বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৯

গোপাল চন্দ্র সাহা


গোপাল চন্দ্র সাহা

হুইল চেয়ারে চতুর্থ যুগ 

এই যে বিচলন পথ
পথের মাঝে খানাখন্দ - জলজ
সেখানে গুটিয়ে আছে আকাশের অসীম সন্ধান

কেজানে,
               পথ-বিস্তৃতির কোন্ বাঁকে কে অপারজন
::
যে পৃথিবী দিনেও দীন -- নিত্যদিন
সাঁতার কাটে সৌর বলয়ের আশপাশ
                                                      গ্রহণ পরিসরে

সেখানে এঁটো হয় শকুনের চোঁচ, আলোর চক্ষু খুঁটে
                     সানুদেশে নেমে আসছে অস্তগত ভার
::
এখানে জ্বলে ওঠে জীব-শিখা মৃতের পাশে বসে !
                              মৃত্যু তন্দ্রায় তখন ভগবান ধীর

এই শিখাই খোদাই করেছে অর্বাচীন শৈল দেহ 
                                             বিফল কথার বিবরন

ওই শোন, কোথাও যেন ধ্বনিত হচ্ছে শব্দ 'প্রবাহ'
                                   শিলার বিস্তীর্ণ বিদ্যুৎশিরায়          
::
এই প্রবাহ --  বোহেমিয়ান, অবিন্যস্ত-বৈচিত্র্যময়

এই প্রবাহে ভাসমান অদীপ্ত নগরীর ধ্বংসস্তুপ
                                  সে জীবিত অথবা মৃতও নয়

এই ধ্বংসস্তুপের খাঁজে খাঁজে জমে আছে
                                                 ক্রান্তিপাতের উষ্মা

তবু নিঃশব্দে পেরিয়ে যাচ্ছে বনসাই মার্জিত চতুর্থ যুগ
      -- এটা শুধু হুইল-চেয়ারের সৌজন্য-সক্রিয়তায় ।।






শাশ্বত মন্বন্তর

আলোর উৎসবেই নাকি রয়েছে সৃষ্টির উৎস !

সেই আলোর এই অমিয় নির্মান : টুকরো টুকরো হয়ে মিশে যাচ্ছে ব্রহ্মাণ্ডের আনবিক শোকে

যে শোক ছিল সৃষ্টির বিনাশে : এখন ব্যস্তানুপাত, যুগ ধর্মের প্রস্রবণে

::

কি হবে সাধক --
ওই নক্ষত্রমণ্ডলের গৌন আলোয় আসন পেতে ?

শিথিল যতই কর তোমার স্বার্থ -- পরমার্থ কুন্ডলে
তোমার ক্রোমোজম পঞ্চভূতেরই সমন্বয়

জানইতো, সমস্ত কারনের পরম যিনি তিনি উৎসহীন

" ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ।
অনাদির্রাদির্গোবিন্দঃ সর্বকারণকারণম্।।"

- সাধক, তুমি উৎস থেকে সরে এসে খুবই মলিন !

'আলোর' স্বার্থেই জ্বালিয়েছ যে অনির্বাণ
সে' আলোক-লিপি আবদ্ধ কেন স্বার্থের মহাকাব্যে !

::

পৃষ্ঠার শেষে লিপির মৌনতায় পড়ে আছে পিন্ডের কালো তিল
সে' তিলে চক্রবর্তী নিশিকাল : শুয়ে আছেন মৃত কাপালিক -- যুগ-যন্ত্রনায় নিঃস্ব অবতার

তবে প্রবেশ কর এবার মৃত্যুর স্মৃতিতে : 
দেখে নাও পিত্তস্থলের যন্ত্রণা
দেখে নাও -- শরণার্থী-যন্ত্রণার অবয়ব, চক্ষু ছায়ার নীচে !

এবার চেয়ে বল : তোমার কোন্ প্রাপ্তি এই অনুভবে
আছে কোন বর্ণালীর গন্ধ ওই অবয়বে ?

আছে সাধক, আছে --
কঙ্কালে প্রোথিত ধ্বংসের ভাস্কর্যই তো অনিন্দ্য নিত্য !

::

অনুক্রমিক প্রপঞ্চ সরিয়ে এসো আরও গভীরে :
এখনে শুধু জ্যোৎস্নার দাউ দাউ - জাগতিক সুষুন্মাকান্ডে

এই বসন্তে, এই বাতাসের বিহ্বল-বিনয়ে  -- বিস্ফার রুদ্র তমসা

শাশ্বত হয়ে ওঠে মন্বন্তরী বীজমন্ত্র -- প্রেমকালের গোপন বাণীতে   ।।







জিরো গ্র্যাভিটি 

১...

নরকের মত শীতল বুক বিছিয়ে স্পর্শহীন বাগান : ফুটে আছে একটি অলৌকিক ফুল, পারিজাত

তবু এখানে নৈসর্গ :   সাগ্নিক-সন্ন্যাসীর বেশ
ধুয়ে গেছে সব বসন -- রাজ রক্ষিত আবেশ

নতজানু শিরস্ত্রাণ ঘুরপাক খাচ্ছে আকাশ বুকে
                          -- বেদুইন ঘোড়ার লক্ষ্যহীন খুরে

২...

