তন্ময়
ধর
১।
সে পৃথিবী
আসলে ঈশ্বরমূলের তীব্র গন্ধ। তার খুব কাছে বিষন্ন এক পাখি জল খায়। ডানার জ্যোৎস্না
খুলে পড়তে থাকে ব্যথার শব্দগুলো। দীঘল রাতের মৃত সংসার পার হয়ে হেঁটে যাচ্ছে
মানুষ-নক্ষত্রের আত্মা, শস্য ও শিশিরের কথোপকথন। নরম রক্তের চিহ্নের ওপর ঈশ্বরের
শোলার মুকুট, গর্ভফুল, ঘামতেল...
আলো, কত বেলা হল? পাখির নেশায়
এলোমেলো ডানা জড়িয়ে যাওয়া শব্দের নাভি থেকে খাবার খুঁজছে ঈশ্বরের ছায়া। ছায়া থেকে
তৃষ্ণার মতো তোমার একতাল রঙ ভেঙে পড়ছে রান্নায়, রক্ত-মাংসে, মাখন-মিছরিতে। মূর্তির তীরে আমরা তখন অন্ধকার মাখছি।
আমাদের
চোখের তীব্রতা থেকে জন্মান্তরের গন্ধ ক্ষয় হতে থাকে। সময়ের প্রলেপের ওপর একটু বেশী
মোম। তবু ক্যান্ডল-লিট ডীনারে মালাই চিংড়ি জমছে না। পুরনো চপস্টিকে আমরা আবার
অভিনয়ের শব্দ সাজাচ্ছি
২।
অভিনয়ে
ঢুকে যাচ্ছে ন্যারোগেজের শব্দ। উড়ে যাওয়া সমস্ত শামুকখোলের সঙ্গে আমার
দৃশ্য-বিনিময় হচ্ছে। আরেকটু আলো, তোমার আঙুলে, নখে, ধানদুখী মৃত গর্ভপত্রে। রক্তের রঙের মতো আমি হালকা করে
দিচ্ছি তোমার শৈশব
সেখানে
শিলাবৃষ্টি সাজানো হচ্ছে কয়েক জন্ম ধরে। কালবৈশাখীর সমস্ত আমের গন্ধ গল্প করছে জিভ
ও অন্ধত্বে। অম্লধর্মী এক সবুজ রঙ ভিজে উঠছে আমাদের প্রত্যঙ্গে। টকজল এঁটো করে
উপকথার সরীসৃপ হয়ে উঠছেন ঈশ্বর
আমি
অপেক্ষায় থাকি ধাতব ঈশ্বরের মতো। ছায়ায় শুকিয়ে ওঠে অন্নপাত্রের জন্মান্তর
৩।
ঈশ্বরের
জিভ, স্পর্শ ও
ওষ্ঠ্যবর্ণ ছুঁয়ে দ্যাখো তুমি। শব্দ নেই। চলাচলের তীব্র শীতলতার পাশ দিয়ে অন্ধকার
সাঁতারে সময় ডিঙিয়ে যাচ্ছে মাছ, গঙ্গা-যমুনা, ইড়া-পিঙ্গলা, আজ্ঞা-অনাহত-স্বাধিষ্ঠান চক্র।
ক্ষুধাবোধ
থেকে কাঁটা বেছে নিচ্ছে আমাদের বাতিল রুটম্যাপ। বরফে ঢেকে রাখা আমিষাশী কথোপকথনে
শুকনো রক্ত আর স্বাদ। অভিনয় জমছে না। স্মৃতিভ্রংশ মেক-আপ-ম্যানকে খুঁজে চলেছে
হাওয়া
আমরা জলের
বিম্বের মতো পরস্পরকে দেখি, মুছে ফেলি। খুঁজে ফেলি অতিতরল এক ধাঁধার সমাধান।
অতিজগতের আলো পড়ে ঈশ্বরের আর্দ্র জিভ ও ভ্রূমধ্যে।
৪।
আমরা আরো
শব্দহীন হই। শব্দের ভিতর রাত্রির আঙুলে শীতল খাবারের গন্ধ, জ্যোৎস্না, আলোর বহুভুজ। পুষ্টির ধারণায় প্লেট থেকে উড়ে যাচ্ছে
পাখির আঁকিবুকি। শুকিয়ে যাচ্ছে ঈশ্বরের এঁটোহাত।
অন্য এক
অজুহাতে আমাদের নতুন ভাতের গন্ধ থেকে ভালবাসা ডুবে যাচ্ছে পরজন্মে। ঈশ্বরের
উপচ্ছায়া দীঘল দুধ ঢেলে দিচ্ছেন সন্তানের জীবনে। নীলগঙ্গার জলে আমাদের রঙ বদলে
যাচ্ছে একটু একটু করে
প্লুতস্বরের
মতো কাঁপছে ঈশ্বর ও ঈশ্বরীর শরীর
৫।
ঈশ্বরীর
ঘুমন্ত শরীরে আমি সৃষ্টিরহস্য বর্ণনা করে যাই। আদিবদ্রীর গভীর বরফের নীচে চাপা পড়ে
থাকা একটি অস্থির ধারণা কেউ খুঁড়ে আনছে। খননের শব্দ ছিটকে উঠছে প্রতিরূপে, অন্ধতায়, বোতামে এবং
স্বরসন্ধিতে।
লবণাক্ত
এক দ্বীপের গল্প পেরিয়ে তুমি অবেলার গরম ভাত নিয়ে বসে রয়েছো অপেক্ষায়। সেই রাতে
ঈশ্বরের পরিবর্তে আমি কথা বলছি।
কথার অর্থ
থেকে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলছি বারবার