মঞ্জিমা গাঙ্গুলী
মনভালো
একটা দুটো মনভালোর গল্প থাকেই
পাতা চিকমিক শীতের ভোর ঠেলে সকাল হওয়ার
মতো
নিরুত্তর ফিকে সবুজ ঘাসের
পুকুরপাড়ের মতো
একটা দুটো মনভালো সারাদিন ঠোঁটের
পাশে
বসে থাকে
নিশ্চুপ কাঠঠোকরা হয়ে
মেঘ জমলেই ঠুকরে দেয় একাকাশ রোদ।
শীতের সন্তানেরা
পরিযায়ী পরিবারে জন্ম নেয় কিছু
শীতের সন্তান
মৃত বরফের মতো তাদের হৃদয়
গলাতে পারে না শীতের বেচারা রোদ
শুধু রাতগুলো জানে
দুমড়ে যাওয়া ধূসর সাদা শীতের
সন্তানেরা
চোখমুখ নিভিয়ে কাঁদে।
পরমান্ন
মায়ের মতো কিছু মানুষ থাকে
আদর করে হাত রাখে শুষ্ক চোখে
শীতের মরে আসা চোখের কোল
কাজললতা দিয়ে নরম করে দেয় এরা
যখন তখন মন নিভে যায় যে মেয়ের
তার হাতে পরমান্ন রাখে।
সারা ঘর নলেন গুড়ের গন্ধ
সারা মন মায়ের হাতের নরম
এসব মানুষ কেঁদে চলে এই মেয়েটি
বাঁচছে বলে।
বাউলা
নদীতে সোঁ সোঁ তুফানী নৌকার কাঠ
সেই কাঠের বিছানায় গা বাঁধে
এক বাউলার একতারা।
শীতের পুঁইমাচার পাশে খড়ের সুতোয়
একতারা গা দোলায়।
বাউলানীর খোলা পিঠ আর শুকিয়ে
যাওয়া মাটির দেওয়াল
বাউলা জানে শীতের ঝড়ের ঝাপটা লাগা
শিরশিরে প্রেম নিয়ে একতারা পেড়ে
আনে
খড়ের সুতো টের পায়
তুফান আসছে, নদীতে
ফের তুফান আসছে।
মিঠেসই
পিঠপুড়ানো রোদ উঠলে এক মিঠেসই মনে
আসে
ছোটবেলার ঠাকুরদালানে ইঁটের গুঁড়ি
আর পাতার লুচি খেলা আমাদের,
গল্প বানাতাম মিঠেসই আর আমি।
পায়েস বানাতাম শিউলির।
জমির ছোট ছোট আলু পুড়াতাম জামরুল
পাতার ওমে
সে আর আমি ছুটে যেতাম সূর্যাস্ত
খাবো বলে।
এখন সে ঘরে বরে ভরে আছে
রোজ সে সূর্যপ্রণাম করে ভোরে।
মিঠেসই,
আমি কিন্তু এখনো সূর্যাস্তের সুরমা
নদীতে
চান করছি।