হাসিবুল
হাসান শারদ
আত্মবোধন
একটু গরিব থাকো
দিন চলুক একটু টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে
তিনটা চাইলে একটা অপ্রাপ্ত থাক
ক্লান্ত দিনের শেষে একটা নিশ^াস পড়–ক
তবু মাঝ রাতে যেন বিবেকের দংশন না হয়
যেন কারো অভিশাপের সাপের দংশন না বসে হৃৎপিÐে
যেন কোনো গøানি মুছতে না হয় বছর শেষে
অন্তরের ধনও ধন, দারিদ্র্যও দারিদ্র্য
সবার সব থাকে না
তোমার আছে রবীন্দ্রসঙ্গীত
তোমার আছে নদীতীর জুড়ে অনাবিল সবুজের লীলা
তোমার আছে স্বাপ্নিক এক ভবিষ্যৎ
আছে তোমার আলোকিত দুটো চোখ
কেন তুমি নিজেকে বন্দি করো
কেন অর্থের পায়ে দাও পুজো
কেন নষ্ট ভ্রষ্টদের দলে ভেড়ো তুমি
কেন তুমি হও গড্ডলিকা
কেন ভাসো অনর্থক লালসার নষ্ট ড্রেনে
তারচেয়ে কিছু পিছুটান মেনে নাও
মেনে নাও কিছু সুন্দর না-থাকা, না-পাওয়া
তোমার জীবন অনন্ত নয়, তুমি জানো,
তুমি আজ জানো, তুমি বারবার দেখেছ,
কীভাবে ঝরে পড়ে অনন্ত নক্ষত্রবীথি ও মানবজনম
কেন অযথা নেবে অমসৃণ-বাঁকা পথ?
তারচেয়ে বরং চলো তুমি একা
শান্তিময় নির্জন নিষ্কণ্টক সহজ পথে
চলো, মলিন এক গৃহ করো মৃদু
হাওয়া-বওয়া দূর তেপান্তরে
ঐসব বহুজাতিক বাণিজ্যিক ধুর্ততা,
শঠতার জীবন নামক সার্কাস তোমার জন্য নয়।
অনাগত সন্তান
শুনেছি আমার অনাগত সন্তান আসছে
পরিভ্রমণ করছে সে এখন এক মহাসড়ক
তার মাতৃগর্ভের অন্তর্গত যুগযুগান্তের পথ
সে পাড়ি দিয়ে আসছে। গভীর ভালোবাসা
জাগছে না আমার এখনো তার প্রতি,
আমার কাজের ফাঁকে ফাঁকে মনে পড়ছে না
তার কথা। অযথা আসছে সে।
আমি তাকে ডাকছি না, আমি তাকে বলছি না
তোকে সব দেব, আয়, আয়, আয়...
তার জন্য আমার প্রস্তুতি নেই কোনো।
তার জন্য আমার ব্যাকুলতা নেই, নিষেধও নেই।
তবু সে আসছে।
আমি তাকে থামিয়ে দিতে পারি না,
তার একটা অধিকার আছে এ পৃথিবী দেখার
তার একটা হয়তো নিজস্ব চিন্তা আছে
যে কারণে সে আসছে পৃথিবীকে দেখতে।
তার জন্য বরাদ্দ হচ্ছে মহাকালের বুকে একবিন্দু সময়,
সে হবে একটি ছোট্ট গল্প এই পৃথিবীর,
হবে ছোট একটা জীবন-ইতিহাস এখানে,
তারও একটা নিজস্ব চরিত্র গড়ে উঠবে
নিজস্ব কিছু ভালো লাগা মন্দ লাগা থাকবে তারও,
আমাকে হয়তো ভালো লাগবে না তার।
শুধু কী এক রহস্যের মতো সে বড় হচ্ছে
তার মায়ের গর্ভে। চুপিচুপি বড় হচ্ছে সে।
যে-কেউ হতে পারে সে। হতে পারে সে
আমার দ্বিতীয় জন, হতে পারে সে আমার
অচেনা। তবু যেই হোক সে, সুন্দর হোক,
সুন্দর হোক তার পথচলা এই রুক্ষ পৃথিবীতে।
বিবাদী ঈশ^র
নিজেকে গালি দিই
আমি এমন কেন
আর একটু কি হতে পারতাম না স্বাভাবিক
মানুষের মতো?
