শোভন
মণ্ডল
শেষ উপহার
তোমার চোখে মুখে আর আনন্দ ধরে না
খুশিতে ডগমগ করছো
যে ছেলেটাকে দেখার পর থেকে মনে
মনে আগুন জ্বেলেছিলে
মন্দিরে মন্দিরে মানত করেছিলে
রাত ভোর স্বপ্ন দেখেছিলে
সে তোমাকে আজ.... তোমার কথা মতো
আজই
স্বীকার করেছে
এই সুসংবাদ শোনাতে তুমি এসেছো
সেই পুরনো রাস্তা,
পুরনো বাঁক,
চেনা কেবিন
সেই তো লাল শাড়ি, লাল টিপ
চেনা গন্ধ, মাতোয়ারা
চলে যাওয়ার আগে দিয়ে গেলে উপহার
পুরনো চিঠি
একতাড়া...
অন্য ঋতু
কে যেন ডাকনাম টাঙিয়ে দিয়েছে
গাছেদের গায়ে
সাপের খোলসে জুড়িয়ে যায় মেঘ
চেনা বারান্দায় মেলা আছে
জাফরি-ছায়া
সেখানে দোল খায় একলা চেয়ার
ঝরাপাতা হারিয়ে যাচ্ছে বলে কেউ
কেউ
আলগা করছে পিছুটান, তুমি তো জানো
পুরনো মুদ্রা আর নতুন পরবে গা
ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে যৌন-দাগ
সে সব কুড়তে গিয়ে নেমে আসে জ্বর
নরম শরীরে খেলা করে উষ্ণতা, পরিতৃপ্ত-
কাঠবেড়ালির মতো
প্রজননের ঋতু শেষ হলে আকাশ আবার
ফরসা হয়ে আসে
অন্য প্রেম
পশুর সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি
পাহাড়ের চূড়ায়
মাথার সামনে এই দ্যাখো সুউচ্চ
খড়্গ
অহংকারে নাড়িয়ে নিচ্ছি নিরেট
মাথা
চোখের ভেতর জ্বলে উঠছে বিভৎস
আগুনের লেলিহান শিখা
ধুমসো কালো শরীর থেকে ঠিকরে
বেরচ্ছে অসভ্যতার অন্ধকার
গর্জন করছি,
যাকে বলে পশুনাদ
তুমি কি শুনতে পারছো সেই সব শব্দ?
অনুভব করছো অজানা রোমাঞ্চ?
তুমি তো জেনে গেছো
কীভাবে বুক পেতে নিতে হয় প্রেমের
হিংস্রতা
সব অঙ্ক মিলবেনা
সারা শরীর জুড়ে আছে সমুদ্রের
ফেনা
সে তুমি যতই ধুয়ে ফেলো গোপন
শাওয়ারে
আঁশের জলছবি জেগে থাকে গভীর
রন্ধ্রে
তোমাকে এভাবেই দেখেছি,
বিশ্বাস করো
আলেয়ার মায়াকণা মিলিয়েছে চোখের
ভেতর
যেটুকু অলক্ষ্যে ঘিরে ধরে তা তো
শুধু নিরন্তর না-পাওয়া
জানি,
জানি, একদিন সব অঙ্ক মিলবেনা
সব আলো জ্বলবেনা চেনা ভাস্বরে
তবুও অদেখার রেশটুকু রেখে
নিশ্চিত
পার্কের কোন এক বেঞ্চিতে ফেলে
যাবে
তোমারই বিবর্ণ নোনতা রুমাল
হাসপাতালে জন্মানো
কবিতা
তারপর দরজা ফাঁক হলো
ওরা তোমাকে নিয়ে গেল স্ট্রেচারে
তোমার জ্ঞান ছিলনা, শুধু প্রাণ
ছিল
তাও অস্পষ্ট
ওদিকে তাকিয়ে আমি স্থির হয়ে আছি
চোখে প্রবল আকুতি
ভগবানের কাছে কী আর প্রার্থনা
করতে পারি!
শুধু মনে মনে বলেছি
ওই যে স্টেথোস্কোপ গলায় ঝুলিয়ে
যে মানুষটা
এইমাত্র ঢুকে গেলেন অপারেশন
থিয়েটারের ভেতর
এইটুকু সময়ের জন্য উনি যেন ঈশ্বর
হয়ে ওঠেন !