বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়



দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

আত্মহত্যা চিন্তার আগে

১.
মাথা রাখা জানালার ট্রেনে
দেশগ্রাম হারিয়ে হারিয়ে ঘুমে
আর স্বপ্নের কী বিশাল শ্বাস
যেন আপসোস ভাঙছে শরীর
আর থেকে থেকে সাইরেনের
উপর চাকারা ছুটতে থাকে
হঠাৎ রেনি ডে ঘোষণার পর
রাস্তায় বৃষ্টিস্কুল আর রেনবো
মিছিল
মনখারাপের গজল যা গেয়েছিল
ডিপ্রেশন তোমার মাথার সাথে
সেও ঘুমিয়ে আর এখন লাফ
ইচ্ছার হেসে নিচ্ছে নিছক জোকে
মাচো মাচো যুবকের পাশে স্টেশন
মেচেদায়








২.

আগুনের দিকে চেয়ে মাটির উনান
ইচ্ছের রোদ আসে আলাপচারিতায়
কোথায় পুরনো কেরোসিনের গন্ধ
কাচের লণ্ঠনের ভিতর সাদা সলতে
পালক খুলে আলোকপাখি গুলঞ্চ
ফুলের ডালে দোল খেতে থাকে
আর সেলাই হয়ে যায় দৃশ্য ও পাঠ
সাদা কালো টেলিভিশন আসার আগে
রঙিন ছবিগুলি নদীর পাড়ে কাশবন
বাজিয়ে রাখে নীল সামিয়ানার নীচে
সানাইয়ের গন্ধ ছড়িয়ে বিসমিল্লা
রাগ-সহবাসের ভাষা জলের পাথরে
বসে কাগজের নৌকা ভাসিয়ে দেয়
ধুয়ে ধুয়েও বেঁচে থাকো সে অক্ষরের ভালোবাসায়








৩.

বিশাল হাঙরের মুখ নিয়ে হাইওয়ে
ডাক নিশির সন্ধ্যা থেকে রাত্রির পায়
তারা জরির শাড়ি বুনে যেতেই থাকে
তরঙ্গ নিয়ে যে গাড়ি উড়ে যায় আকাশে
তার অবসর নেই চোখের ও হাতের
চুকে যাবে জমানো স্বপ্ন সামান্য ভুলে
তবুও আলেয়ার ডাক হঠাৎ কানে
রাস্তার মাঝখানে পাগলী চাঁদের নগ্নদেহ
কামশাস্ত্রের পাতা খুলে ছড়িয়ে দেয়
উইন্ডোস্ক্রীনে
কালো পিচ মুহূর্তে প্রমোদউদ্যান স্বর্গের
অস্থির সময়ে ভোরের পাখির ডানা
খুলে
দেখে সেখানে যন্ত্রণার তীরে শুধু রক্ত যেন সব তরমুজ একসাথে
ফেটে গড়িয়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই







৪.

ধুতুরার ফুল আর কাঁটাফল নিয়ে রেললাইন
আকন্দের ঝোপের কাছে কার ভিজে রুমাল
বিড়াল না হবার একটা দুঃখ জপে যে বিষ নিল তাকে সে বিষয়ে কেউ
বোঝায় নি
রোদ যে বেশ এল বৃষ্টির পরে আর পাতায় পাতায় জলহীরে শো রুম ছাড়াই শুয়ে
পদ্মগুলিও চোখ মেলল যেন ঘুম ভাঙা অপু
এসব দেখা হয় না দেখতে চাই না বলে
আম গাছের ডাল ডুবে থাকে আজন্মকাল পাশের জলায়
তার গায়ে মাকড়সার জাল পোকাদের আটকে শিল্প করে
আর এই ইটের রাস্তায় মানুষের সাথে হেঁটে যায় কেঁচো ও কেন্ন
নজরকে নজরানা দিলে তুমির জমিদারি








৫.

পৃথিবী  তার পরকীয়ায় বিশতলা ছাদের উপরে
বেশ চোখের আদর করে সারাদুপুর
রাজার ভিতরে লুকিয়ে থাকা প্রাসাদ
একের পর একের পর্দা সরিয়ে দেখে কতদূর সবুজ হারিয়ে গেছে
ইটের দেওয়ালের আড়ালে
রঙ হারিয়ে গেলে মেঘের ভেতর জমা হচ্ছে অঙ্গার ও এসিড
পুড়ে যাচ্ছে প্রতিদিন  তার যন্ত্রনায়
ঈশ্বর
স্বর আর্তের ক্রমশ মিলিয়ে যেতে থাকে
যখন সে তার শরীর ছেড়ে দেয় নতুন উড়তে জানা পাখি যেন
আর পৃথিবীর সমস্ত মোবাইল ক্যামেরা অন করে তাকে তুলে নেয়
এ মৃত্যুই তারিফযোগ্য ভেবে
সেও মাথা ভেঙে কুঁকড়ে যায় থ্যাতলানো রক্তজালিকায়








৬ .

দড়ি আর কলসী নিয়ে দীঘিতে
যাবার সময় তুমি দেখছিলে
টগরের ঝোপ সাদা হয়ে আছে
যেন তোমার ভিতরের কাগজ
পড়বার কেউ নেই আর শংসাপত্র
হাতে তুলে দিলেই হাসির সেলফি
এতো দ্রুত হারিয়ে যায় বলা যায় না
শূন্য কলসীর সেই আওয়াজ
বাজতে বাজতে বাজ ধরে ফেলে
তোমার মৃত মাংসের ভাগ হওয়া অংশ
সেইসব নখের রঙ নীল , দাঁতের হলুদ
জলের গভীরে মাছের পরিবার
শেষ সময়ের জলের প্রবেশ প্রবাহের সাক্ষী
জলজ জীবনের কাছে  এ ঋণ অপরিশোধযোগ্য
তাদের তবুও সে চক্ষুদান করে গেছে







৭.

ধারের তীব্রতায় ব্লেডের সহবাস শিরায়
ধারা রক্তের জন্ম দিলে এই বিশৃঙ্খল শয্যায়
হাজার পাণ্ডুলিপি কবিতার অপ্রকাশিত দীর্ঘশ্বাস
ভালোবাসা হারিয়ে উড়ে পড়ে আছে সারা ঘর
অক্ষরের সেইসব লিপিতে তার ব্যর্থ সঙ্গমের চিহ্ন
অন্ধকারের বোতাম খুলে সে যে
জলছবি পেয়েছিল
সেইসব অপ্রকাশিত কথা হলুদ পাতা হয়ে আশ্রয় নিয়েছে জলেই
মাছের পেটের ভিতর হয়তো সে
অক্ষরের লন্ঠন জ্বলে উঠলে
সে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে
এখন তার চোখ মিলে গেছে তা দেওয়া পাখিদের চোখে
তার কানে শেষে বেজে ওঠা হংসধ্বনিরাগ ঝিনুকের খোঁজে
চলে গেছে হঠাৎই মহাসাগরের দিকে