কবির কল্লোল
জীবনের ড্যাসচিহ্নগুলো
১
এক দুই ক'রে—দুইশ আঠারো—সিঁড়ি বেয়ে
বেয়ে—নামি
রাস্তায়। হেয়ার ড্রেসার। দুটো মুদিখানা। তিনটে কুকুর। ন্যাঙটো একটা—বদ্ধ পাগল।
ডানপাশে গলি। গলির মাথায়—ফার্মেসি
খোলা। সকাল আটটা। ত্রিশ পা এগোলে—ইত্যাদি
মোড়।
এরপর সোজা—তীর ছুটে
যায়। থেবড়ো রাস্তা
মনে পড়ে- মৃদু—'ইচ্ছের
ভুলে—হয়নি
নাস্তা'
নাস্তায় কভু—খিচুড়ি-ঘি
আসে। বিষ কি মেশানো?
সন্দেহ করি,—খাই
বুক ভ'রে।
বুকে ব্যথা করে
বুকের পাঁজর—যেন
বা ছড়ানো—ঢাকার
গলিতে। মোহাম্মদপুর। বাস্ট্যান্ড থেকে—দুচোখ
যেদিকে—চ'লে যায়, ভাবি—সেইদিকে যাব।
পায়ে দড়ি বাঁধা। বাঁধা ছিল আগে। এখন কিছুটা—ঢিলে
হ'য়ে
গেছে। টিউশনি আছে। আর তুমি আছো। তুমি মানে রোজ—বারো গুন আট।
শাহবাগ মোড়। ভি.সি. চত্বর। যেখানেই যাই
একটু দাঁড়াই। পায়চারি করি। ধানক্ষেত নাই!
ধানক্ষেত মানে—ইঁদুরের
দৌড়। সড়সড় সড়
সড়কের মাঝে—সাধ
হয় দুটো—পাতো
রুয়ে দিই
ধুত্তুরি ছাই। এইটা একটা—কবিতার জাত! ''জাত
গেল জাত - গেল, ব'লে'' ব'লে—চেঁচাচ্ছে এক—অন্ধ ভিখিরি।
তার থালা থেকে—টুপটাপ
ক'রে—ঝনঝন ঝন—কবিতারা
কাঁপে। আমি শীতে কাঁপি। আর কাঁপি যদি—শরীষ্ণকালে—তাপ বেড়ে
যায়।
চলো,
রাত হ'লো—ঘরে ফেরা
যাক। এগারোটা বাজে।
২
রাত এগারোটা। ঘড়ির দু-কাঁটা—দেখে মনে হয়—বিজয়
চিহ্ন। কেন যে তবুও—চিরকাল
ধ'রে—নিজেকে আমার—পরাজিত লাগে!
কেউ কি জিতেছে? জয়-পরাজয়—শব্দের সাথে—পরিচয় যার—সে কভু জিততে—পারে না পারে
না। তাহলে কি যারা—বধির
এবং—অন্ধ
কিংবা—অপ্রকৃতস্থ—তারা জিতে
যায়? না
না মিয়াভাই, বোনেরা
আমার, জয়-পরাজয়—জ্ঞান নেই
যার—সেও
তো জিততে—পারে
না পারে না।
বাসে উঠলেই—ইদানিং
শুধু—এইসব
ভাবি
ভাবতে ভাবতে—সিট
পেয়ে গেলে—শব্দের
চাবি
টুক ক'রে
আমি—ফোন
বের ক'রে—নোট ক'রে রাখি
এরকম কিছু—নোট
থেকে আসে—তুমুল
কবিতা
সুতরাং এই—পৃথিবীতে
যদি—ছিটেফোঁটা
কিছু—রেখে
যেতে চাও—তবে
প্রথমেই—বাস্তুজগতে—নিজস্ব কিছু—জায়গা লাগবে।
ওগো ফুল্লরা, তোমার
বুকেতে—আমাকে
একটু—জায়গা
দেবে গো? ফের
শিশু হ'য়ে—ঘুমোতাম তবে।
ক্লান্ত লাগছে।
মায়ের পেটেতে—কোলে
আর বুকে—ঘুমিয়েছি
কতো!
