সৌমিত
বসু
শুশ্রূষা
একটি অন্ধকার যে দ্রুততায় নেমে
আসছে মাটির ওপর
আমি তার চেয়ে অনেক কম দ্রুততায়
ঝাঁপ দিয়েছিলাম তোমার আলোয়।
শুধু যে যে অংশ পুড়ে গিয়েছিলো
আমি সেগুলো ব্যাগে পুরে
তোমাদের পুকুরে ফেলে নিশ্চিন্তে
হাত ধুয়ে এসেছি।
পাশের ধানক্ষেতের গোড়ায়
জমে থাকা জলে
চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখি
পড়ে আছে তার অস্পষ্ট ধ্বংসাবশেষ
এই অবেলায় সেটুকু বুকপকেটে পুরে
বাড়ি ফিরছি একলা,নিঃশব্দে।
তুমি একবার হেঁটে এসে দেখো
কানের দুপাশে কোনো দাগ আছে কিনা,
বুকের বাঁদিকে কোনো ক্ষতচিহ্ন
আঁকা আছে কি না।
কোনো ক্ষয়।
একটি জীবন যে দ্রুততায়
নেমে আসছে মাটির ওপর
তুমি একবার হাত পেতে সামনে
দাঁড়াও।
সে
প্রায় সাতমাস পরে সে ফিরে এলো।
ফিরে এলো কারণ সে এখন ভাবছে
বাকিজীবন
এই গ্রামেই থেকে যাবে।
তার প্রথম বউ গলায় পরিয়ে দিয়েছে
কঙ্কালের মালা
ছেলেমেয়েরা হাতে ধরিয়ে দিয়েছে
মুড়ো ঝাঁটা,টায়ারের চটি
যাতে ভর দিয়ে সে উড়ে যেতে পারে
আত্মীয়স্বজনের আকাশে
দুটো ভাত পাবার আশায়
আজ সে এসে দাঁড়িয়েছে
নতুন বউ এর উঠোনে।
বউ তাকে দেখছে আর ভাবছে
পাড়ার আশিসকে সে আজ
কি জবাব দেবে
হাড় জিরজিরে মানুষটাকে দেখে
কান্না পাচ্ছে তার
একটা সরু সুতোর ওপর দাঁড়িয়ে
একথালা গরম ভাত
তার কাছ থেকে সরে সরে যাচ্ছে।
অহেতুক স্বপ্নের ভেতর
আজ জন্ম নিলো যে উপকথা
তোমরা কি আদৌ টের পেলে?
পূর্বনির্ধারিত ভোরের
মতন
১৭ টি রাত্রির পর
আমি আবার তোমার স্বামী হয়ে
জন্মালাম
তোমার স্তনে ঠোঁট রেখে
পা দিয়ে আকাশ ছুঁয়ে আড়াল করে
দিতে চাইলাম সূর্য্যের গতিপথ
চাইলাম, নখ দিয়ে চিরে
দিতে
তোমার সবুজ সিঁথি,
কোনো প্রেমিক তোমায় ছুঁলেই
যেন মুহূর্তে অন্ধ হয়ে যায়।
আজ আমার জন্য তুমি
গুরুদেবের চোখে ফেলেছো গরম
নিশ্বাস
অতর্কিতে নামিয়ে দিয়েছো তার
বেড়ে ওঠা লাল তর্জনী।
হাতানিয়া দোয়ানিয়া দিয়ে বয়ে চলা
স্রোতের মতন
ভেসে গেছে সমস্ত অনুশাসন।
শুধু আমার জন্য ঘাটে ঘাটে
জ্বালিয়ে রাখা প্রদীপ
এক ফুঁ- এ নিবিয়ে
তুমি অন্ধকারে দাঁড়িয়ে
চিৎকার করে জানিয়ে দিয়েছো
আমাদের প্রতিদিনের নিঃশব্দে পুড়ে
যাওয়া।
আজ শুধু আমার জন্যই
দ্বিতীয়বার জন্ম নিলে তুমি।
ঈশ্বর হেঁটে চলেছেন
আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য
প্রান্তে
এক একবার পেছন ফিরে
দেখে নিচ্ছেন তোমায়,আর
তার মুচকি হাসিতে কিভাবে
সন্ধ্যের কাছে হার মানছে
তোমার স্তনের হাসি
এই জয় আজ কোন কুলুঙ্গিতে
তুলে রাখবো বলো?