হয়তো লোকে সকলে বোঝে না আমার রকমটা
তবু আমি নিজের কাছে নিজেই হই লজ্জিত
কেন ঈশ^র আরেকটু ভালো কাঁচামাল
দিয়ে গড়ল না আমাকে
কেন অযথাই কারচুপি করল আমাকে নিয়ে
ফাঁকি দিল আমাকে, বলল, এরচেয়ে বেশি তোমার জন্য নয়
নাকি আমার যা প্রাপ্য আমিই তা নিইনি?
নিজেকে ঠকিয়েছি নিজেই?
এখন বকছি ঈশ^রকেÑ
হতে পারে নিজেকে রেখেছি রুদ্ধ
নিজেরই অলস ভালোলাগার ঘেরাটোপে
ঘুমিয়ে নষ্ট করেছি নিজ সময় নিজ দেহ আর আগামী
হয়তো নষ্ট করেছি আমার আমিকে
নষ্ট করেছি অযথা আমোদের জোয়ারে ভাসিয়ে
যা-তা করে নষ্ট করেছি নিজেকে
আজ ঈশ^রকে দোষ দিয়ে করছি বিবাদী
ঈশ^রেরই দরবারে
হতে পারে আমি আসলে সুন্দর জীবনের যোগ্য নই।
একটি স্থিরচিত্র
তুমি বসে আছ
রানীর মতো পায়ের ওপর পা তুলে
আমি দেখছি তোমার ছবি
বিলাসবহুল কোনো রেস্তোরাঁয় হবে
হাতলওয়ালা একটি কাঠের চেয়ারে তুমি বসে আছ
তোমার পেছনে একটি টবে ফুলগাছ লাগানো
তার ডালগুলো ছড়িয়েছে আশেপাশে
তার সবুজ সবুজ পাতা সুন্দর লাগছে
তোমার গায়ে দীর্ঘ নীলাভ কামিজ
মেরুন ওড়না গলায়
চোখে কালো ফ্রেমের চশমা
আর হাতঘড়িতে দেখেছি বাদামি বেল্ট
আর দেখেছি তোমার পাশের চেয়ারটা শূন্য।
কারো নাম
সময়ের ঢেউ যদি বালুকাবেলায়
আমার হাতে লেখা নামগুলো মুছে দিয়ে যায়,
যাক না!
কারো নাম, যা আমি নিজ হাতে
লিখেছিলাম একদিন,
নিজ হাতেই ঘষে মুছে দিতে চাই না।
যে দূরে যায়, যাক না!
যে কাছে থাকে থাক না!
কেউ অবহেলা করুক, ক্ষতি কী?
অবহেলা তো মানুষেরই প্রাপ্য!
কেউ ভালোবাসুক, একমুহূর্তের ভালোবাসা হোক
সেটা, কম কী!
ওই এক মুহূর্তের আলোর কাছে চিরকালের অন্ধকার ¤øান।
কাটুক না সময় একা লাগায়, একলা থাকায়!
একদিন এই কুয়াশায় আমি হেঁটেছিলাম,
শিশিরভেজা ঘাসে আমি হেঁটেছিলাম,
অঙ্কুরিত সবজিপত্র আমি ছুঁয়েছিলাম,
এসব তো সহজ মানবজন্মের সহজ সুখ,
কী দুর্লভ সেই ভালোলাগা!
আমি সূর্যোদয় দেখেছি একা,
সূর্যাস্ত দেখেছি একা,
আর এক নারীকে পাশে চেয়েছিলাম,
অন্ধ চোখে পথ চেয়ে চেয়ে একদিন তাকে পাশে পেয়েছিলাম,
পাব কি আর তাকে!
পাব পাব করে কি কেটে যাবে না-পাবার এক সুদীর্ঘ কাল!