বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

নৈরিৎ ইমু



নৈরিৎ ইমু

বোধগম্য

সাঁইবাবলার ছায়ায় তোমাকে মনে পড়ে। মাটি ফুঁড়ে অঙ্কুরোদগমের রক্তঘ্রাণের ভেতর সবুজ জন্মকালের স্মৃতি ঢেলে দিয়ে, যখন ব্যথিত শিখা নগ্ন আগুনে  পুড়িয়েছে বাতাসে ভাসতে থাকা ফুলের রেণু, চিরন্তনতার দিকে শূন্য পানপাত্রটির অসহায়ত্বের মাঝে তোমাকে মনে পড়ে। কোথাও ক্রন্দন তুমুল জলপ্রপাতের শব্দ তোলেপাথর ঝড়ের শেষে নিস্তব্ধতার ভেতর বিক্ষত দেহটাকে জড়িয়ে ধরার কালে, সুরের শিখর ঘুরে মগজে মধুগ্রন্থি ছিঁড়ে চূর্ণ চাঁদের গুঁড়োর মতো ছড়িয়ে দিয়ে আলো, তোমাকে মনে পড়ে। যেনো পশ্চিম আরও ঝুঁকে গেছে হৃদকোটরের টানে, অঙ্গাবতারের খেলায় মেঘের মিনার ভেঙে সিক্ত হবার পরে বন্ধ দু'চোখ মেলে, মাতাল কপাটের ওপারে হলুদ আঁচলের হাহাকারে ফুরিয়ে যাওয়া বেলায় তোমাকে মনে পড়ে। মিথ্যে ও গরাদের ফাঁকি থেকে ছুটে যাওয়া কবিতার মর্মরে শুকনো চিঠির ভাঁজে অস্পষ্ট হয়ে আসা কথা আর হিমের অক্ষরে হারিয়ে ফেলা সমস্ত ঠিকানার শেষে বেওয়ারিশ হয়ে পথে পথে পাগলের বেশে তোমাকে মনে পড়ে।







মুখচ্ছবি

প্রতিবিম্বটির দিকে তাকাও, আয়নায়
দেখো, কী গভীর সে
মনোনিবেশের জন্যখাপ খোলা
তলোয়ার যেনো চমক তুলেছে

দূরে আস্তাবল, শূন্য
কুচি কুচি কাটা খড়
ভাবো, তেজোদ্দীপনার কথা
যা ছিলো, নেই দ্বারা তা'ই উন্মোচন করো

সদ্য হেসেছে কুঁড়ি
তৃণ ও বৃষ্টির মাঝে
গন্ধ নাও, যেটুকু চিত্তপ্রবৃত্তি
আটসাঁট গেরো তার, খুলে দাও

পাতাগুলো মেলে দিলো চোখ
দ্বন্দ ভাঙালো উদ্ভিদ
নিখাদ জেগেছে এই পরব, সেও ধ্যান
অবসান, তাও লাবণ্যপাথর এক

তবু দেখো, কতো সে গভীর
ভ্রম আর মায়া ভেবে হয় না খনন!







আগল

এমন স্বরান্ত শুধু বাতাসের শেষে পাওয়া গেলো, মৃত্যুর কাছাকাছি কেবল স্ত্রী শালিকের ঘোর। এমন রাগিণী কোথাও'বা মন্দাকিনীর মতো বয়! তবু এই ভির্মির থরে থরে রিড হলো বৃষ্টির ছাট। যেনো মখমল কোন ফুলের শরীরজহুরির চোখ দিয়ে দেখা! তার রেশ নিয়ে নির্ঘুম, অনাহারী থাকাও তো শোক। সকল হেনস্থার দিকে সামান্য কাঁপন দেখালো সবুজ শৈবাল! সকল হেঁয়ালির দিকে ফিঙের লেজ চেরা কৃষ্ণকাল!

ধর্মগ্রন্থের মতো বুকের মধ্যে মানুষকে আগলে ধরে দেখো একটিবার







বেঁচে থাকা সুন্দরতম

মনে পাতার ধারণা গাঢ় হলে কেমন প্রশান্তি আসে দেখো, হৃদয়ে হালকা জলের ঢেউ জাগাতে পারো, সেই সিক্ত অঞ্চলের নরম কাদামাটিকে যে কোন আকার দেওয়া যায়। ধরো প্রতিমা বানালে, অথবা বিলুপ্তপ্রায় পাখির গড়ন দিয়ে শুকালে তপ্ত শ্বাসে৷ থরে থরে সাজানো মেঘের মতো নিরেট ও স্থির সৌন্দর্য ভাসানো চোখের ভেতর দিয়ে তাকাও, অসীম নীলের মাঝে দ্বীপের ধোঁয়াশা ঘেরা বনাঞ্চল, টের পাবে জীবনের সোর। কোথাও পদচিহ্নের দেখা নাই, এমন সমুদ্রতটে নির্জনে বাড়ন্ত কোন গাছের ছায়াসম ঘুম হতে জেগে, আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলোবেঁচে থাকা সুন্দরতম। কবেই ডুবে যাওয়া জাহাজের নোঙর হয়েও কামড়ে ধরতে শিখো, এই ভূমিমাতৃত্ব।








আত্মাকুসুম

এই মায়াঘোরে বিকট হা থেকে ছিটকে গিয়েছি, অপহৃত ফুল হতে দূরে কোন কাঁটাবনে নথের কাঁপন এসে নিভে গেছে শুষ্ক পাতার কাছে। ক্ষতের চিহ্ন নিয়ে ঔষধি লতার বাড়ন্ত ছায়ায় ডুবি, হৈম ও নগ্ন শরীরের ভাঁজে জেগে উঠে পরাহ্ণের পোড়া লতাগুল্মের ঘ্রাণ। পানসির দোলা যেনো মনের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে যেতে চায়, অনুজ্জ্বল ঘরদোরগুলো পথের দিকে খুলে রাখে বুক। আঁচল সরালেই কোন কাজল কৌটার কারুকাজ চোখে ভাসে, দোয়াতের কালি লেগে যার কিছুটা ক্ষুণ্ণ হলো! দূর্বাঘাসের দেশে খসা পালকের মতো বিছিয়ে রয়েছি, কীটের খোলস ভাঙা গুঁড়োয় মাখিয়ে হাওয়ার পূর্ণস্বরে ফুলে উঠি একেকবার!

বিকট হা থেকে ছিটকে দীর্ঘ সাঁকোর মতো বেঁকে কোথাও চাঁপাগন্ধের মৌসুমে বিলিয়ে দিয়েছি আত্মাকুসুম।