একটি রাজনৈতিক হত্য
গড়িয়ে পড়া রক্ত দেখলে
আমার কাকার কথা মনে পড়ে।
একটা মানুষ ঝুলে রয়েছে
বাবলাগাছের ডালে
আর কান বেয়ে রক্ত বরানগরের ঘাট
ছুঁয়ে
ফোঁটা ফোঁটা জমা হচ্ছে চীনের
চেয়ারে।
আসলে যে কোনো গড়িয়ে পড়া রক্ত
এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যাওয়া
একটি স্বপ্নের জ্যান্ত নেগেটিভ।
তাহলে যে যে মানুষগুলো
নখ ঘষে ঘষে ময়লা তুলতে চেয়েছিলো
ভেঙে পড়া গাছের ডালটা থেকে
যত্নে বুকে করে তুলে নিতে
চেয়েছিল পাখির বাচ্চাটাকে
কিংবা জীবনটাকে রেদা দিয়ে চেঁছে
চেঁছে
টুকরোগুলোয় লাগিয়ে দিয়েছিল আগুন,
তাদের কি হবে,
যারা চারপাশে হাঁটে চলে কিন্তু
ছায়া পড়ে না?
যে কোনো মৃত্যুই আসলে
নারকেল গাছের ওপর দিয়ে বয়ে চলা
হাওয়া
যে কোনো জীবন মানেই
নারকেলপাতা বেয়ে নেমে আসা রক্ত
দূরে মেঘ ও নারকেলপাতার ভেতর
দিয়ে উড়ে যাচ্ছে
কাকার রক্তমাখা কান
জোৎস্না জাল বিছিয়ে রেখেছে
চতুর্দিকে
সত্যি বলো
তুমি দেখতে পাচ্ছ না?
মাথা রেখে রাত্রির
কাঁধে
গ্রাম শহর পেরিয়ে নদী এসে
দাঁড়ালো
আমাদের উঠোনে।
মাথার ওপরের গাছগুলো
ঝুঁকে পড়ে দেখছে
এই কি সেই পুরোনো লোক
রোজ নিজের হাতে ভাত মেখে
মুখে তুলে দিতো,
জ্বর হলে বুকে চেপে
কপালে পরিয়ে দিতো ওডিকোলনের পটি
সেবার নতুন বাড়ির ভিত হবে বলে
যারা কুড়ুল নিয়ে এসেছিল
তাদের সকলকে একব্যাগ জোৎস্না আর
১২৭ টা চুমু গালে এঁকে
বাড়ি পাঠিয়েছিল যে
সেই কি এসেছে আজ, চুল বেয়ে
টপটপ জল পিঠের ওপর ফেলে,
এই কি সে।
অবাক থালার মতো
তাকিয়ে আছে উঠোন
সারসার জঙ্গলের ভেতর থেকে
উঁকি মারছে আতসকাচ
এতদিন পর আজ
ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবে
এই ভেবে মুরগিরা নিজেদের ডানায়
লাগিয়ে নিয়েছে আগুন
সেই আলোয় পথ চিনে
কবেকার পুরোনো সাঁকো পার হচ্ছে
বৃদ্ধেরা
দরজাগুলো ভাবছে এতদিন পর
কেউ হয়তোবা তাদের ভেঙে উঁকি
দেবে।
সে ।
মানে লোকটি।খালি গায়ে দাঁড়িয়ে।
সকাল হলেই চাক ভেঙে বেরিয়ে পড়বে
অজস্র প্রশ্নেরা।তাকে ভীষণভাবে
খুবলে খাবার আগে সে দেখতে চাইবে
ফেলে দেওয়া পিতলের বাটিগুলো
যাতে মুখ দেখা যায়।যাতে
আঁকা আছে বংশপরিচয়।