রনি অধিকারী
নোঙর পড়েছে ভোরে
বেদনার বালুচরে ফেলে আসা দিনগুলি যদি
নিঝুম মায়াবী রাতে শূন্যমনে দুঃস্থদেহ নিয়ে
একাকী সাঁতার কাটি ত’বে
হোক কৃষ্ণপক্ষ রাত!
বুকের গভীরে সব কষ্টগুলো ডানা ঝাঁপটায়...
নিঃশব্দ শোকের ঘ্রাণ সৌরভ বদলে তুলে আনি
জীবন পঞ্জিকা থেকে খুঁজি জোনাকির নিরবধি।
নিষিদ্ধ পাতার ছায়া ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় অহর্নিশ...
একবার ছুঁয়েছিলো বহুগামী মেঘের শরীর
শরীরের ভাঁজ খুলে চলে যায় অজানা দিগন্তে।
মাথার ভিতরে চোখ আলোর ফুলকি বেয়ে চলে...
গুচ্ছ গুচ্ছ অন্ধকারে বৃষ্টিতে বিলীন হ’বে সব।
লুকিয়ে পড়েছে আলো ঢেকে যাচ্ছে গভীর কুয়াশা...
ছিঁড়ে যাচ্ছে সতীচ্ছেদ অন্ধকার অক্টোপাসে যতো।
নোঙর পড়েছে ভোরে এবার গহীন নিরুদ্দেশে...
উড়ে যাবে বৃক্ষ-লতা,
নদী-হ্রদ সব সব সব।
স্বপ্ন ভাঙা পদাবলি
কর্কশ পেরেক বুকে ঠুকে যন্ত্রণায় কাতর হৃদয়
অগ্নিদগ্ধ পোড়া ঘ্রাণ জীবনের রঙ বদলায়।
হৃদয়ের কাছাকাছি নেমে পড়ে বাইরে ফাগুন
জলের সংসার থেকে নিভে যায় বাতাসে আগুন।
মায়াবী করুণা ক্রমাগত বেড়ে ওঠে মিথ্যের মহলে
অনাদর অভিমানে বরফ নদীতে আলো জ্বলে।
নদী ভাঙে নদী থেকে মেঘ ভাঙে দূর নীলিমায়
স্বপ্ন ভাঙে চোখ থেকে অন্য চোখে নষ্ট জোছনায়।
শূন্য থেকে শূন্যতায়
সমস্ত শরীরে প্রার্থনার পরশ পেয়ে
রাতকানা রাজহাঁসগুলো
ছুঁয়েছে নিরন্তর স্তব্ধতাকে।
জ্যোৎস্নার আড়ালে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে হাসতো
কপোতাক্ষ জলের শান্ত সেই মেয়ে। এখন সে
স্বপ্নের বুকে মাথা রেখে কান পেতে শোনে
অন্ধকারে বৃষ্টির শব্দ...
স্বপ্নীল মায়ার অবাধ চোখের সেই মেয়ে
চেতনার চূড়ায় লাজুক নূপুর পায়ে,
নিবিড় জ্যোৎস্নার ভেতর হেঁটেছিলো
শূন্য থেকে শূন্যতায় ভেসে।
এই নিষিদ্ধ নগরী ছেড়ে ০১
আমি শুধু জানি গন্তব্যে আসল পরিচয়- আমার বেঁচে থাকা এই
নিষিদ্ধ নগরী।
রক্তে-অশ্রুতে মাখামাখি এক রহস্যে নরক। কোন চুলোতে যাবো
বলো!
একটা বিহ্বল বিন্দুতে যদি দাঁড়িয়ে থাকি অবিচল দারুচিনি
গাছের মতো
কিংবা কম্পাসবিহীন সাম্পানের ন্যায় আমি দিগন্ত দিশেহারা।
পাগল প্রায়!
সর্বোপরি হতভাগা ঈশ্বরের সহযাত্রী আমি! আমাকে নিয়ে যাবে
কোনো অচেনা নগরীতে!
অথবা,
কোনো গহীন অরণ্যে!একমুঠো স্বস্তির স্নিগ্ধতা আমি তুলে রাখাবো মানিব্যাগে।
শরীরের জ্যামিতি ভাঙার জন্য তুমি আমাকে নিয়ে যাবে গ্রীক
রমণীর দেশে!
