প্রসূন
বন্দ্যোপাধ্যায়
আলোচনা
মিছিলে হেঁটে এসে মন চায়ের দোকান
খোঁজে।
মনের এখন আলোচনার সময়।
ভুল না ঠিক,
ঠিক না তরল-
কড়া চা-এ আঙুলে লাগে পিঁপড়ের
লাশ।
পিঁপড়ে আর পিপলস একই রকম-
সারিবদ্ধ।
সারিবদ্ধ মুঠোয় অচল নোট।
সারিবদ্ধ হাত তবু ভিক্ষায়।
সারিবদ্ধ নিমগ্ন তথাগত ভাবে শাসক
নীচে তাকায়,
মাঝে পড়ে আটকে যায় সাংসদ মেঘ।
মাঝে মাঝে চমকায় বাজ,
মিছিলে এসে পড়ে ধাতব কয়েন।
ভিজে যায় সবাই।
অথচ,এখন নিয়মিত
এক কাপ চা-এ রৌদ্র-যাপন চাই।
নবজাতক থাক দরিদ্র মায়ের কোলে।
পাচারের বাক্সে আসুক গুঁড়ো দুধের
স্বপ্ন।
একটু নরম শীত হোক আলোচ্য-বিষয়।
পরমপিতা
ঈশ্বর বিছানা থেকে নামলেন,
খাটের নীচে তার অজস্র সন্তান।
তাদের কেউ কেঁদে উঠল,
কেউ 'হে পিতা' বলে ফের এক
স্বপ্নে দিল ডুব।
ঈশ্বর কোনো রকমে পোষাকটা সামলে
বাথরুমে চলে গেলেন।
তারপর ধর্মগ্রন্থের খসড়া হাতেই
ঘুমিয়ে পড়লেন লাইব্রেরি রুমে।
বিছানায় পড়ে রইল নগ্ন
মিলনক্লান্ত নারী,
তার শরীরে খেলছে আরেক শরীর।
স্বর্গের জাতকরা চিরকাল বহিস্কৃত
হয়।
মর্তে এসে তাদের ঘোষনা করতে হয়,
পিতাই শ্রেষ্ট।
ঈশ্বরের খসরা পাঠ করতে থাকে
সেইসব শিশু
যারা একদিন মায়ের শীৎকার শুনে
জেগে উঠেছিল,
আর ঈশ্বর তাদের উপহার দিয়েছিলেন
স্বপ্ন দেখার খেলনা অসুখ।
তারা কখনোই জানতে পারেনা,
পরমপিতা রয়েছেন সৃষ্টিসুখে।
অলীক
ঘুমের অলীক সম্প্রসারিত হয়
দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যু সংবাদ..
নোটবুকে লেখা হয়, রাস্তা
অপেক্ষায়।
রোদের রাস্তা ধরে এগিয়ে যায় কেউ,
কেউ পাশ দিয়ে চোখ চোখ রেখে চলে
যায়।
রাতের শীত গুটিয়ে যায় ছাদের
লেপে।
এক একবার বেজে ওঠে ফোন।
এক একবার চমকে ওঠে সময়।
এম্বুলেন্সের সাইরেনের ভেতরেই
শোনা যায়
মৃত্যু আর সদ্যজাতের কান্না।
অলীক খেলছে বলেই বোধ হয়,
তোমাকে দেখা হয়ে যায় স্বপ্নে আর
জাগরণে।
ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে
আবার ফিরে যাই তোমার উঠোনে..
অংক
নিশ্চিত ঘুমের সমীপে দু'পা এগিয়ে
নেমে আসে রিংটোনের অঙ্ক।
কাটাকুটি খাতায় হাত বুলিয়ে
পেন্সিল
খুঁজে ফিরে আসে একটা সুগন্ধী
ইরেজার।
তার নরম রাবার শরীর।
আর তার শরীর মুছতে সক্ষম বিগত
ক্ষত।
সবাই সেই ইরেজারের সঙ্গী হতে
পারে না।
অনেকে ব্যর্থ হয় রিংটোনে ভৈরবী শুনতে।
তবু তাদের বিছানা জুড়ে শুয়ে থাকে
ত্রিকোনমিতি, বীজগনিত আর
ঐকিকের
ধারাবাহিক লাইনগুলি।
একটি ঘুমের ভেতরে আমি তোমার শরীর
হয়ে আছি।
পেন্সিল আর ইরেজার পাশাপাশি শুয়ে
আছে
যেভাবে আজন্ম থেকে যায় ব্যর্থ
প্রেমের
ফেল মার্কস...
নিভে আসছে লোভ
ঠিক এমন সময় দরজা খুলে দিলে
হাজার খানেক জোনাকি
রাতের ঘরে ঢুকে পড়ল।
রাতের ঘর মানে বিছানায় পাশাপাশি
দুটি শরীর আর যোজন দূরত্ব।
সেখানে আলো ছড়িয়ে কি হবে..
ঘুম যাপনের আগে
হাত রাখি তার নরমে
পাহাড়ে আর খাদে।
তবু মনে হয় শীতের স্রোত
বিভাজিত করেছে শেষ জেগে থাকা।
এক ঝাঁক জোনাকি
অলীক বিন্দু ঘুরছে।
দপদপ আলো...
এবার উষ্ণ বাগানে হেঁটে আসি চল.