শিবাশিস
দত্ত
মৃত্যুশোক
মৃত্যুশোক ডানা মেলে উড়ে যায়
অভুক্ত পিতামহদের কাছে
জলের সবুজ আভা প্রসারিত হয়
যেন দ্রাবিড়ীয় মন খোসাছেঁড়া ফলের
মতো
অবাধ মেলামেশা শেষে
চাঁদের কণাকে ছুঁয়ে যায়।
আলকাপ শুনি, নক্ষত্রবিভ্রাট
শেষে
নিগৃহীত সেনাদের চোখমুখ দেখি
অদৃশ্য সন্ত্রাসের কথা ভেবে
মনে মনে আত্মহত্যা করি।
ভীতু আর খচ্চরদের আত্মারা
সৌরলোকে বিচরণ করে,
বই পড়তে না পারার কষ্ট জেনেও
নিশ্চিন্তে রাত জাগি, আর্তনাদ করি।
তেইশটি বিড়াল, গোটা তিন
বিলিতি কুকুর
আর গান-জানা মেয়েদের ভালোবেসে
আমি এ সময় মহান প্রেমিক হতে
চেয়েছি।
নতুন কোনো ক্ষমতাবানের সঙ্গে
হৃদ্যতা
যদিও বা গড়ে ওঠে--
হে অপার্থিব আনন্দ, হে নির্লোভ
উত্তেজনা
গর্ভহীন হয়েও তোমরা
আগামীদিনের শোভাযাত্রায়
নির্ভার ঐশ্বর্যটুকু দান কোরো।
শাখা-সিঁদুর-পলা জমা রাখা আছে--
অপূরণীয় কোনো ক্ষতি হলে
রঙিন ফানুস সব উড়িয়ে দিও
জিজ্ঞাসা
অবাক মুহূর্ত দিয়ে ঘেরা জলাধার
থেকে
ঝরে পড়ে অবজ্ঞার জল
পিপাসাদগ্ধ হরিণীরা ছুটে যায়
বিস্মৃত কল্পলোকে
জিজ্ঞাসাচিহ্নিত প্রতিটি সমর্পণই
ঘটে
আমাদের গোচরে।
মায়াময় কলতান শুনি
বক্সীদের পুকুরে ভেসে ওঠে
জলে-ডোবা চাঁদ।
কতটা শৌখিন তুমি, হৃদয় কতটা
অশান্ত হলে
বিরহ বিলিয়ে দিতে পারো জনসমাবেশে?
কান্নার শরীর নিয়ে কে বা কারা
বাঁচে
বিশ্রী সমাজ-- তাই পরিচর্যা শেষে
অপ্রিয় হয়েছ তুমি। মনের গভীরে
আছে কি কোনো ক্ষত
জীবন্মৃতের ব্যর্থ প্রলাপ--
জীবন এরকম নাকি !
প্রতিটি হিমবাহ অমোঘ কল্পনা নিয়ে
বাঁচে
ব্যর্থতা ছড়ানো থাকে আমাদের
তৃপ্তিকর কাজে
সৌন্দর্য পূর্ণতা চায়-- হে
বায়বীয় মন
আশ্চর্য শপথ নিয়ে কতদূর যাবে?
অপেক্ষার জল
জলের পিছনে জল, কে বা কারা
আসে
কল্পিত মনের ত্রিভুজ কেবলই
শূন্যে ভাসে
বিস্মিত ভঙ্গিগুলো সব দেওয়ালে
আঁকো
সঞ্চিত মিথ্যাচার আর পরপুরুষের
দৃষ্টি
কিছুটা ম্লান হলে
হাতে নিও ঢেউয়ের খোলস,
বুদবুদ গড়ার প্রেরণা মেলে যদি
নিজেকে নিমগ্ন রাখো
প্রত্যূষকালীন স্নিগ্ধতায়।
আমি সেই ব্যক্তিগত শঙ্কা
কখনো বা নিঃসঙ্গের আর্তনাদ
দ্বন্দ্বময় নিদ্রায় কি কোনো
দুঃস্বপ্ন জাগে?
