অশোক
রায়
হৃদ-বন্ধন
ঘুম-জড়ানো চোখ বৃষ্টি-ভেজা সকাল
আমার মন মানে না
আলাদিনের পিদিমটাকে ঘষে উলটে
বেরিয়ে আসে কঙ্কাল
হৃদয়ে বাসা বেঁধেছে জঞ্জাল
রক্তবাহিকায় শরীর লুটায় শিরে
এক টুকরো আগুন তীর-বেঁধা চমকায়
বিদ্যুৎ বৃথা বরিষণ
ফেলে-আসা ধন কাকলি-মেদুর অখ্যাত
কোনো মেঘের ফাঁকে
সদ্যোজাত সকালকে ঢাকে ঘুর্ণিঝড়ের
শিবির, মহাপ্রস্থানের
ইঙ্গিত।।
পরিবেশানন
একবার হামা দিয়ে ঘুরেছিলাম আমার
চারপাশ
কুখ্যাত ডাকাতকে চিনতে সময়
লাগেনি একটুও
নরম ঘাসে পাথরের পা পঞ্চমী সুর
বেতাল বাদশা
অচেনা পাখি কুকুর বরং এরচেয়ে ভাল
ভালবাসার মেদ ঝরাতে আরো একবার
কাঁদো
সবুজ রশ্মি দিয়ে দেখেছি অনেক
আনকোরা অবুঝ
পাওনা এতটুক ছাড়েনি ঘড়ি গম্বুজ
সারি
কৃষ্ণ-শ্যাম হামা দেয় দেওয়াল
বেয়ে ওঠে সঙ্কেত
যেতে চেয়েছি আলমোড়া-রানিক্ষেত
ঘুরে মরি চারপাশ কাছের মাঠ পাশের
গলি নর্দমা
পুকুরের শব ঘিরে প্রার্থনা
কাক-চক্ষু জলের কাছে ।।
অন্ধকুপ
অনেকগুলো স্কেচ টেবিলের ওপর
ছড়ানো আছে
নীহারিকার তারাগুলি জ্বলজ্বল চোখ
মিট-মিট
কপালে টিপ সিঁদুর টায়রা
আলোকজ্জ্বল হাসি
এরি মধ্যে অন্ধকার কূপে লুকিয়ে
শ্বাপদ একাগ্র
এরি মধ্যে নগ্ন নখর থাবায়
উণ্মত্ত আগুন খিদে
কিন্তু কে সে কি তার ঠিকানা কে
জানে
কার মনে ক্যান্সারের বীজ একদিন
মহীরুহ
সোপান বেয়ে উঠছে গরল ভীষণ চারদিক
অবদমিত গ্রন্থির নিঃশব্দ অকাল
নিঃসরণ
পাশবিক মনোবিকারের রুচি
সামাজিক পারিবারিক সম্পর্ক ভাসে
বন্যায়
আলো তুমি কি কেবল কালোর দিকেই
চেয়ে থাকবে?
পুরুষ থেকে নারী দায়বদ্ধতা কোথায়
ফেলে এলে?
পরশে শরত
অনেকদিন পরে আজ রোদ উঠেছে
সেজেছে আকাশ পেঁজা তুলোয়
বাতাসের ঘ্রাণ অন্যরকম পাতায়
পাতায়
ঝিরঝির শস্যের সাথে খেলা
হলুদ প্রজাপতি একজোড়া উড়ছে
উঁচু নীচু খেয়াল-খুশির ফুল
গুচ্ছে
আমিও তোমার সাথে উড়তে চাই
স্বপ্নের পাখায়
বেসামাল উপুড় হয়ে সর্ষে ফুলের
বৃন্তে
আমার হাত তুমি যদি ধর স্বর্ণকেশী
নিবিড় চাপে বুঝিয়ে দেব আমি কি
দিতে পারি
বুনো আস্তর ঘেঁটে তোমার কুসুমে
রিক্ততা শুন্য যত আবেদন রাখি
নিষ্করুণ
বনানীর সবুজ স্রোত যেখানে বাধা
পায়
সেই সঙ্গমে চাঁপা-বেলফুলে তোমায়
সাজাব
স্পর্ধা আমার পাখা, নিরন্তর উড়ি
তোমায় খুঁজি।।
অত্যাচারিত
আর কত তিক্ত হবে আমার ওপর
সকাল থেকে সন্ধ্যে খড়গ নিয়েই আছ
ভুল ধরবে আর কচুকাটা করবে
আচ্ছা আমাকে কি একটু স্পেস দিতে
পার না
যেমন একটা মিষ্টি কথা একটুকরো
হাসি
আমি তোমার গোলাম হয়ে থাকব
রাণী
অষ্টপ্রহর ঠুলি-বাঁধা অশ্ব দৌড়ই
তোমার কাজে
চাকরিহীন আমি দাসখত দিয়েছি তোমার
পায়
তবু মন পাইনা কষাঘাতে বিদ্ধ আমি
সন্ধের পর দেশির ঠেকে ঘুরি
কোনো বন্ধু যদি দয়া করে একটা
পৌয়া
অবধারিত তুমি গন্ধ পাও আর
আমার সারাদিনের বরাদ্দ সিগারেটখানা
কেড়ে নাও
বুকটা জ্বলে ঘুমাতে পারিনা
তোমার প্রশ্বাস সারা বাড়ি জুড়ে
তবু
উষ্ণতার ছোঁয়া তোমার একবিন্দু
পাই না
আমি হৃতবল ক্রমশ চন্দ্রবিন্দুর
দিকে গড়াই
জীবনিক অক্ষরগুলো একটা একটা করে
মুছে যায় অত্যাচারের কলমে, চিরতরে।।