মিনতি
ঘোষ
অতীত সোনালী দিন
হঠাৎ চকিতে কোন কোন দিন
স্বপ্নের ভিতরে থাকা সেইসব
সোনালী দিন
থেকে থেকে কেন দোলা দিয়ে যায় !
অতীতের সেই সব গানের কলিরা
মনের আকাশ পথে সুর তুলে যায়….
সুর তুলে যায় মাঝেমাঝে সমস্ত দিন
!
সেই সব বসন্ত দিন -
রোদ,
বৃষ্টি, মেঘ কারণ অকারণ
ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেছে প্রতি দন্ড
প্রতি পল..
নিয়ত শিমূল পলাশে সেজেছে জীবন !
সেই কবে.. কতকাল আগে
তোমাদের সাথে দৃ্ঢ় পায়ে হেঁটে
যেতে যেতে
হেঁটে যেতে যেতে বারবার…
গেয়েছি কত শত শত জীবনের গান…
“মুক্ত
জনগণ ভরিয়ে দেবে পৃথিবীতে
মুক্ত বাতাস….
সেখানে নারীরা থাকবে জুড়ে
পৃথিবীর অর্ধেক আকাশ….. “
এখন এই উচ্চকিত আলো,
বহুমূল্য পণ্য সম্ভার –
এই পরগাছা জীবন যাপন
অনিকেত নিকেতন সন্ধান
দূর বহু দূরে নির্বাসনে আমি আজ …
তোমরাও চাণক্যের ইশারায় ছেড়ে
গেছো রণ-ভূমি –
মাথা হেঁট করে গড্ডালিকা প্রবাহে
ভেসে গেছো..
আজ আর স্বপ্নে হাসেনা আমাদের সেই
সোনালী সকাল…
রাত্রি গভীরে শুনি হায়না, শকুনির তান…
শুধু বারবার দিগন্ত পথে উঁকি
দিয়ে যায় -
প্রলাপের মতো সেইদিন যে কথা
বলেছো বন্ধু
“
হাতে হাত রেখে পার হবো এই
বিষের বিষাদ সিন্ধু ! “
সে সিন্ধু আরো বিস্তৃত আজ, পার হওয়া
আর হয়নি আমার,
স্থবিরতা মেঘ ঘিরেছে আমায় নিশিদিন !!
ছবি …..
বড় হলঘর -
ছবি,
মানুষের ছবি - মানুষে, মানুষে ছয়লাপ !
শিল্পি সুধন্য,
গায়ক সুবাস
অভিনেতাও আছে,
আরো কিছু অপলাপ।
মানুষ... মানুষের ছবিই বিষয়...
দেওয়াল জোড়া যে ছবি নজর কেড়েছে
তা এক বালিকার...
হাসিতে উদ্ভাসিত মুখ,
বঙ্কিম স্থির
এলোমেলো ছেঁড়া চুলে
রং হারা জীর্ণ পোষাক....
কাঁখে ছোট ভাই
মুখে তার কাঠি আইসক্রিম...
গায়ক শিল্পির পিঠ চাপড়ে বললেন
'
বহুদিন পর কলমে নতুন লিরিক এনে দিলে.. '
অভিনেতা পরিচালক ধরে এনে
ছবিটি দেখালে ' আগামীতে এমনই
বিষয়ে
সিনেমা বা নতুন নাটক আনা চাই... '
নেতাও এগিয়ে আসে ' সুন্দর ছবি -
কান্না নেই
খাদ্যও মুখে আছে.... আশা ব্যাঞ্জক.... '
অসরকারী লোকটি লেখককে পাশে ডেকে
নেয়
'
কোথায় পেলেন মালটা? কালই একটা এনজিও
খুলে নিতে চাই। '
এদিকে হলের বাইরে সাদা সিঁড়িতে
সেই হাসি মেয়ে
কোলে ভাই,
সেই একই বঙ্কিম ঠাঁই
-
ডিঙি মেরে দেখে কখন আসবে সে -
যে সেদিন হাসি মুখের ছবি তুলবে
বলে
আইসক্রিম দিয়েছিলো !
আজ সে হাসবে আরো বড়ো করে
ভাইকেও হাসাবে ...
আজ তার ই... য়াঃ বড়ো এগরোল চাই
!!
শব্দের লুকোচুরি
শব্দরা মাঝে মাঝেই মনের ভিতরে
লুকোচুরি খেলে…
মাঝে মাঝে ওরা হাত ধরাধরি করে
সারিবদ্ধ দাঁড়ায়..
তখনই রাঁধা-বাড়া, ঝাড়-পোঁছ, অসুখ-বিসুখ
লোক-লোকিতা…
ওরা টু… বলেই কোথায়
লুকোয়,
হা হতোস্মি… কেন যে এমন
হয় !
সময়ের সাথে সাথে মস্তিষ্কের
কোষাধার
বন্ধ করে একে একে দরওয়াজা তার..
এইসব শব্দরা টোকা দেয় এখানে
সেখানে
প্রবেশ নিষেধ দেখে পালায় কোথায়!
আমিও সময় পেলেই সে গহীন আঁধারে
উঁকি দিই বারেবার - যদি কেউ সাড়া
দেয়,
যদি কেউ দিক ভুলে পড়ে থাকে পথে..
পেলেই বন্দী করে বেঁধে ফেলি
কঠিন নিগড়ে !!
তখন শব্দরা হেসে খিলখিল
আমার বিছানো চাদরে
জমে ওঠে তাদের মহফিল !!
হিরোশিমা
...নাগাসাকি..
সেই দুটি দিন প্রতি বছর আসে
জয়ের মালা পরতে গিয়ে
লাখো লাখো প্রাণের হিসাব
কে আর বলো রাখে …
সেই দুটি দিন প্রতি বছর আসে
আকাশ জুড়ে দানোর হানায়
সভ্যতা যে কাঁপে
আইনস্টাইনের মেধা কাঁদে
আফসোসে, আফসোসে ...
শেষের শুরু…
কোথা যাও দূরান্তে ?
মেঘ ঘেঁটে ঘেঁটে স্মৃতিরা বানায়
বাসা
পৃথিবীর অন্দর মহলে
চুপিচুপি !
এখোনো শেষ বলে কিছু পায়নি অদিতি
।
শেষ বলে কিছু থাকেনা পড়ে
চলা পথ, গুহা, কন্দরে !…
শুধু কিছু প্রেরণার পাখি শস্য মুখে তুলে
জানলার পাশে বসে থাকে -
তুমি সেই শস্য নাও, নাও বীজ ধান
সময়ের বারি সিঞ্চনে, কালের
উষ্ণতায়
তোমার বন্ধ্যা জমি সহসা হয়ে যাক
প্রজননভূমি এক - এক বিশাল আগামী !
প্রাচীন সুবিশাল বট ভূমিতে
মিলালে
তার শিকড়ের শিরায় শিরায় বসে থাকে
আগামীর সহস্র আগামী !