বংশানুক্রমিক প্রীতি থাকে
অবশিষ্ট যদি
হে প্রেমিক
নিশ্চিত ভরসা জেনো অপেক্ষার জলে।
কালমাহাত্ম্য
দুঃখ কি কোনো ঝড়, কোন পথে আসে?
দুঃখ ক্রমাগত ঝরে যায়
বারিপতনের সঙ্গে ঝরা দুঃখের কিছু
মিল আছে
বৃষ্টি তো নিম্নগামী, দুঃখও
প্রায়শই
আমাদের অধোগামী করে।
কোথায় সূর্যমুখী, কোথায় সব
জঙ্গি ডালপালা
অলৌকিক শূন্যতা আমাদের সন্ত্রস্ত
করে।
কালমাহাত্ম্য মানো না তুমি
হাত আর পায়ের লিগামেন্ট
ছিঁড়ে ফেলো বুঝি!
পরিচর্যা শেষে মরণাপন্নদের মন
বদলে যায়।
পৃথিবী পুরোনো হয়ে গেছে
বিহ্বল মন নিয়ে আর কেন
যন্ত্রণার ছবি আঁকো?
সকালের ঈশ্বর বিকেলে উধাও
প্রতিদিন হাহাকার শুনি
শঙ্খচিল উড়ে যায় অজানা
সৈকতে।
উপলব্ধি
ধোঁয়া ধুলো মাটি আর সংগ্রহশালায় জমে থাকা কাগুজে
প্রতিশ্রুতি-- তোমরা সকলে নির্বাসনে যাও। অকুণ্ঠচিত্তে অভিবাদন গ্রহণের পর আমি
মুগ্ধতা কিনতে চাই। ফুলের সৌন্দর্য থেকে গড়ে তুলি ফল। ওহে গিটারপ্রেমিক, জনপ্রিয়তা আর
শত্রুতার মাঝে প্রচ্ছন্ন একটা দ্বীপ-- এক চিরন্তন বাসনা সেখানে ঘুমিয়ে থাকে।
চিরস্থায়ী কোনো প্রতিজ্ঞা থেকে ঝরে যায় অমলিন স্বপ্ন। এর চেয়ে কি অসত্য মনে হয়
অতীতের লবণাক্ত অনুভূতি ! মুখচোরা পৃথিবীর কোণে
কোণে বীতশোক, পরবশ
আলোর ছিন্নভিন্ন অংশ,
কার মনে কী আছে কে বলে দেবে?
তবু তো দংশন কিংবা আঘাত চাই,
লুন্ঠনসামগ্রী রাখা থাক প্রহরীর ঘরে। উন্নয়ন-সন্ত্রাসের দিনে নাটকীয় মৃত্যু
ঘটে যায়, নিষ্ঠুর
প্রেম-প্রীতি, বিক্ষুব্ধ
হাসি আর কান্না জন্ম নেবে বলে। অকল্পনীয় মনের শিল্পী হয়েও তুমি হন্তারক, তুমি
নারীবিদ্বেষী। অপরিসীম যৌন-কৌতূহল আছে বলেই মাংস খাওয়ার লোভ, অভিসন্ধি
থেকে উপলব্ধিতে পৌঁছোনোর রহস্যে দীন হওয়ার প্রেরণা থাকে বই কী! ঝরা ফুল,বিবর্ণ ঘাস
আর শুকনো পাতার সমাবেশে হাজির হলে তোমার অনুভূতি শিথিল হয়। হে বাক্যবাগীশ, তীব্র
বজ্রপাতের সময় তবে কেন বেহিসেবি সুখ কল্পনা করো? অস্তিত্ব বিলুপ্ত হতে পারে এ আশঙ্কা আছে, তাই কি পরাভব মানো?