মৃন্ময়
চক্রবর্তী
গুচ্ছ কবিতা
১.
চলতে চলতে মানুষ চিনছি
পুড়তে পুড়তে চিতা
দেখতে দেখতে ভুলছি স্বপ্ন
আলোসম্ভব গীতা
বাসতে বাসতে ভালো কখন
ঘৃণার কাছে গিয়ে
উড়িয়ে দিচ্ছি পাঁজর খুলে
একলা রঙের টিয়ে
আমার সবুজ টিয়ে।
২.
কাঁটার মুকুট আর রাজমুকুটের মধ্যে
পার্থক্য আছে
সেটা কেবল দৃশ্যতই নয়,
অন্তর্গতও বটে!
কাঁটার মুকুট মাথায় উঠলে কখনো
রাজমুকুটের মত দেখায়,
আবার রাজমুকুট মাথায় উঠলে, কাঁটার।
পার্থক্য আছে ভেতরে এবং বাইরে!
৩.
আকাশটা নাচছে দেখেছ?
শীতের হলুদ পতাকা হাওয়ায় উড়ছে
বেজারমুখো বেড়াল কুয়াশা
সরে গেছে বেঝিন মাঠের দিকে।
শীত আসছে,
তবুও কালো কার্টেনের মত মুখ
শূন্যহাত মুখ
দুচোখে এখনো কুয়াশা নড়েনি কারো!
৪.
একদিন বোকারা
সেয়ানাদের চালাকিগুলো ধরে ফেলবে,
একদিন দুর্বলেরা
মাসলম্যানদের চ্যালেঞ্জ জানাবে রিঙে,
একদিন ক্ষুধার্তরা
ভোগীর হাত মুচড়ে ছিনিয়ে নেবে থালা,
একদিন সেরা সুন্দরীরা
দরিদ্র প্রেমিকের হাতে
তুলে দেবে রঞ্জিত গোলাপ..
একদিন এইসব ঘটবে,
এইসব ঘটবেই
একদিন!
৫.
একদিন জলের নীচে ডুবে ডুবে
মাছেদের গান শুনেছি
নিরন্তর শব্দ আর গান।
জলের তলায় কোনো মিথ্যে নেই
প্রবঞ্চনা নেই,
একটানা তরঙ্গগুঞ্জন-
মাছেদের প্রেম।
আমি ভাবি এই যে রাত্রির আকাশ,
সেও এক মহা সরোবর,
সন্তরিত তারা, গ্রহাণুপুঞ্জ
মহাগুঞ্জনরত।
আমি ডুবে যাই
এই সত্যের ভেতর।
আলোর পৃথিবী মিথ্যার কর্দম
ছড়িয়ে হাসে,
বিদ্রুপ করে।
তবু সূর্যাস্ত হলেই আমি ফিরে যাই
মাছেদের জলে,
প্রস্ফুটিত নক্ষত্রের গানে
মেতে উঠি।
আমি ডুবে যেতে ভালবাসি
সত্যবদ্ধ অন্ধকারে
কবেকার নেশা এ আমার!