শিশুকালই ভালো। বড় হ'তে হ'তে—জেগে ওঠে
ক্ষত
পায়ের তলায়,
কাঁধের উপরে। কাঁদতে পারি না
নাড়ি কাটা শিশু—যখন
ইচ্ছে—কাঁদতে
সে পারে
ঠাস ক'রে
ব্যাটা—বাস
ড্রাইভার—ব্রেক
চেপে দিল। আরেকটু হ'লে—জানালাটা গ'লে—ছিটকে যেতাম।
আঙুল কেটেছে। আঙুলটা যদি—তোমার
দুঠোঁটে—ঘ'ষে দেয়া যেত!
লাল টকটকে—লিপ-স্টিক।
পৃথিবীকে ফের—মোহময়
লাগে।
মনে ভয় জাগে—পৃথিবীটা
যদি—ব্রেক
চেপে দেয়!
৩
পৃথিবীটা যদি—ব্রেক
চেপে দেয়! দিলোই না হয়। উড়াউড়ি হবে। আকাশে আকাশে—উড়নচণ্ডী। তুমিও উড়ছো—আমিও
উড়ছি—ট্রাম্পও
উড়ছে। মহাশূন্যের—ইতিহাসে
এ-তো—মহামিলনের—কাঙ্ক্ষিত
ছবি। এই এক ভালো, মহাদুর্যোগে—মানুষে
মানুষে—বিভেদ
থাকে না।
ঘুম ভেঙে যায়। খুব বড়জোর—দশটা সেকেন্ড।
তার মানে হ'লো—মানুষ চাইলে—মুহুর্তকালে
সমাজের জাল—ছিড়ে
দিতে পারে। অথবা সতত
স্বপ্নও যদি—মৃত্যুর
মতো—বাস্তব
হ'তো!
হতেও তো পারে। তুমি যা ভাবছো—তারচে তীব্র—ভাবছে
হয়তো—অন্য
মানুষ, তোমাকে
নিয়েই। কেবা ভেবেছিল—মুদ্রিত
হবে—'আলফাবেতুম
বেনগালিকুম'? অতএব
এসো—বিশ্বাস
রাখি,—একদিন
সবে—লেভেল
প্লেয়িং—ফিল্ডে
নামবে,—ঝুম
বৃষ্টিতে;—সেই
সন্ধ্যায়—টিএসসিতেই—ঠোঁটাঠোঁটি
হবে। শাড়ি প'রে
এসো।
চলো লিখে রাখি—ফিতে
কাটা সুর—সন্ধ্যের
বোল,
এলোথেলো কিছু—বিকেলের
প্রেম,—মৃদু
খুনসুটি।
মনখারাপের—হলদে
পালক,—নিন্দার
ত্রুটি
অনুবাদ ক'রে—চলো লিখি
কিছু—অণু
কল্লোল
ছাতা নিয়ে এসো। ভিজলে তোমার—ঠাণ্ডাতে পায়। কেঁপে কেঁপে ওঠো। তুমি কি পৃথিবী? পৃথিবী
কাঁপছে। অমল তোমার—কোমরে
হঠাৎ—আঙুল
ছোঁয়ালে—যেরকমভাবে—ভিতরে কোথাও—শিলাস্তরের—নড়াচড়া বাড়ে, আচমকা কাঁপো; সেরকমভাবে—হিরোশিমা আজো—কেঁপে কেঁপে
ওঠে।
ও ভূমিকম্প,—আর
কতকাল—নন্দঘোষের—পাট ক'রে যাবে?
