বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

কবির কল্লোল



কবির কল্লোল 

জীবনের ড্যাসচিহ্নগুলো


এক দুই ক'রেদুইশ আঠারোসিঁড়ি বেয়ে বেয়েনামি রাস্তায়। হেয়ার ড্রেসার। দুটো মুদিখানা। তিনটে কুকুর। ন্যাঙটো একটাবদ্ধ পাগল। ডানপাশে গলি। গলির মাথায়ফার্মেসি খোলা। সকাল আটটা। ত্রিশ পা এগোলেইত্যাদি মোড়।

এরপর সোজাতীর ছুটে যায়। থেবড়ো রাস্তা
মনে পড়ে- মৃদু—'ইচ্ছের ভুলেহয়নি নাস্তা'
নাস্তায় কভুখিচুড়ি-ঘি আসে। বিষ কি মেশানো?
সন্দেহ করি,—খাই বুক ভ'রে। বুকে ব্যথা করে

বুকের পাঁজরযেন বা ছড়ানোঢাকার গলিতে। মোহাম্মদপুর। বাস্ট্যান্ড থেকেদুচোখ যেদিকে'লে যায়, ভাবিসেইদিকে যাব। পায়ে দড়ি বাঁধা। বাঁধা ছিল আগে। এখন কিছুটাঢিলে হ'য়ে গেছে। টিউশনি আছে। আর তুমি আছো। তুমি মানে রোজবারো গুন আট।

শাহবাগ মোড়। ভি.সি. চত্বর। যেখানেই যাই
একটু দাঁড়াই। পায়চারি করি। ধানক্ষেত নাই!
ধানক্ষেত মানেইঁদুরের দৌড়। সড়সড় সড়
সড়কের মাঝেসাধ হয় দুটোপাতো রুয়ে দিই

ধুত্তুরি ছাই। এইটা একটাকবিতার জাত! ''জাত গেল জাত - গেল, 'লে'' 'লেচেঁচাচ্ছে একঅন্ধ ভিখিরি। তার থালা থেকেটুপটাপ ক'রেঝনঝন ঝনকবিতারা কাঁপে। আমি শীতে কাঁপি। আর কাঁপি যদিশরীষ্ণকালেতাপ বেড়ে যায়।

চলো, রাত হ'লোঘরে ফেরা যাক। এগারোটা বাজে।







রাত এগারোটা। ঘড়ির দু-কাঁটাদেখে মনে হয়বিজয় চিহ্ন। কেন যে তবুওচিরকাল ধ'রেনিজেকে আমারপরাজিত লাগে! কেউ কি জিতেছে? জয়-পরাজয়শব্দের সাথেপরিচয় যারসে কভু জিততেপারে না পারে না। তাহলে কি যারাবধির এবংঅন্ধ কিংবাঅপ্রকৃতস্থতারা জিতে যায়? না না মিয়াভাই, বোনেরা আমার, জয়-পরাজয়জ্ঞান নেই যারসেও তো জিততেপারে না পারে না।

বাসে উঠলেইইদানিং শুধুএইসব ভাবি
ভাবতে ভাবতেসিট পেয়ে গেলেশব্দের চাবি
টুক ক'রে আমিফোন বের ক'রেনোট ক'রে রাখি
এরকম কিছুনোট থেকে আসেতুমুল কবিতা

সুতরাং এইপৃথিবীতে যদিছিটেফোঁটা কিছুরেখে যেতে চাওতবে প্রথমেইবাস্তুজগতেনিজস্ব কিছুজায়গা লাগবে। ওগো ফুল্লরা, তোমার বুকেতেআমাকে একটুজায়গা দেবে গো? ফের শিশু হ'য়েঘুমোতাম তবে। ক্লান্ত লাগছে।

মায়ের পেটেতেকোলে আর বুকেঘুমিয়েছি কতো!
শিশুকালই ভালো। বড় হ'তে হ'তেজেগে ওঠে ক্ষত
পায়ের তলায়, কাঁধের উপরে। কাঁদতে পারি না
নাড়ি কাটা শিশুযখন ইচ্ছেকাঁদতে সে পারে

ঠাস ক'রে ব্যাটাবাস ড্রাইভারব্রেক চেপে দিল। আরেকটু হ'লেজানালাটা গ'লেছিটকে যেতাম। আঙুল কেটেছে। আঙুলটা যদিতোমার দুঠোঁটে'ষে দেয়া যেত! লাল টকটকেলিপ-স্টিক। পৃথিবীকে ফেরমোহময় লাগে।

মনে ভয় জাগেপৃথিবীটা যদিব্রেক চেপে দেয়!








পৃথিবীটা যদিব্রেক চেপে দেয়! দিলোই না হয়। উড়াউড়ি হবে। আকাশে আকাশেউড়নচণ্ডী। তুমিও উড়ছোআমিও উড়ছিট্রাম্পও উড়ছে। মহাশূন্যেরইতিহাসে এ-তোমহামিলনেরকাঙ্ক্ষিত ছবি। এই এক ভালো, মহাদুর্যোগেমানুষে মানুষেবিভেদ থাকে না।

ঘুম ভেঙে যায়। খুব বড়জোরদশটা সেকেন্ড।
তার মানে হ'লোমানুষ চাইলেমুহুর্তকালে
সমাজের জালছিড়ে দিতে পারে। অথবা সতত
স্বপ্নও যদিমৃত্যুর মতোবাস্তব হ'তো!

