গৌরাঙ্গ
শ্রীবাল
অতনু জল
সুদীর্ঘ সময় ধরে
একপাল হরিণের পিছনে পিছনে ছুটে
কখন যে একটি লোক ব্যাধ হয়ে গেছে
বুঝতে পারেনি তা
গা-গতরে আধুনিকতার রক্তমাংসে
বন্য-পাতার আদিম অন্ধকার ঘিরে
আছে
সেই সময়ের প্রাগৈতিহাসিক লুতার
প্যাঁচানো তন্তুজাল।
দল থেকে ছুট হয়ে সোনার হরিণ
ক্লান্ত
ব্যাধের বাকলে ঢাকা আরোহের
নিবারণ ছিঁড়ে খায়,
বের হয়ে আসে তার জেগে ওঠা প্রকট
পৌরুষ এই দৃঢ়তায়
এক ঘাটে জল খায় বাঘ ও কস্তুরী
তার গন্ধ পেয়ে ঘোলা খাঁড়ির অতল
থেকে
কুণ্ডির উপরে ভেসে ওঠে ঘড়িয়াল
নাক তুলে দেখে নেয় অতনু জলের
গভীরতা।
স্মরণ
আমার, তোমর সঙ্গে
যেটুকু তফাত
তুমি চল তার প্রান্ত ধরে
মাঝ বরাবর চলি আমি
এমন বিন্দুতে এসে দুজনের দেখা হয়
মরণের স্বাদ বলে যেখানে থাকে না
কিছু
থাকে শুধু শেষ জল পারানির মোহ।
এই অনুরক্তির আভাস
অথবা মুগ্ধতা খুঁজেছিলাম স্রোতের
বিপরীতে হেঁটে
যে নৌকা চলেছে ভেসে আমাদের
এ হৃদয়দৌর্বল্যের দেশে
যেখানে পৃথিবীর যোনিতে মিশে গেছে
সোহাগী ভাবের নদী
তার তরঙ্গের ব্যবধান গুনে গুনে
দেখা হত
ওপারের গল্প লিখে রাখা এক ঘাটের
উঠোনে
প্রতিদিন মাঝি এসে তোমাকে স্মরণ
করে।
চিত্রকল্প
কবিতা লিখে যে জীবনের ক্রমোন্নতি
হবে না সে কথা
জেনেও তোমাকে আমি
কবিতার চিত্রকল্পে ব্যবহার করি,
সময়ের গর্ভে ঢুকে পড়ে
তোমার অক্ষত সতীচ্ছদের পর্দায়
কবিতা লিখি, এ যেন আমার
কৃষকবৃত্তি।
এই যে কৃষিকাজে দিয়েছি মন
আমার এ মন মন্দিরের মতো,
কঠিন দরজা বাইরে, ভিতরে ধানের
গোলা
আবাদ করেছি তাই এখানে ফলেছে সোনা
তবুও কি তুমি ভাব সাধের এ
জমিখানি আজও
যেমন পতিত ছিল সেরকম থেকে গেল।
বর্ষার ভাষা
কৃষ্ণা আমার আমি কৃষ্ণার-
এই কথা বলে শূন্যের ভিতরে
দাঁড়িয়ে থাকা
একটি ছায়াকে আমি দু-হাত বাড়িয়ে
ধরতে গেলাম
অমনি সে ছায়া পিছিয়ে গেল সাড়ে তিন
হাত।
তারপর মিলিয়ে দিল অন্ধকার
যদিও এমন কোনো কালিন্দী নদীর মতো
আঁধার ছিল না,
তবুও দুর্বোধ্য এক ভ্রম
মনে হয় অধরা মাধুরি তার
হুতাশী চৈত্রের সুরে কথা বলে
সেই এক কথা দূর সে জলের
আর্দ্রতায় ভেসে যায়
ভাষা পায় বর্ষার পাখিরা।
জীবনবৃক্ষ
এখানে গাছের মতো জীবন দাঁড়িয়ে
আছে
মাটিতে পড়েছে তার ছায়া।
একটি ছাতারে পাখি ওইখানে
তার ছানাপোনা নিয়ে এসেছে দানার
খোঁজে,
সংসার পেতেছে যেন দারিদ্র্যসীমার
নীচে
বসবাসকারী এক লোক। যাকে
দেখেছি রোদ্দুরে পেতে রাখা
অসূক্ষ্ম পারার চশমার কাচ থেকে
কাগজে ছড়িয়ে পড়া উত্তপ্ত রশ্মির
কড়া আগুনে ধরাত বিড়ি,
তার নাক মুখ দিয়ে মাথার উপরে উড়ে
যেত ধোঁয়া।
তখন ঘোলাটে তার চোখের দৃষ্টিতে
দেখতে পেত
বুকের ভিতর থেকে প্রাণবায়ু উড়ে
যাচ্ছে ওই গাছের দিকে,
যে
দাঁড়িয়ে রয়েছে তার জীবনের
রূপচিত্রে।
খেয়েদেয়ে পাখিরা বসেছে তার ডালে।