৪
পৃথিবীতে তবু—নন্দঘোষেরা—আজো টিকে
আছে। যেখানেই বোমা—মানুষের
মাঝে—ঠাস
ক'রে
ওঠে, ফাঁস
হওয়ার—আগেই
সেখানে—চওড়া
কাঁধের—নিরীহ
গাধাটা—চিহ্নিত
হয়। পৃথিবীর সব—জজ
মিয়ারাই—ফ্যানে
ঝুলে থাকে। টর্চার সেলে
আলো,
এতো আলো! আলোতে আমার—মাথা
ব্যথা করে
শিশুরা যেমন—পৃথিবীতে
এসে—ভয়ে
তারস্বরে
চিৎকার করে,
তবু চোখ থেকে—অশ্রু
ঝরে না,
আমিও তেমন,—কী
জানি, হয়তো—কাঁদা ভুলে
গেছি
টাফনিল খাই। আলোটা নিভিয়ে—শুয়ে পড়ি,
তবু—ঘুম
তো আসে না। ভেড়া গুনে দেখি। ভেড়ারা কেন যে—এত
চঞ্চল!—ধাম!
খট ক'রে—ফ্যানটা
ক্রমেই—কাবু
হ'য়ে
আসে। নিরানব্বই—আটানব্বই—সাতানব্বই।
ফুল্লরা আছো? মাথাটা
একটু—বুলিয়ে
দেবে গো?
চার সাত আট। অ্যান্ড্রু ওয়েল,—তবু তো হ'লো
না।
দূরে,
বহুদূরে—নিমগাছ
তলা। একচালা ঘর
বাতাসের খামে—ঠান্ডা
পাঠায়—মাঠের
বাগান
ঘুম হাঁস হ'য়ে—সাঁতরায়ে
আসে। সব সুনসান
কুকুর ডাকছে। মাঝরাত্তিরে—মানুষ দেখলে—মর্দা
কুকুর—পিছু
পিছু হাঁটে। হাঁটতে বেরোই। কুকুর দেখলে—গান
গেয়ে উঠি। মানুষ দেখলে—রোম
খাড়া হয়। হিম হিম লাগে। ভয় পেলে আমি—ফড়িঙের
মতো—একলাফ
দিয়ে—শিশুকালে
যাই।
বাছুরের মতো—ডুকরিয়ে
উঠি—মা, মাগো ওমা
৫
'মা,—আমি ভালো
আছি।' বলি
আর হাসি। মোবাইল ফোনে। বেগুনের ঝোলে—ভাজা
চ্যাং আর—বড়ি
ছেড়ে দিলে—টগবগ
ক'রে—শব্দেরা
ফোটে। শুধু মার ঠোঁটে—হাসিরা
ফোটে না। কন্ঠ শুকনো। বলে,
'রে খোকন,—ছুটি
কবে তোর?'
এ জীবন থেকে—ছুটিরা
বোধয়—ছুটি
নিয়ে গেছে।
একছুটে যদি—গ্রামে
ফেরা যেত! এখানে শহর
ল্যাম্পপোস্ট জ্বেলে—পোকার
মতন—মনুষ্য
ধরে।
মা,
আমি এখানে—পোকা
হ'য়ে
গেছি; আলো
গহ্বরে
পোকা ওড়ে আর—তারো
বেশি নাকি—টাকা
ওড়ে। আমি—ধরতে
পারি না। ছ হাজার কোটি—উড়ে
চ'লে
গেল। কলমের জোরে। কলম এখানে—হাতেকলমেই—অস্ত্রের
চেয়ে—বেশি
বলশালী। খলেরা নায়ক। তেলাপোকা পাখি। আবৃত্তিকার—এখানে শিল্পী;—মিডিয়ার
মোয়া।
সে-ই আজ বড়—কবি, যার আছে—সরকারি
স্নেহ।
প্রথম পুরুষ—গালি
খায় আর—হাততালি
খায়
মধ্যম গুলো। কে যে কাকে খায়! কাকের শহর।
খয়ের খাঁয়েরা—আপদবক্ষ—চাটে এঁটো
দেহ
মা,
আমি করুণ—মমি
হ'য়ে
আছি। বলতে পারি না। এখানে সত্য—বলতে
গেলেই—জাগৃতির
আলো—নিভে
নিভে আসে। দ্বীপন মরেছে। মোমবাতি জ্বলে। ফের নিভে যায়। আসলে মুষল—নেই, ঢেঁকি ঘরে—চাঁদোয়া। হা
হা হা। তনু ম'রে
গেল।
মোমবাতি জ্বেলে—ফটিকচাঁদেরা—ধোঁয়া গোল
করে।