বিদ্যুৎ মিশ্র
রোদ্দুর হতে চাই
তবু থেকে যায় কিছু স্মৃতি অবেলাতেও,
সূর্য ডুবে গেলে জমাট
আঁধারে ঢেকে যায় মানুষের মুখ ।
বন্ধ দরজা দিয়ে শুধু গুমোট জীবন।
নতুন করে আবার আয়নার কাছে এসে দাড়ানো
ভীষণ দরকার হয়ে পড়ে;
সব কিছু শুধু উজাড় করে ঢেলে দিলে
হাতে থাকবে না কিছুই।
বরং একটু জানলা খুলে বারান্দায় এসে দাড়াও।
উপরের দিকে মুখ তুলে চেয়ে বলো,
আমি আকাশের থেকে ছোট নই_
আমার বুকে সপ্ত সাগরের ঢেও রোজ দোলা দিয়ে যায়।আমি ধরে
রেখেছি মুঠোর মধ্যে সমস্ত আলোড়ন।
পায়ের থেকে মাটি খসকে গেলে
আমি বাতাসের সাথে কথা বলি।
দুকুল ছাপিয়ে বন্যা এসে সেলাম করে যায় যখন ,
তুমি দূরে পাহাড়ের আড়ালে মুখ লুকাও।আমি
বার বার চিত্কার করে বলি , এখনো আছি আমি
বালিচাপা কান্নার স্রোতে।
সমস্ত আগুন পুড়িয়ে আমি রোদ্দুর হতে চাই।
তুমি আছো?
দরজার সামনে এসে কড়া নেড়ে বার বার
জিগ্গেস করি।তুমি আছো ?
বুকের ভিতরে তুমুল ঝড়,কান্না
নিয়ে
কবিতার আড়ালে মুখ লুকিয়ে
চরম অপমানের দিন গুলি
ভোলার ব্যার্থ চেষ্টা করি শুধু ।
তুমি আছো ?
মিছে সলতে জ্বেলে ঘরে আলো করে
বালিশের কোলে মুখ ঢেকে
ভেবে নিলাম আমাকে কেও আর দেখতে পাবে না।
কেও আর জানবে না
আমি দীর্ঘ বৎসর শুধু
কি বিষ বুকে নিয়ে অভিনয় করে গেছি ।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে
অনায়াসেই ভেবে নিতে পারো
আনকোরা কেও।
আমি শুধু আর আমি নেই সাথে অনেক কান্না নিয়ে
তোমার দরজা থেকে
ফিরে এসেছি বার বার।
এখন ইচ্ছে হয় না দরজায় কড়া নাড়ি।তুমি আছো ?
কুমোদিনী
অনেক দিন আগেও এখানে একটা
নদী বয়ে যেতো।ভালোবেসে সবাই তাঁকে
ডাকত কুমোদিনী নামে।
সারা বৎসর খুব একটা জল থাকত না ঠিক
কিন্তু বর্ষার এই কটা দিন সে নিজের যৌবন ফিরে পেতো।
দুকুল ছাপিয়ে যখন কানায় কানায় জল উপচে আসত।
ছেলের দল দৌড়ে এসে ঝাঁপ দিত তাঁর অগভীর জলে।
মেতে উঠত জলের প্রতিটা বিন্দু।
গ্রামের সাথে একটা সম্পর্ক ছিলো কুমোদিনীর,
এই কিছুদিন শুধু স্নান সেরে শান্ত থাকত না
রীতি মতো তার জল জমা হত বাড়ির হেঁসেলে।
তারপর যখন ধীরে ধীরে
তার যৌবন ক্রমাগত ঢলে পড়তে শুরু করলো
কেও আর খোজ নিতে এলো না।তার অনেক দিন পরে
কখন যে কুমোদিনী শুকিয়ে গেছে জানতেই পারিনি।
হয়ত এক বুক তৃষ্ণা নিয়ে
নিদারুণ অপেক্ষায় যখন ক্লান্ত হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে কুমোদিনী,
আমরা বাড়িতে ডিপ বোরিং লাগিয়ে ফেলেছিলাম।
পবিত্র ভালোবাসা
তুমি বলেছিলে ভালোবাসা দুর থেকেই ভালো লাগে।কাছে এলে
নাকি আর পবিত্র থাকে না।আমি শুধু মুচকি হেসে বলেছিলাম।
কাছে না এলে ভালোবাসবো কি করে?
তুমি জানবে কেমন করে আমার বুকের কতখানি জুড়ে তুমি আছো।
তুমি বলেছিলে,
হৃদয়ের টান থাকলে নাকি সব বোঝা যায়।
আমি আবার হেসে উঠেছিলাম।
তখন তো বুঝিনি,স্বপ্নের
ডানা মেলে একটা রঙিন ক্যানভাসে
শুধু ইচ্ছে মতো ছবি এঁকে গেছি।তুমি শুধু দুর থেকে দেখে
বলেছিলে,
দেখো একদিন আমরা এই ছবিটার মতো জীবন্ত হয়ে উঠবো।
সত্যি কারের ভালোবাসা কোনদিন হারায় না।
তোমার সেই ভালোবাসা আমি পবিত্র রেখেছিলাম
দেখা হতো না আমাদের তবু জানতাম
সেই ক্যানভাসে আঁকা সব ছবি গুলোএকদিন জীবন্ত হয়ে উঠবে।
আজ যখন চরম মন খারাপের মহুর্তে দেখি
তুমি অন্য কারো বুকে মাথা রেখে বলো এটাই ভালোবাসা।
আমি আর হাসতে পারি না,
শুধু নিজেকে জিগ্গেস করি এটাই কি পবিত্র।
যদি একবার ফিরে দেখ্তিস
হয়ত ভালো আছিস তুই।দূরে ঠিক বকুল গাছ টার গা ঘেষে
নিশ্চিন্ত বাতাসের সাথে।আমি অনুভব করি
সারা গায়ে ভেসে আসে হেমন্তের প্রখর রোদ ।ভেবে পাই না
কি ভাবে কখন তুই দূরে সরে গেলি সেই পরিচিত গন্ডি ছেড়ে
অনেক দিন আমি শুধু খুঁজে গেছি ব্যাস্ত ট্রেনের প্রতিটা
কামরা।
পাহাড় থেকে সমুদ্রে ছুটে গেছি চোখ বুজে একাই।
পাতায় পাতায় টাঙিয়ে দিয়েছি
ক্ষমা পত্র। একবার
যদি তুই ফিরে দেখ্তিস কি ভাবে নিজেকে শেষ করেছি
সারা জীবন শুধু হা হুতাশ কবিতা যাপনের মাঝে।
মিছিল
এই বেশ আছি ভাষার উন্মাদনা গায়ে মেখে নতুন জীবন
ফুলের শুভ্র আলো ছড়িয়ে পড়ুক কবিতার মাঝে
বাগানের অনেক মালি এসে যখন ভীড় জমায় মৃত গোলাপের ঘরে
আক্ষেপ নিয়ে প্রজাপতি ফিরে যায় একা।
আমরা শুধু দেখতে থাকি একে একে ভেঙে যায় নতুন কলি।
কেও প্রতিবাদ করে না। আসলে কেও প্রতিবাদ করতে জানে না
কি ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে শহর জুড়ে মৃত গোলাপের গন্ধ
আমরা দরজা বন্ধ করে জানলায় চোখ রাখি
রাজপথ ঘিরে যখন শোক যাত্রার মিছিল।