আশরাফুল মোসাদ্দেক
গোলকের ভিতর
মচমচিয়ে ওঠেনি
অথচ ছোটহাতের এল এর মতো সোজা হয়ে গেছে
ঘুমিয়ে না কাটালে দেখতে পাবে
অপরাহ্ন প্রবিষ্ট হচ্ছে সন্ধ্যার অন্তর্বাসে
টান টান সোজা হয়ে
হারিক্যানের আলোয় নিজের ছায়াও ভূতুড়ে তখন
চেলচেলিয়ে পা-পথে চলে আসে
চেলা ও বিচ্ছুর মতো হিমভীতি
মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা একা
আবির্ভূত হবে মোহাম্মদী বেগ
জাপানি সড়কপথে ধারালো ছুরিতে সামুদ্রিক মাছ
চটজলদি রূপান্তরিত হয় শিল্পিত সুশিতে
একটুও সময় লাগে না যখন সময় এসে যায়
নেমে আসে পতাকার মতো গোধূলির জ্যুস
কিউপিডের ছিলা থেকে খসে পড়ে পুরোনো মঠের
শরীরের মতো তীর—
তবুও ইচ্ছের লিকলিকে জিভ
নতজানু হয়ে প্রার্থনা করে বালিকার চুম্বন
নুসনুসে ম্যারা পিঠার মতো গালগুলো ঘর্ষণ
মহারাজা সোলোমোনের প্রতি ধাবমান শেবার রানি
হিব্রু বাইবেল থেকে এখন ঘুমায় কোলোন গীর্জায়
নিঃশব্দে বিজনে নিশ্চুপে ছোটহাতের এল হয়ে আছে
ইয়েমেন থেকে জার্মানি—
গোলকের ভিতর
ভুলেছি তোমায়
বৈয়ামের মুখ খুলে চেয়ে দেখি
কে যেনো ইচ্ছেগুলোর লাললেজ
কেটে চলে গেছে
দুর্ঘটনাগুলো ঘটনার চেয়ে
গভীর গোপনে ঘটে
রটনার মতো হয় একাকার
আকাঙ্ক্ষার জিহ্বা ছোট হতে হতে
বনে যায় রূপকথার দৈত্য—
ঢুকে পড়ে নার্সিসাস বোতলে
নিজের ভিতর নিজ
যেমন সম্পর্কও আজব চিজ— স্টিচকরা
পোশাক শরীর নেবে কিনা থাকে অজানাই
পাতাঝরাকালে হলুদের সমাবেশ
বীজের ভিতর শুয়ে থাকা ঘুম
সোনার-রূপার কাঠি খেয়ে যায় ঘুণপোকা
কিছুটা সত্যি হলেও বাকিসব ধোঁকা
ভরাট ক্রস না হ্যাম ভুলে যাই
ভুলো না আমায় হয়ে যায় ভুলেছি তোমায়
যাদুকরী মীড়
এটা করি ওটা করি আছে মন অস্থির
জলাশয়ে ঢেউগুলো কবে হবে স্থির
কী যে করি ভেবে মরি মাছগুলো কিলবিল
আকাশের মাঠেঘাটে হেসে মরে চিল
এভাবেই দিনরাতগুলো হয়ে যায় খরচ
কোথায় হারিয়ে ফেলেছি সোনালি কবচ
কিছু ছিলো ছিলো নাকি করপুটে ফুল
আঁখি খুলে চেয়ে দেখি জলে ভরা ভুল
আদরটা বোঝে না মানুষ বোঝে ভালো পাম
চাটুকারে নতজানু বোঝে না তার দাম
ফুটানিতে জাহাঁবাজি ভিতরটা ঠনঠন
রাধাজি নাচিবে শুনি ঘৃত চাই মন মন
ফিরে আসি নিয়ে হাসি নিরিবিলি খুব
শিশিরেরা কানেকানে বলে একদম চুপ
কেউ আসে কেউ হাসে কেউ মারে তীর
বুঝে গেছি হারিয়েছি যাদুকরী মীড়
অপরাহ্নে খেলাধূলা
কোথাও যাবো না তাই বসে আছি শুয়ে থাকি গৃহকোণে
তবু রাজপথ এসে জানালায় ডাক দিয়ে যায়
যেনো দরোজার ছিটকিনি খুলে কিংবা এখুনি জানালা টপকিয়ে
জলদি বেরুতে হবে—