হতেও তো পারে। তুমি যা ভাবছোতারচে তীব্রভাবছে হয়তোঅন্য মানুষ, তোমাকে নিয়েই। কেবা ভেবেছিলমুদ্রিত হবে—'আলফাবেতুম বেনগালিকুম'? অতএব এসোবিশ্বাস রাখি,—একদিন সবেলেভেল প্লেয়িংফিল্ডে নামবে,—ঝুম বৃষ্টিতে;—সেই সন্ধ্যায়টিএসসিতেইঠোঁটাঠোঁটি হবে। শাড়ি প'রে এসো।

চলো লিখে রাখিফিতে কাটা সুরসন্ধ্যের বোল,
এলোথেলো কিছুবিকেলের প্রেম,—মৃদু খুনসুটি।
মনখারাপেরহলদে পালক,—নিন্দার ত্রুটি
অনুবাদ ক'রেচলো লিখি কিছুঅণু কল্লোল

ছাতা নিয়ে এসো। ভিজলে তোমারঠাণ্ডাতে পায়। কেঁপে কেঁপে ওঠো। তুমি কি পৃথিবী? পৃথিবী কাঁপছে। অমল তোমারকোমরে হঠাৎআঙুল ছোঁয়ালেযেরকমভাবেভিতরে কোথাওশিলাস্তরেরনড়াচড়া বাড়ে, আচমকা কাঁপো; সেরকমভাবেহিরোশিমা আজোকেঁপে কেঁপে ওঠে।

ও ভূমিকম্প,—আর কতকালনন্দঘোষেরপাট ক'রে যাবে?








পৃথিবীতে তবুনন্দঘোষেরাআজো টিকে আছে। যেখানেই বোমামানুষের মাঝেঠাস ক'রে ওঠে, ফাঁস হওয়ারআগেই সেখানেচওড়া কাঁধেরনিরীহ গাধাটাচিহ্নিত হয়। পৃথিবীর সবজজ মিয়ারাইফ্যানে ঝুলে থাকে। টর্চার সেলে

আলো, এতো আলো! আলোতে আমারমাথা ব্যথা করে
শিশুরা যেমনপৃথিবীতে এসেভয়ে তারস্বরে
চিৎকার করে, তবু চোখ থেকেঅশ্রু ঝরে না,
আমিও তেমন,—কী জানি, হয়তোকাঁদা ভুলে গেছি

টাফনিল খাই। আলোটা নিভিয়েশুয়ে পড়ি, তবুঘুম তো আসে না। ভেড়া গুনে দেখি। ভেড়ারা কেন যেএত চঞ্চল!ধাম! খট ক'রেফ্যানটা ক্রমেইকাবু হ'য়ে আসে। নিরানব্বইআটানব্বইসাতানব্বই। ফুল্লরা আছো? মাথাটা একটুবুলিয়ে দেবে গো?

চার সাত আট। অ্যান্ড্রু ওয়েল,—তবু তো হ'লো না।
দূরে, বহুদূরেনিমগাছ তলা। একচালা ঘর
বাতাসের খামেঠান্ডা পাঠায়মাঠের বাগান
ঘুম হাঁস হ'য়েসাঁতরায়ে আসে। সব সুনসান

কুকুর ডাকছে। মাঝরাত্তিরেমানুষ দেখলেমর্দা কুকুরপিছু পিছু হাঁটে। হাঁটতে বেরোই। কুকুর দেখলেগান গেয়ে উঠি। মানুষ দেখলেরোম খাড়া হয়। হিম হিম লাগে। ভয় পেলে আমিফড়িঙের মতোএকলাফ দিয়েশিশুকালে যাই।

বাছুরের মতোডুকরিয়ে উঠিমা, মাগো ওমা








'মা,—আমি ভালো আছি।' বলি আর হাসি। মোবাইল ফোনে। বেগুনের ঝোলেভাজা চ্যাং আরবড়ি ছেড়ে দিলেটগবগ ক'রেশব্দেরা ফোটে। শুধু মার ঠোঁটেহাসিরা ফোটে না। কন্ঠ শুকনো। বলে, 'রে খোকন,—ছুটি কবে তোর?'

এ জীবন থেকেছুটিরা বোধয়ছুটি নিয়ে গেছে।
একছুটে যদিগ্রামে ফেরা যেত! এখানে শহর
ল্যাম্পপোস্ট জ্বেলেপোকার মতনমনুষ্য ধরে।
মা, আমি এখানেপোকা হ'য়ে গেছি; আলো গহ্বরে

পোকা ওড়ে আরতারো বেশি নাকিটাকা ওড়ে। আমিধরতে পারি না। ছ হাজার কোটিউড়ে চ'লে গেল। কলমের জোরে। কলম এখানেহাতেকলমেইঅস্ত্রের চেয়েবেশি বলশালী। খলেরা নায়ক। তেলাপোকা পাখি। আবৃত্তিকারএখানে শিল্পী;—মিডিয়ার মোয়া।

সে-ই আজ বড়কবি, যার আছেসরকারি স্নেহ।
প্রথম পুরুষগালি খায় আরহাততালি খায়
মধ্যম গুলো। কে যে কাকে খায়! কাকের শহর।
খয়ের খাঁয়েরাআপদবক্ষচাটে এঁটো দেহ

মা, আমি করুণমমি হ'য়ে আছি। বলতে পারি না। এখানে সত্যবলতে গেলেইজাগৃতির আলোনিভে নিভে আসে। দ্বীপন মরেছে। মোমবাতি জ্বলে। ফের নিভে যায়। আসলে মুষলনেই, ঢেঁকি ঘরেচাঁদোয়া। হা হা হা। তনু ম'রে গেল।

মোমবাতি জ্বেলেফটিকচাঁদেরাধোঁয়া গোল করে।