যখন সংযমে দানা বাঁধে দীর্ঘশ্বাস
ভ্রান্তিতে এসে দাঁড়ায় আত্মবিশ্বাস

তখন ক্ষয়িষ্ণু হয়ে ওঠে হেরিটেজ-গ্র্যাভিটি -- পরম্পরাগত

ক্ষয়ে যেতে যেতে অতলের শূন্য তলে মেতে ওঠে সাক্ত, নিরাসক্ত যাবতীয়
                 --  কামোন্মত্ত হস্তি-হাস্তিনীর সঙ্গম সুখে

অথচ এই ক্ষণস্থায়ী সুখে বিদীর্ণ হলে ব্রহ্মতালু
নিষ্ক্রমনের পথ ধরে আত্ম জ্যোতি
                                     -- গন্তব্য বুক পোড়া নক্ষত্র

সন্ধ্যার চোখ ভিজিয়ে জ্বলজ্বল করে শীতলতম উষ্ণতায়

৩...

এই ব্রহ্মাণ্ড, এই মহাকাল :  নির্লোভ, সাত্ত্বিক চক্রবীর

পৃথিবীর এযাবৎ পাপ-যশ আত্মস্থ করে এখন অগ্নিকুন্ড : অতৃপ্ত-স্থবির

ফিরিয়ে দিচ্ছে যথেচ্ছ তর্জমায় অন্ধ-আকার  :  রক্তহীন বীজের নমুনায় -- এই প্রজন্ম, এই পরম্পরায়

৪...

অলক্ষ্যের শরশয্যায় মৃত্যু বাষ্প জমে উঠলেও জমেনি মেঘের শোক

এখানে জিরো গ্র্যাভিটি : এখানে কালের নৃশংস চোঁচ

নীচে ভাসছে জীবনীর সপ্রতিভ চোখ
                                     -- নিষ্প্রভ নিসর্গের মত  !!






শিশির হারাচ্ছে স্বপ্নের রং 

তুমি এসে স্পর্শ দিলে আমার সত্ত্বার অন্তরে

দক্ষিণের জানালা বোধয় উন্মুক্ত ছিল

সে' এক অপরূপ বাতাস বাহিত অচিন্ত্য-শিহরন ছুঁয়ে দিল দেহ-মন !
বাতাসও কাঁপছিল আমার শিহরন জনিত রাগে

আমি বুঝি,
আমি বুঝি -  তখনও জেগে আছি আমি স্বপ্নের প্রতি কোষে
ঝরে পড়ছি শিশির হয়ে তোমার গোলাপ পাপড়ি বুকে

আর বিছিয়ে দিচ্ছি আমার শিশির-সর্বাঙ্গ তোমার শিহরন অনুসারে

::

হে সখী !  স্বপ্নও তো পাক খায় দহন কুন্ডে !

স্বপ্নের সূর্য যখন মধ্য গগনে : জেগে উঠি

চেয়ে থাকি আমারই মানস-জন্মা -- গোলাপ বাগের হৃদয় বৃত্তে

দেখি, গোলাপ থেকে নেমে এসে সেই শিশির
নিশ্বাস জমিয়েছে কাঁটার বুকে

::

দেখ দেখ ! কিভাবে চক্ষু জলের প্ররোচনায় 
শিশির হারাচ্ছে স্বপ্নের রং    !!






সাগর 

# সাগর / ১

অর্ধেক আকাশ ছুঁয়ে আছি, অর্ধ গাহন সাগরে
প্রতি ঢেউ শুষে নিচ্ছে আমার অহংকারী তেজ

আকাশ  ! তুমি এবার চোখের মনি হও  -- দেখে নিতে চাই পৃথিবীর মুষ্টিবদ্ধ আবেগ

# সাগর / ২

সাগর তটে রেখেছিলাম যে উদ্বিগ্ন - উন্মত্ত ছোট ছোট ছোপ, পদক্ষেপ
টেনে নিয়ে যাচ্ছে ঢেউ --
যেখানে সাগরসীমা চর হয়ে জেগে ওঠে চাঁদের বুকে

এইতো সেই চাঁদ : ভেসে উঠেছে আমার লোহিত বর্ণ শোকে

# সাগর  / ৩

ফিরে আসছে একেএকে সব কিছু -- উত্তাল সাগরী-ফনায়

হুংকার নির্দেশে নিতেই হবে সব কিছু ফিরিয়ে  --
হারিয়েছি যাকিছু আবেগ-বর্জ্য নিরুপদ্রব নব্যতায়, অনুদ্ঘাত উত্তাপ
:
আমার শিকারী চোখ তখনও স্থির

তুলে নিলাম একটি সহস্রাব্দের ঝিনুক শরীর

সেখানে রাখা আছে সযত্নে : সপ্রেমে ভেসে যাওয়ার ক্ষিপ্র অজুহাত  ।।