সুবীর
ঘোষ
ব্যথার কথা
কাল শনিবার । শনিবার এলেই আমার
মনে পড়ে
গম ভাঙানোর কথা । সপ্তাহে একদিন
কুয়োর ভেতর জল ঢালা ।
আমাদের চোখ হাত থাকার কথা নয়
এতদিন
তবু সব বাতাস সহ্য করে তারা আছে
বেল্টের শেষ ঘরে পৌঁছে গিয়েছে
কোমর
এখন প্রলোভন ছড়ায় শুধু রাজমাতা
--–অন্তঃপুরে
টেনে নিয়ে যায়
আমার গোপন সব কথা দোহন করে বের
করে নেয়
খিড়কিদুয়োর দেখিয়ে দেবার আগে বলে
--–
দুর্বাঘাস খেয়ে নিও
ব্যথা চলে যাবে । এ সব ব্যথার
কথা
বলা যায় না কারো কাছে -- কবিতাতেও লেখা যায় না
শুধু একটা একলা পাশবালিশ কেঁদে
কেটে বিছানা ভেজায় ।
পুরাণপ্রতিমা
ভুল করে কেউ ডাকে , শব্দ হয়
পাতার আড়ালে
নড়ে চড়ে বসি
চরাচর আবদ্ধ ঘন বাঁধনের বশে
পথনির্দেশ দিতে জেগে নেই পথের
ফলক ।
মায়াবী হরিণ আসে পথ খুঁজে
নিরুপায় চোখের আশ্বাসে
সান্ত্বনার শান্ত কোনো
না-উচ্ছ্বাস নেই
হরদম আমোদের বসন্ত জেগেছে ।
মধুময় ঘটনা ও বাণী মহরৎ
জেগে থাকা বয়োবৃদ্ধ গণিতের খাঁজে
আটকে যায় ; ঘনরাত্রি
বশেও আসে না ।
মোহময় বাণী তার মোহময়
গান
সুর ছিল স্বর ছিল পাঁচিলের ঘেরে
স্বাদু ছিল বিনোদন লুপ্তপ্রায়
শরীরকাহিনি
বৈশাখে নদীর জলে পুরাণপ্রতিমা ।
গৃহদস্যু
পাতাল-ফোঁড়া খিদেটা ছিল,
এখন নেই ।
কখন যেন থেমেছে বাতাস
সহবতে নেমেছে ন্যাড়া অন্ধকার ।
সবার কাছেই আছে চারণভূমি
প্রবেশপথে নিষেধ
তাই উৎসবে রঙ কালো ।
দিয়েছো ঢেলে , দিয়েছো আলো ,
দিয়েছো দিতে ,
তোমার কাছে বারণ ছিল,গৃহদস্যুর
লুঠ ;
তবুও তোমার বাগানঘরে লতাতে লাল
ফুল
সিঁধ কেটেছে ঘোর সুযোগে তবুও
দেয়াল উষ্ণ অটুট
পাতাল-ফোঁড়া খিদেটা ছিল,
এখনও আছে ,
অমাবস্যায় বোঝা যায় না ভালো ।
মায়াবন্দর
আমাদের কোনো বাড়ি ছিল না কোনোদিন
কেবল একটা দাঁড়াবার জায়গাকে বাড়ি
বলে মনে হত ।
তার কাছেই না কী ছিল এক
মায়াবন্দর
যেখানে আমাদের একান্নবোঝাই জাহাজ
আসার কথা ছিল ।
সে জাহাজ কোনোদিন আসে নি
আমাদের চিত্রনাট্যের কোনো
সংস্করণও আর মুদ্রণে যায় নি ।
রক্তাল্পতায় ভোগা ছেলেবেলা
ভাঙাচোরা দমদেওয়া পুতুল হয়ে
এর ওর পায়ে পায়ে এ কোণ ও কোণ
করে ছুটে মরেছে ।
আমাদের দুঃখপদাবলি শোনাতে বলে
লোকজন সব উঠে চলে যায় ।
মুখের রঙচঙ গলে স্বেদবিন্দুর
উষ্ণতায় গিয়ে মেশে ।
সমস্ত কথা বলার ইচ্ছেটাই চলে
গেলে
মস্ত বড়ো এক কালো ক্যানভাসের
নীচে
দু চোখ ভরে অন্ধকার দেখি । অন্ধকার ডাকি ।
রাক্ষসের স্বাক্ষর
রাক্ষসের স্বাক্ষর নিতে গিয়ে
পৌছে গেছি পূতিবন্দরে ;
নদী তরঙ্গের আয়না ভেঙ্গে ভেঙ্গে
পুলটিস বানাচ্ছে ।
নদী কারোর কথা শোনে না--
পাথর বা পাষন্ড
কেউই মুখ তুলে কথা বলতে পারে না
।
রাক্ষস একমাত্র সেখানেই সভা ডাকে
।
দুর্বত্ত কুঠার দেগে দেবার আগেই
পাখিরা ভেসে যায় ।
গামছাবোনা রং নিয়ে বিকেল আসে ।
মানুষজনের চিৎকারে
এদিকের ঘরবাড়ি বন্দরের ওপারে চলে
যায় ।