বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৯

সুবীর ঘোষ


সুবীর ঘোষ

ব্যথার কথা

কাল শনিবার । শনিবার এলেই আমার মনে পড়ে

গম ভাঙানোর কথা । সপ্তাহে একদিন কুয়োর ভেতর জল ঢালা ।

আমাদের চোখ হাত থাকার কথা নয় এতদিন

তবু সব বাতাস সহ্য করে তারা আছে

বেল্টের শেষ ঘরে পৌঁছে গিয়েছে কোমর

এখন প্রলোভন ছড়ায় শুধু রাজমাতা --অন্তঃপুরে টেনে নিয়ে যায়

আমার গোপন সব কথা দোহন করে বের করে নেয়

খিড়কিদুয়োর দেখিয়ে দেবার আগে বলে --

দুর্বাঘাস খেয়ে নিও

ব্যথা চলে যাবে । এ সব ব্যথার কথা

বলা যায় না কারো কাছে  -- কবিতাতেও লেখা যায় না

শুধু একটা একলা পাশবালিশ কেঁদে কেটে বিছানা ভেজায় ।







পুরাণপ্রতিমা

ভুল করে কেউ ডাকে , শব্দ হয় পাতার আড়ালে

নড়ে চড়ে বসি

চরাচর আবদ্ধ ঘন বাঁধনের বশে

পথনির্দেশ দিতে জেগে নেই পথের ফলক ।

মায়াবী হরিণ আসে পথ খুঁজে

নিরুপায় চোখের আশ্বাসে

সান্ত্বনার শান্ত কোনো না-উচ্ছ্বাস নেই

হরদম আমোদের বসন্ত জেগেছে ।

মধুময় ঘটনা ও বাণী মহরৎ

জেগে থাকা বয়োবৃদ্ধ গণিতের খাঁজে

আটকে যায় ; ঘনরাত্রি বশেও আসে না ।



মোহময় বাণী তার  মোহময়  গান

সুর ছিল স্বর ছিল পাঁচিলের ঘেরে

স্বাদু ছিল বিনোদন লুপ্তপ্রায় শরীরকাহিনি

বৈশাখে নদীর জলে পুরাণপ্রতিমা ।







গৃহদস্যু

পাতাল-ফোঁড়া খিদেটা ছিল,

এখন নেই ।

কখন যেন থেমেছে বাতাস

সহবতে নেমেছে ন্যাড়া অন্ধকার ।

সবার কাছেই আছে চারণভূমি

প্রবেশপথে  নিষেধ

তাই উৎসবে রঙ কালো ।

দিয়েছো ঢেলে , দিয়েছো আলো ,

দিয়েছো দিতে ,

তোমার কাছে বারণ ছিল,গৃহদস্যুর লুঠ ;

তবুও তোমার বাগানঘরে লতাতে লাল ফুল

সিঁধ কেটেছে ঘোর সুযোগে তবুও দেয়াল উষ্ণ অটুট
পাতাল-ফোঁড়া খিদেটা ছিল,

এখনও আছে ,

অমাবস্যায় বোঝা যায় না ভালো ।








মায়াবন্দর


আমাদের কোনো বাড়ি ছিল না কোনোদিন

কেবল একটা দাঁড়াবার জায়গাকে বাড়ি বলে মনে হত ।

তার কাছেই না কী ছিল এক মায়াবন্দর

যেখানে আমাদের একান্নবোঝাই জাহাজ আসার কথা ছিল ।

সে জাহাজ কোনোদিন আসে নি

আমাদের চিত্রনাট্যের কোনো সংস্করণও আর মুদ্রণে যায় নি ।

রক্তাল্পতায় ভোগা ছেলেবেলা

ভাঙাচোরা দমদেওয়া পুতুল হয়ে

এর ওর পায়ে পায়ে এ কোণ ও কোণ করে  ছুটে মরেছে ।

আমাদের দুঃখপদাবলি শোনাতে বলে

লোকজন সব উঠে চলে যায় ।

মুখের রঙচঙ গলে স্বেদবিন্দুর উষ্ণতায় গিয়ে মেশে ।

সমস্ত কথা বলার ইচ্ছেটাই চলে গেলে

মস্ত বড়ো এক কালো ক্যানভাসের নীচে

দু চোখ ভরে অন্ধকার দেখি ।  অন্ধকার ডাকি ।







রাক্ষসের স্বাক্ষর

রাক্ষসের স্বাক্ষর নিতে গিয়ে

পৌছে গেছি পূতিবন্দরে ;

নদী তরঙ্গের আয়না ভেঙ্গে ভেঙ্গে

পুলটিস বানাচ্ছে ।

নদী কারোর কথা শোনে না--

পাথর বা পাষন্ড

কেউই মুখ তুলে কথা বলতে পারে না ।

রাক্ষস একমাত্র সেখানেই সভা ডাকে ।

দুর্বত্ত কুঠার দেগে দেবার আগেই

পাখিরা ভেসে যায় ।

গামছাবোনা রং নিয়ে বিকেল আসে ।

মানুষজনের  চিৎকারে

এদিকের ঘরবাড়ি বন্দরের ওপারে চলে যায় ।