বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৯

টিপলু বসু



টিপলু বসু

কমলালেবু

কমলালেবু ছাড়া আর কিছুই খেতে চাই না আজকাল
খোসা ছাড়ানোর পর দ্রাঘিমা রেখা বরাবর
কোয়াগুলি বিন্যস্ত থাকে
অক্ষরেখাহীন এক একটি গোলক
এক একটি পৃথিবী হয়ে যায়
জরাজীর্ণ পুরোনো পৃথিবীর বদলে
একটা নতুন পৃথিবী উগ্ রে দিতে ইচ্ছে করে

আজকাল কমলালেবু ছাড়া আর কিছুই খেতে ভালো লাগেনা।








শিলালিপি

প্রাগৈতিহাসিক শীত নেই
শীতার্ত পাথর শুধু পড়ে আছে একা
পৃথিবীর শিলালিপিগুলি
কুয়াশায় ভিজে স্পষ্ট হয় -----
এই বাংলায় ও সুদূর আন্দালুসিয়ায়
লিপিময় লেখা থাকে হাঁসেদের মরালচলন
তুলসীবাগানের চত্বরে তখন মঞ্জরীবাতাস
অচেনা শব্দ তুলে ডাক দেয়
পাঠ করি পৃথিবীর স্থাবর-জঙ্গম
কুয়াশার হিম আর
তুষারের কঠিন আচরণ
পাঠশেষে বয়ে  যায় জল
ক্ষয় হয় নীলাভ পাথর।








অস্তিত্ব

সরীসৃপ যেভাবে নির্মোক খুলে ফেলে
সেভাবে শৃঙ্খলমোচন করতে করতে
নতুন শব্দেরা বেজে ওঠে

প্রথমবার ভাষান্তরিত হওয়া কাহিনীরা
আমৃত্যু থেকে যায়
কলমের জ্বর আক্রান্ত কালির আঁচড়ে

একদিন অচেনা গানের সুরে
নেচে ওঠে মোহন অক্ষরমালা
রচিত হয় স্বতঃস্ফূর্ত সুললিত গল্পগাথা

অবশেষে আত্মশুদ্ধির এষণায় শিল্পকলা
কলুষমুক্তির প্রবল আকাঙ্ক্ষায়
সৃষ্টি করে অমোঘ অস্তিত্ব








আলো-আঁধারে

আলো-আঁধারে বেঁচে আছে ডাহুক সময়
ক্রেংকার থেমে গেলে পড়ে থাকে
স্তব্ধতার মতো কিছু নীরব অহংকার
কচুরিপানার ওপর লেখা হয়
পাখিদের পায়ের ছাপ নির্ভার নিশ্চুপ
এইসব ডাহুকের জন্মকাল থেকে
আমি আর ফিরিনি শহরের
আলো রোশনাই ভরা রাজপথে
অথবা যাইনি সূর্যোদয়ের পথে
সকালের আলোমাখা পর্বতচূড়ায়
আবছায়া অন্ধকারে বিচরণ শেষে
অনেকেই চলে গেছে সীমান্ত পেরিয়ে
অক্লান্ত মাঝিটি এখনও দাঁড় টেনে টেনে
আমাকে গতিসচকিত রাখে অনন্য আলোআঁধারে








মধুচন্দ্রিমা

কুসুমিত  বিছানায় পড়ে আছে
মধুচন্দ্রিমা-যাপন
বয়ে গেছে ধূসর জন্মকাল বিবাহ-জন্ম
আর এক আজন্মের নদ
মানুষের মুখে শুধু যে কথা মানায়
সে কথা প্রমাণ করে পথের কুকুর
লালাঝরা রাজপথে
অচেনা ঈশ্বরের ভরসায় হেঁটে যায়
হালফ্যাশানের পোষাকেরা
জিজীবিষা বহমান জিভের তলায়
চুম্বনে যৌনতায় আলো জ্বালানোর
ব্যর্থ চেষ্টায় জরাজীর্ণ অস্তিত্ব
নদের কিনারায় বসে নখ কাটে দাঁতে।