রণজিৎ মাইতি
হয়না রহস্য ভেদ
ছায়ার ভেতর নেচে ওঠে অবাক
পৃথিবী!
নেমে আসে ঝোরা ঢাল বেয়ে;
সে ছায়াকে মানুষ কি আজও
চিনতে পেরেছে?
বরং সূর্য যতোই ঢলে পড়ে
পশ্চিম দিগন্তে ততোই দীর্ঘ হয় ছায়া?
গোধূলির ম্লান রোদে
তুর্কি নাচন নাচি কঠিন প্রশ্নে;
মানুষ কি সঙ্গম চায় নাকি
সঙ্গমের শেষে আবেশিত ঘুম?
যদিও তখন বরফ শীতল দেহে
হিমশৈল ভাসে
কে দেবে জবাব ?
তীব্র শৈত্যপ্রবাহ নামে
শিরদাঁড়া বেয়ে ঝর্ণার মতোই;
ঠকঠক কাঁপে হাঁটু জ্বরে;গা শিরশির!
তবু ছায়া ছুঁয়ে ফিরে আসি
সেই ছায়াপথে;
কক্ষপথে ঘাম দিয়ে নেমে
গেছে জ্বর।
মোহনার দিকে নদী যতোই
এগোয় কদম কদম,
ততোই প্রশস্ত হয় চির চেনা
তমসা নদীটি।
নক্ষত্রের দিকে চেয়ে ঋদ্ধ
হতে হতে
একদিন রত্নাকরও হয়ে যান
নিছক বাল্মীকি;
হায়,হয়না রহস্য ভেদ সহজ প্রশ্নের !
অথচ আমি তুমি সঙ্গমেই
ডুবি;
উফঃ আমরা সঙ্গমেই মরি !
আজও ঘাই মারে
এ নদীর বুকে তবু ঘাই মারে
মাছ
বয়স সংখ্যা মাত্র,রোমিও অমর
জুলিয়েট জেগে থাকে,রাতও বিনিদ্র
পবিত্র প্রেমের কাছে
স্বর্গ নেমে আসে
মন্দাকিনী বয়ে যায়
মন্দাক্রান্তা তালে
দোদুল দোলায় দুলি,রূপমুগ্ধ হই
শিখে নিই সেই মন্ত্র,জীবনের কাছে
সবুজ অনন্তে মেশে,অনন্ত সবুজে
আশৈশব চেনা নদী,নাম কেলেঘাই
সাকিন খুবই কাছে,ছলছল জল
কলকল শব্দে বয়,করে খলখল
হারিয়ে গিয়েছি রূপে সেই
কোন কালে
ভুলতে চেয়েও আজ পারিনি
ভুলতে
উন্মত্ত নদীর বুকে প্রদীপ
জ্বালাই
নিরাভরণ
তোমার যাত্রাপথে কে
রেখেছে একগাছা চুড়ি ?
তেমন রসিক আমি নই
বরং বারবার নিরাভরণ রূপে
মুগ্ধ হই
তুমি নারী,তুমিই কৌশিকী
ঝড়কে প্রশ্ন করো---
আভরণ ভালোবাসে কিনা,অথবা বৃষ্টিকে
আগুনের লেলিহান শিখা,ক্ষুধা এক কালজয়ী ধ্রুপদী সঙ্গীত
অস্তিত্ব সংকটে আছে যারা,ভয় ফতুরের
তাদেরই শোনাতে চাই
পালাগান 'ষষ্ঠী মঙ্গল'
আমি নিরাভরণ রূপে মুগ্ধ,মুক্তকন্ঠে বলে যাই
যতো খুশি গালি দাও 'শালা'
তলিয়ে দেখিনি
কখন তলিয়ে গেছি তলিয়ে
দেখিনি
জলও কি জানে কখন নিয়েছি
আশ্রয় জলের গভীরে ?
জলের উপরিতল থেকে তলদেশে,এটুকুই মনে হয় অনন্ত বিস্তার
বিন্যাস কখনও কি
একমাত্রিক হয় ?
যেখানে পথ আর মত দুইই
আলাদা
তবুও,সামগ্রিক ঢেউয়ে নেচে উঠি
যেন ঢেউয়ের উৎসব আর
তলদেশে এলোমেলো স্রোত
এলোমেলো হাওয়া এসে
উথালপাথাল করে মন
ভেসে যাই খড়কুটোর মতো
গৃহী আমি,ছাপোষা নিরীহ---
জনগনেশের ভিড়ে ভিড়ে যাই
বলি মনে মনে----
না না,আমায় ফতুর করো না জল
আমায় ফকির করো না
এই দেহে আজও মানুষের রক্ত
বয়ে যায়
আগুন
আগুন দেখলেই ভেতরের
আনন্দটা কাউকেই বোঝাতে পারিনা,
কুলকুল শব্দে বয়ে যায়
ফল্গু স্রোত।
শৈশবে রান্নাঘরে ধোঁয়ার
হদিস পেলেই মায়ের পেছনে ঘুরঘুর করতাম,
জানি দুধের সর আমার জন্যে
অপেক্ষা করছে।
সেই বয়সেই মন থেকে চাইতাম,---
রতনের(আমার আশৈশব খেলার
সাথী)বাড়িতেও একটু আগুন জ্বলুক;
ওর ডিগডিগে চেহারার বুঝে
যেতাম কতদিন ওদের বাড়িতে উনুন জ্বলেনি।
মা ঘুঁটের উপর ছাই
দিয়ে---
একটু কেরোসিন ঢেলে আগুন
ধরিয়ে দিতেন উনুনে,
আনন্দে ভেসে যেতাম,সুকসুক করতো নোলা।
দেখতাম টগবগ করে ফুটছে
ভাতের হাঁড়ি,চারপাশে ছিটকে ছিটকে
পড়েছে দুধসাদা ফুল।
সারা বাড়ি মিষ্টি গন্ধে
মো মো করতো,
আর ভেতরে ভেতরে শুরু হয়ে
যেতো তোলপাড়।
কল্পনায় দেখতে পেতাম---
মা ভাতের থালার সামনে বসে
মাখিয়ে খাইয়ে দিচ্ছেন।
তখন বাড়ির মো মো গন্ধটাই
মা মা গন্ধ মনে হতো।
আজও আগুন দেখলে আনন্দ হয়,
তবে ভাবনার আঙ্গিকে অনেক
বদল হয়েছে।
যেমন আমি এখনও সর্বভূক,তেমনই আগুনের আছে সর্বগ্রাসী ক্ষুধা;
পুড়িয়ে ছাই করে দেয় সমস্ত
অচলায়তন চোখের নিমেষে।
তাই বারবার বলি,---
হে আগুন আমাকে পোড়াও,
ছাই করে দাও আমার সমস্ত
কলুষ।
পোড়াও দাউ দাউ করে,আমিও যে হতে চাই তপ্ত কাঞ্চন।