গোপাল চন্দ্র সাহা
হুইল চেয়ারে চতুর্থ যুগ
এই যে বিচলন পথ
পথের মাঝে খানাখন্দ - জলজ
সেখানে গুটিয়ে আছে আকাশের অসীম সন্ধান
কেজানে,
পথ-বিস্তৃতির কোন্ বাঁকে কে অপারজন
::
যে পৃথিবী দিনেও দীন -- নিত্যদিন
সাঁতার কাটে সৌর বলয়ের আশপাশ
গ্রহণ পরিসরে
সেখানে এঁটো হয় শকুনের চোঁচ, আলোর চক্ষু খুঁটে
সানুদেশে নেমে আসছে অস্তগত ভার
::
এখানে জ্বলে ওঠে জীব-শিখা মৃতের পাশে বসে !
মৃত্যু তন্দ্রায়
তখন ভগবান ধীর
এই শিখাই খোদাই করেছে অর্বাচীন শৈল দেহ
বিফল কথার বিবরন
ওই শোন,
কোথাও যেন ধ্বনিত হচ্ছে শব্দ 'প্রবাহ'
শিলার
বিস্তীর্ণ বিদ্যুৎশিরায়
::
এই প্রবাহ --
বোহেমিয়ান, অবিন্যস্ত-বৈচিত্র্যময়
এই প্রবাহে ভাসমান অদীপ্ত নগরীর ধ্বংসস্তুপ
সে জীবিত অথবা
মৃতও নয়
এই ধ্বংসস্তুপের খাঁজে খাঁজে জমে আছে
ক্রান্তিপাতের উষ্মা
তবু নিঃশব্দে পেরিয়ে যাচ্ছে বনসাই মার্জিত চতুর্থ যুগ
-- এটা শুধু হুইল-চেয়ারের
সৌজন্য-সক্রিয়তায় ।।
শাশ্বত মন্বন্তর
আলোর উৎসবেই নাকি রয়েছে সৃষ্টির উৎস !
সেই আলোর এই অমিয় নির্মান : টুকরো টুকরো হয়ে মিশে যাচ্ছে
ব্রহ্মাণ্ডের আনবিক শোকে
যে শোক ছিল সৃষ্টির বিনাশে : এখন ব্যস্তানুপাত, যুগ ধর্মের
প্রস্রবণে
::
কি হবে সাধক --
ওই নক্ষত্রমণ্ডলের গৌন আলোয় আসন পেতে ?
শিথিল যতই কর তোমার স্বার্থ -- পরমার্থ কুন্ডলে
তোমার ক্রোমোজম পঞ্চভূতেরই সমন্বয়
জানইতো,
সমস্ত কারনের পরম যিনি তিনি উৎসহীন
" ঈশ্বরঃ
পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ।
অনাদির্রাদির্গোবিন্দঃ সর্বকারণকারণম্।।"
- সাধক, তুমি উৎস
থেকে সরে এসে খুবই মলিন !
'আলোর' স্বার্থেই
জ্বালিয়েছ যে অনির্বাণ
সে'
আলোক-লিপি আবদ্ধ কেন স্বার্থের মহাকাব্যে !
::
পৃষ্ঠার শেষে লিপির মৌনতায় পড়ে আছে পিন্ডের কালো তিল
সে'
তিলে চক্রবর্তী নিশিকাল : শুয়ে আছেন মৃত কাপালিক -- যুগ-যন্ত্রনায় নিঃস্ব
অবতার
তবে প্রবেশ কর এবার মৃত্যুর স্মৃতিতে :
দেখে নাও পিত্তস্থলের যন্ত্রণা
দেখে নাও -- শরণার্থী-যন্ত্রণার অবয়ব, চক্ষু ছায়ার
নীচে !
এবার চেয়ে বল : তোমার কোন্ প্রাপ্তি এই অনুভবে
আছে কোন বর্ণালীর গন্ধ ওই অবয়বে ?
আছে সাধক,
আছে --
কঙ্কালে প্রোথিত ধ্বংসের ভাস্কর্যই তো অনিন্দ্য নিত্য !
::
অনুক্রমিক প্রপঞ্চ সরিয়ে এসো আরও গভীরে :
এখনে শুধু জ্যোৎস্নার দাউ দাউ - জাগতিক সুষুন্মাকান্ডে
এই বসন্তে,
এই বাতাসের বিহ্বল-বিনয়ে -- বিস্ফার
রুদ্র তমসা
শাশ্বত হয়ে ওঠে মন্বন্তরী বীজমন্ত্র -- প্রেমকালের গোপন
বাণীতে ।।
জিরো গ্র্যাভিটি
১...
নরকের মত শীতল বুক বিছিয়ে স্পর্শহীন বাগান : ফুটে আছে একটি
অলৌকিক ফুল, পারিজাত
তবু এখানে নৈসর্গ :
সাগ্নিক-সন্ন্যাসীর বেশ
ধুয়ে গেছে সব বসন -- রাজ রক্ষিত আবেশ
নতজানু শিরস্ত্রাণ ঘুরপাক খাচ্ছে আকাশ বুকে
-- বেদুইন
ঘোড়ার লক্ষ্যহীন খুরে
২...