উষ্ণ শরীর থেকে আমি গড়িয়ে দেবো তরল পারদ, শরীরের ভাঁজ
খোলার জন্য
আঙুলের ম্যাজিক তুমি শিখিয়ে দেবে, আমি মধুর
ভান্ডার থেকে তখন আকণ্ঠ তুলে নেবো
অমৃতের স্বাদ।
নারীর নাম নদী
এই পথ মিশে যায় নদী জল অথৈ সমুদ্দুর
সূর্যালোকে জলস্তম্ভ যেন এক পাহাড় প্রাচীর।
প্রশ্নের শাসন ভাঙে অতঃপর ছুটে চলে ভয়
তবু ভয়ে বুক কাঁপে কেন যেন মানে না শাসন।
সব কিছু মনে হয় পড়ে আছে অজ্ঞাত আড়ালে
অচেনা বাতাস ছোঁয় সাঁই সাঁই শরীরের ভাঁজ...
মায়াবী চোখের জলে জন্ম নেয় অপলক নদী
জলকষ্ট জলমেয়ে আহারে নারীর নাম নদী।
জীবন যেখানে যেমন
অভিনয়ের আড়ালে ঢাকা এ আমার বন্দী জীবন এক
আসলে আমি কোথাও যেতে পারি না- করতে পারি না কিছুই
হাত-পা শেকলে বাঁধা-ভাব করি যেন এক মুক্ত বিহঙ্গ
এমন ফুরফুরে মেজাজে হাঁটি-যেন কোন শেকল নেই পায়ে
দু’চোখ
থেকেও আমি অন্ধ-দেখি না কিছুই
এমনভাবে চোখের পলক ফেলি, সবাই ভাবে দেখছি সবই
আমি কিছুই বলতে পারিনা-যা কিছুই উচ্চারণ করি
তার সবই শেখানো বুলি- যাত্রাপালার অভিনয়ের মতো
আসলে কোন বাক্য রচনা করবার ক্ষমতাই নেই আমার
অভিনয়ে বড় বেশি পাকা আমি- একটা লাশ হয়ে হেঁটে বেড়াই
বোঝে না কেউই-চিমটি কেটে দেখে না কেউ
বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি
আমি দুঃখ পাই না- কোন সুখানুভূতিও নেই আমার
কেননা মরা লাশের বন্দী জীবন আমার
শুধুই ঘুরপাক খাই সাড়ে তিন হাত বন্দী পরিখায়
প্রেমের অভিসম্পাত
প্রেমের অভিসম্পাতে আজ ফালাফালা হয়ে আছি...
প্রিয়মুখে হাসিমুখ খুঁজে নেবো শেষতম ছুতো
আঘাতের বদলে আঘাত চিহ্নের বদলে নেবো ক্ষত।
প্রেমের অভিসম্পাতে টুকরো টুকরো হয়ে আছি...
অভিশাপের ঐ সূত্র ধরে যতো মন্ত্র-তন্ত্র-শাস্ত্র জানি
তোমরা জানো না বুঝি বদলে নিয়েছি দৈববাণী!
মায়াবী সময়ে ডেকে আনো আজি গুপ্ত খুনিদের
ক্রমশ প্রকাশ্যে খুলে যাবে নিবিড় চুম্বন রত
দগ্ধ-দুপুরে একান্ত ভাবি হে মানবী তুমি কী সম্মত!
নিজেকে ভেঙে ভেঙে চলা
নিখোঁজ হয়েছে আত্মা এবং ক্লান্ত দিনগুলি
আমরা যে দিন আগুনের নদী হয়ে সবটুকু-
পুড়েছি,
ভিজেছি অনাবিল স্নাত-রৌদ্রে।
এতো পুড়ে পুড়ে এতো ভিজে ভিজে
কীবা থাকে লাভ! কীবা আছে স্বাদ!
এভাবে নিজেকে ক্রমাগত ভেঙে ভেঙে।
ভাঙন-দহন
শিশিরে ভিজেছে বোধ নিরুত্তাপ জল
আবেগে জেগেছে চর বুকেতে অনল।
পাপ-তাপ মুছে যাক মিথ্যের মোড়ক
বোধের পাপড়িগুলো পুড়ুক কোরক।
আমূল বদলে নিয়ে জীবন-যাপন
আকাঙ্ক্ষার সিঁড়ি পথে ভাঙন-দহন।