শংকর ব্রহ্ম
তোমাকে যে দুঃখ
দেয়
তোমাকে যে দুঃখ
দেয়
সে কি শুধু দুঃখই দিতে চেয়েছি?
কে আছে সংসারী এই দুঃখের দিনে
কারা সব চুরি করে নিয়ে গেছে
দধীচির হাড়?
সেই কোন অবেলায় সকলেই গিয়েছিল
গঙ্গায়
সেরে নিতে পূণ্যের স্নান
কারা সব অন্ধকারে হাভাতের মতো
মিটিয়ে নিয়েছে সব শারীরিক গুপ্ত
লেনদেন।
কে আছ সন্ন্যাসী এই গহন আঁধারে
যেখানে মানুষ মরে
অনাহারে
অহংকারী ক্রোধে পোড়ে
জীবনের
অভিশপ্ত আয়ু।
এখনও ফেরোনি ঘরে?
তবে কেন
একা ফেলে রেখে গেছো ঘরের সম্পদ?
আত্মার যন্ত্রণা বুঝি এইবার
তোমাকেই দিয়ে যাবে যন্ত্রণার
স্বাদ।
কেন যে রয়েছো শোকে?
জান নাকি পৃথিবীর গোপন সংবাদ?
কি আছে দুঃখের এত ঝুলিতে তোমার?
তোমাকে যে
দুঃখ দেয়
সে কি শুধু দুঃখই দিতে শিখেছিল?
বিষাদ
বিষাদ কবে যে ফুরাবে
আমার জীবন থেকে?
এবার শীতেও কাটবে না বিষাদ ,
বিষাদে ও শীতে বুঝি প্রাণখানি
যায় -
ভাল করে গায়ে টানি , ছেঁড়া
কাঁথা-কানি।
কথা ছিল,
ছিল ব্যথা
ছিল সব যথযথা
ছিল না যা -
আকূলতা ;
সবটাই ছিল যথা
যেন কোন প্রতিচ্ছবি
আর সব কথকতা।
এক একটা আস্ত দিন আমাকে গ্রাস
করে
যেন ভরে রাখে বিষাদে
,
তাকে আমি রাত্রি দিয়ে মুড়ে ফেলি
-
কুয়াশায় ঢেকে
রাখি।
সারাদিনের ঘটনা প্রবাহ -
হিম হয়ে জমে থাকে বুকের ভিতরে ,
বুকের কপাট খুলে পরদিন আমি
উনুনের ছাই ভেবে
দূরে ডাস্টবিনে ফেলে আসি।
আবার নতুন করে শুরু হয় দিনে -
বিষাদের ভয় ,
সত্যিই কি এর- নেই কোন প্রতিকার, ক্ষয়?
মুখোমুখি
যখন তখন যাকে তাকে বলা যায় নাকি
ঘনিষ্ট
উত্তাপের কথা?
এমন জ্যোৎস্না রাত চরাচরে বাতাসও শীতল
কাছে নেই তুমি এ সব দুঃসহ লাগে খুব
এমন দুঃসহ দিনে শুয়ে আছি
হাসপাতালের বিধবা
চাদরে
তোমার কথা ভাবতে ভাবতে
যে কখন নিজের
অজান্তেই
অসুস্থতা কেটে যায়
অনেকটাই
তোমাকে কাছে পাওয়ার তীব্র
বাসনায়।
এমন চাঁদনি রাতে তুমি আমি পাশাপাশি বসে
পরস্পর মুখোমুখি
ঘনিষ্ট
উত্তপের গল্পে
দুর্বিসহ রাতও অনায়াসে পার হয়ে যায়।
সংস্কার
করণীয় কাজ হল না কিছুই করা
ভুলে ভুলে ফুল উঠল না ফুটে গাছে
কাছে ছিল যারা তারা আজ অনেকেই
কাছে নেই
তবু আছে যারা
নিজেরাই তারা অসহায় দিশেহারা।
শেষ বেলা এসে মনে পড়ে শেষে
কত নোনা জল ঢুকে
জীবনের স্বাদ নোনতা করেছে
যাবে একদিন সব কিছু চুকেবুকে।
জীবনে ফেরার ডাক দিলে যদি
সংস্কার কর
আবর্জনায় রুদ্ধ, গতিহারা যত
নদী।
আমার বন্ধুরা এবং
আমি
আমার বন্ধুরা বাড়ি করেছে আমি তা পারিনি
আমার বন্ধুরা গাড়ী করেছে আমি তা পারিনি
আমার বন্ধুরা ব্যাঙ্ক
ব্যালেন্স
বাড়িয়েছে পারদের উষ্মতায় আমি তা পারিনি
এ সব ব্যর্থতাগুলো মোটেই অজানা নয় আমার
সব জেনেই বলছি এতে কোন গ্লানি নেই মনে
আমার সাফল্য তাতে চিড় ধরে না এক
চুলও |
আমার সফল বন্ধুরা
একটিও কবিতা লিখতে পারেনি
কোনদিনও
আর আমার চার চারটা কবিতার বই
বেরিয়েছে
যা আমার কাছে একটি বাড়ির চেয়েও
বেশি মূল্যবান
একটি গাড়ির চেয়েও বেশি মূল্যবান
যা আমার কাছে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স
তুচ্ছ করে দেয় |
বালাই ষাট
তবু আমার বন্ধুরা কেউ মারা গেলে
পরে
তাদের বাড়ি গাড়ী এবং ব্যা ঙ্ক
ব্যালেন্স প্রভৃতি
স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি
তাদের নামে
আর
থাকবে না
সবই অন্য নামে হস্তান্তরিত হবে
কিন্তু আমি মারা গেলে পরেও
বইগুলি থেকে আমার নাম মুছে ফেলে
সেখানে অন্য কোন নাম বসানো যাবে
না কখনোই
সবই আমার নামে থেকে যাবে চিরকাল
সেটাই তো পরম প্রাপ্তি বলে মনে
হয় আমার।