এখুনি খেলাধূলার অপরাহ্ন
চোর-পুলিশ লুকোচুরি থেকে সোনাদান পুকুরচুরি
সাপলুডুখেলে সাপে কাটা মৃতলাশগুলো
সন্ধ্যায় কি রাতে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়ার বেডমন্টন খেলা
শীতের হলুদ পাতা হাওয়ায় দুলতে দুলতে
হুন্ডির মতো পাচার হয়ে যাক ওয়ানটাইম ভালোবাসাবাসি
কোথাও না গিয়ে গৃহকোণে শুয়েবসে থাকলেও ওরা জোর করে
চোখ বেঁধে টেনে নিয়ে যাবে মিছিলের স্রোতে
তেরে কেটে তাক ধিন নাক ধিন উড়ালের রথে
হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্ক কেটে নিয়ে
বিহারিক্যাম্পের মুস্তাকিম পাকায় জবরদস্ত ভূনা
রক্তিম দ্রাক্ষাসিরাপ পান করে গোধূলির চোখ লাল ঢুলুঢুলু
তারপরই না শুরু হবে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ
একমাত্র আম্পায়ই জানবে জয়-পরাজয়ের ট্রফি
চারছক্কায় তুমুল হইচই থইথই করতালি
ঘরে শুয়েবসে থেকে চর্বি জমানোর সময় খতম
রাজপথ এসে চোঙ্গা মেরে শাসিয়ে দিয়েছে জানালায়
এপিটাফ অথবা এলিজি
ক.
চিরতাজ্যুসের মতো অন্ধকার বসে থাকে। মেকুরের থাবার নীচে
যেনো এক পিংপংবলের মতো ইঁদুর শাবক। যা হওয়ার হয়ে যাবে চটজলদি। টি-টুয়েন্টির শেষ
ওভার শুরু। রান আর বলের চাপে হৃৎপিণ্ডের উচ্চ লাফালাফি।
খ.
এদিকে এ শীতে কক্সবাজারে এসময় লইট্টা ফ্রাই এবং ছুরি শুটকি
ভর্তার টলোমলো উৎসব। সাগরের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলার ধুম। ফেইসবুক অবশেষে
গোলাপিত ফটো এ্যালবাম। বিশুদ্ধ দুগ্ধে স্নানের অমিয় হাম্মামখানা।
গ.
টেকনাফে বঙ্গোপসাগরে নাফবালিকার আর্তনাদ।
সেন্টমার্টিন-ছেঁড়া দ্বীপে কোরালের জলজ কনসার্ট। তিনবিঘা করিডোরের মতো সরলরেখা।
তেঁতুলিয়া থেকে বাংলাবান্দা সড়ক বিশাল অজগর সাপের মতো ঢুলুঢুলু অন্ধকারে।
ঘ.
উৎসব এবং অন্ধকারের শূন্যদূরত্বে আফিমের মতো চাঁদ। জমচুকা
কামরাঙ্গার আঁচারে যুক্ত হয় কয়েকফালি রসুনের কোয়া। লাখটাকায় কেনা খাটে খুবরাতে
ঘুণপোকার মৌণমিছিল। ঢেঁকিছাঁটা আহ্লাদে বসে গেছে হায় মধুপোকা।
ঙ.
দুঃসময়ে বথুয়া-লালশাঁকে কচকচ করে বালি। ওয়াসার ঘোলাজলে
প্লাবিত রসুইঘরে গালে হাত দিয়ে বসে পড়ে ছুটা গৃহকর্মি। কুয়াশার সাদামেঘে ঢেকে আছে
চাঁদ। নিবে আছে তারা। ওখানে আহার রেস্তোরাঁয় বসেছিলো কারা।
চ.
কুমিরগুলোর পেট এমনি সরস যে যতোই খাওয়াবে ততোই তাদের বেড়ে
যাবে ক্ষুধা বহুগুণ। নিজের মধ্যে ঘর। ঘরে আছে কক্ষ। কক্ষের মধ্যে জীবন্মৃত শুয়ে
থাকে বিছানায় মশারি। একা ও একাকি'র
এপিটাফ অথবা এলিজি।