যখন সংযমে দানা বাঁধে দীর্ঘশ্বাস
ভ্রান্তিতে এসে দাঁড়ায় আত্মবিশ্বাস
তখন ক্ষয়িষ্ণু হয়ে ওঠে হেরিটেজ-গ্র্যাভিটি -- পরম্পরাগত
ক্ষয়ে যেতে যেতে অতলের শূন্য তলে মেতে ওঠে সাক্ত, নিরাসক্ত
যাবতীয়
-- কামোন্মত্ত হস্তি-হাস্তিনীর সঙ্গম সুখে
অথচ এই ক্ষণস্থায়ী সুখে বিদীর্ণ হলে ব্রহ্মতালু
নিষ্ক্রমনের পথ ধরে আত্ম জ্যোতি
-- গন্তব্য
বুক পোড়া নক্ষত্র
সন্ধ্যার চোখ ভিজিয়ে জ্বলজ্বল করে শীতলতম উষ্ণতায়
৩...
এই ব্রহ্মাণ্ড,
এই মহাকাল : নির্লোভ, সাত্ত্বিক
চক্রবীর
পৃথিবীর এযাবৎ পাপ-যশ আত্মস্থ করে এখন অগ্নিকুন্ড :
অতৃপ্ত-স্থবির
ফিরিয়ে দিচ্ছে যথেচ্ছ তর্জমায় অন্ধ-আকার :
রক্তহীন বীজের নমুনায় -- এই প্রজন্ম,
এই পরম্পরায়
৪...
অলক্ষ্যের শরশয্যায় মৃত্যু বাষ্প জমে উঠলেও জমেনি মেঘের
শোক
এখানে জিরো গ্র্যাভিটি : এখানে কালের নৃশংস চোঁচ
নীচে ভাসছে জীবনীর সপ্রতিভ চোখ
-- নিষ্প্রভ
নিসর্গের মত !!
শিশির হারাচ্ছে স্বপ্নের রং
তুমি এসে স্পর্শ দিলে আমার সত্ত্বার অন্তরে
দক্ষিণের জানালা বোধয় উন্মুক্ত ছিল
সে'
এক অপরূপ বাতাস বাহিত অচিন্ত্য-শিহরন ছুঁয়ে দিল দেহ-মন !
বাতাসও কাঁপছিল আমার শিহরন জনিত রাগে
আমি বুঝি,
আমি বুঝি - তখনও
জেগে আছি আমি স্বপ্নের প্রতি কোষে
ঝরে পড়ছি শিশির হয়ে তোমার গোলাপ পাপড়ি বুকে
আর বিছিয়ে দিচ্ছি আমার শিশির-সর্বাঙ্গ তোমার শিহরন অনুসারে
::
হে সখী ! স্বপ্নও
তো পাক খায় দহন কুন্ডে !
স্বপ্নের সূর্য যখন মধ্য গগনে : জেগে উঠি
চেয়ে থাকি আমারই মানস-জন্মা -- গোলাপ বাগের হৃদয় বৃত্তে
দেখি,
গোলাপ থেকে নেমে এসে সেই শিশির
নিশ্বাস জমিয়েছে কাঁটার বুকে
::
দেখ দেখ ! কিভাবে চক্ষু জলের প্ররোচনায়
শিশির হারাচ্ছে স্বপ্নের রং !!
সাগর
# সাগর
/ ১
অর্ধেক আকাশ ছুঁয়ে আছি, অর্ধ গাহন সাগরে
প্রতি ঢেউ শুষে নিচ্ছে আমার অহংকারী তেজ
আকাশ ! তুমি এবার
চোখের মনি হও -- দেখে নিতে চাই পৃথিবীর
মুষ্টিবদ্ধ আবেগ
# সাগর
/ ২
সাগর তটে রেখেছিলাম যে উদ্বিগ্ন - উন্মত্ত ছোট ছোট ছোপ, পদক্ষেপ
টেনে নিয়ে যাচ্ছে ঢেউ --
যেখানে সাগরসীমা চর হয়ে জেগে ওঠে চাঁদের বুকে
এইতো সেই চাঁদ : ভেসে উঠেছে আমার লোহিত বর্ণ শোকে
# সাগর / ৩
ফিরে আসছে একেএকে সব কিছু -- উত্তাল সাগরী-ফনায়
হুংকার নির্দেশে নিতেই হবে সব কিছু ফিরিয়ে --
হারিয়েছি যাকিছু আবেগ-বর্জ্য নিরুপদ্রব নব্যতায়, অনুদ্ঘাত
উত্তাপ
:
আমার শিকারী চোখ তখনও স্থির
তুলে নিলাম একটি সহস্রাব্দের ঝিনুক শরীর
সেখানে রাখা আছে সযত্নে : সপ্রেমে ভেসে যাওয়ার ক্ষিপ্র
অজুহাত ।।