেনা। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন
হয়েছে উনিশ একাত্তর সালে। কিন্তু আজো মুক্তি লাভ করেনি। স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন
করতে পারেনি। এমনিভাবে বিশ্ব নারী দিবস উনিশ এগার সালে শুরু হলেও নারীর প্রকৃত স্বাধীনতার যে ব্যাপ্তি তা অর্জন করতে
জানিনা আরো কত শত বছর লাগবে। একশ আট বছরে এই অগ্রগতি অতি সামান্য। আনুমানিক এক
থেকে পাঁচ পার্সেন্ট। বর্তমান ট্যাকনো যুগে এই গতি বাড়লেও নারী যেখানে থাকা উচিৎ
সেই উচ্চতায় উঠতে আরো কয়েক শত বছর লেগে যাবে যদিনা নারী এই ডট কমের বৈজ্ঞানিক যুগে
তার শারীরিক অবরোধকে অতিক্রম করে মুল মঞ্চে পা
রাখে। নারীর শরীর এক দুর্বল মালভূমি। আজকের এই একবিংশ শতকে নারী চাইলেই
তাকে উপেক্ষা করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। নারী চাইলে সন্তান উতপাদন বন্ধ করতে
পারে, নারী
চাইলে তার স্তন নিয়ে বিব্রতবোধ না করতে পারে,
নারী চাইলে সেক্স রোবট ব্যবহার করে পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থাকে সমুলে উল্টে
দিতে পারে। নারীর যে এই ক্ষমতা আছে,
তা নারীকে আগে বিশ্বাস করতে হবে ।
বিশ্ব নারীদিবস কোন দেশ নয়, দল নয়,
নয় কোন একক বা বিশেষ সংগঠন। Gloria Steinem, world-renowned
feminist, journalist and activist once explained "The story of women's
struggle for equality belongs to no single feminist nor to any one organisation
but to the collective efforts of all who care about human rights."
তাই প্রত্যকের উচিৎ এই শ্লোগানটিকে প্রচার করা, পাশের জনকে
মোটিভেটা করা এবং ব্যালান্সের জন্য পোজ দিয়ে ছবি তুলে শেয়ার করা। সামাজিক মাধ্যমে
ভাইরাল করা। এটি একটি নতুন ক্রেজ । এই ক্রেজে রসুবিধা নিয়ে পৃথিবীর প্রত্যন্ত
অঞ্চলের লোকের কাছে এই আলোর ধারা পৌছে দেয়া । এমপ্লিফাই করা দরকার, একশানে যাওয়া
দরকার, প্ল্যান
করা, পোস্টার
করা, ইভেন্ট
করা, কার্ড
করা, প্রতিযোগীতা
করা, নিউজ
করা, ভিডিও
করা, গান
লেখা কবিতা লেখা , নাটক
লেখা , গান
গাওয়া, কবিতা
আবৃত্তি করা ,নাটক
মঞ্চস্থ করা, মুভি
করা ,ইমেজ
করে প্রদর্শনি করা, চিত্রাংকন
করা, গ্যালারিতে
আর্ট এক্সিভিশান করা ,
প্রবন্ধ লেখা, গল্প
লেখা , ডিস্প্লে
করা ও বক্তব্য দেয়া।
কবিতার কথাই যখন আসলো তখন বলি কবিতার স্বাধীনতা কত টুকু? কবি কি কবিতা
লিখতে গিয়ে তার চিন্তার স্বাধীনতা হারায়?
এক কথায় উত্তর দেয়া যায় না,
তবুও দৃঢ় চিত্তে বলতে পারি ,
না। কবির চিন্তার ব্যাপক স্বাধীনতা কবি একমাত্র কবিতাতেই দেখাতে পারে। কাব্যিক
চিন্তার লাইসেন্স বলতে বোঝায় কবির যথেষ্ট স্বাধীনতা ও ক্ষমতা থাকে তার ছোট্ট ও
নিজস্ব ভুবন গড়ে তোলার। কাব্যিক স্বাধীনতার সাথে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বা কাব্যের
কোন সূত্র নেই । এটা কেবলই স্বাধীনতার একটি ইলুশান। মায়ার ঐন্দ্রজাল। কবিতার এই
স্বাধীনতা থাকলেও কবিতা উৎসব পত্রিকাকে যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হচ্ছে গত চার বছর
ধরে। অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে কয়েকজন সাহিত্য নিবেদিত বন্ধুর সহায়তায় আমাদের প্রচেষ্টায়
এগিয়ে চলেছো কবিতা উৎসব। পাটাতন বা ভিত শক্তপোক্তভাবে না হলেও এর কাঠামো দাঁড়িয়ে
যাবার পর আমরা এগিয়ে আসি,
নতুন উদ্যমে কবিতাউতসব কে সামনে এগিয়ে নিতে ও স্বাধীনতার বিজয়ী মঞ্চে তার
পতাকা উত্তোলন করে অর্থনৈতিক,
সামাজিক ও সার্বিকভাবে এক মহা উত্তোরণের দিকে নিয়ে যেতে। কবিতা উৎসবের জয় হোক।
মুল্য দিয়ে কিনতে হয় স্বাধীনতা। মুল্য দিয়েই কবিতাউৎসব অর্জন করবে তার বিশ্বব্যাপি
খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠিতি। আশা রাখি ।
মৌ
মধুবন্তী