দেলোয়ার হোসেন
বৃশ্চিক
অতো বাঁক ঘুরে হেঁটো না
কম করে এক হাঁটু বয়স তো খেলে
আর, আমি খেলাম সাত
ঘাটের ঘোলা জল!
উরু ভ্রু বুক
ধুকপুক বুক ধুকপুক! কতো আর?
ঠোঁট দাও- গলা শুকিয়ে কাঠ!
এসো, শাঁখাতে-সিঁদুরে
বিছানা রাঙ্গাই!
এসো, খেলি চড়ুইভাতি
নাভিমূলে চরাই ধেনু
বৃশ্চিক জনম ছেড়ে প্রজাপতির মরণ
গুনি!
আশ্বিনের রাত ও প্রসঙ্গক্রমে
কাঁচের মার্বেলে রাত গড়ায়
তারপর পদ্মবিল আর চাঁদ শরতের গল্প
জোড়ে;
গাল-গল্পের এক ফাঁকে পদ্মের শরীরে
আছড়েপড়া যৌবনশব্দে
শিশিরের ঘুম ভেঙ্গে যায়!
চাঁদ বেঁচে থাকে কলার কাধির নীচে
ঝুলে থাকা মোচার খোলসে!
আমারও শরীর জেগে ওঠে
নদীর বাঁক ঘুরে, জল
ছলছল শুশুকের নগ্ন শরীর তুলে আনি ঘরে
পদ্ম আর পদ্যের কত মিল, তাকে
বুঝাতে গেলেই
বেহায়া চাঁদ
আড়চোখে ঝুলে থাকে, চোখের
কার্ণিশে!
শুধু গল্প নয়
আজকাল, শুনেছি
সোনার ডিম দেয় রাজহাঁস!
মাটির সানকিতে লবন-লঙ্কা মেখে
দুইগ্রাস গিলে
দ্যাও ঘুম, আর
পুব আকাশে সিন্দুরে আভা লাগতেই
ধড়মড় উঠে দ্যাখো খুড়ো-
মাথার নীচের ইট তোমার সোনা হয়ে
গেছে !
কইস কী হ্যাদা?
হ- খুড়ো !
সত্যি কচ্ছিস তো?
সত্যি মানে, তিন
সত্যি-
মা কালির দিব্যি-
ওই পাড়ার রঘুনাথ আর আব্বাস কচ্ছিলো, কালুর
চায়ের দোকানে;
"হেঁতাল ঝোপের গোপন বাঘে
ঘুম চিবিয়ে খায়, খুড়োর
ঘুম চিবিয়ে খায়
লবন-লঙ্কার অম্বলে আর
শক্ত ইটের ঠোস নিয়ে
দিন গড়িয়ে যায় খুড়োর
দিন গড়িয়ে যায় ।"
হ্যাদা রে---
কও খুড়ো;
মাথার মধ্যি কেমন জানি ঘোরে
ঢাকায় যত মস্ত দালান
সব সোনার ইটের জোরে !
কও কী খুড়ো!
হ্যাঁ-রে হ্যাদা!
ঘাম ঝরায়ে দিন পেরুলে
আসে দু’শো
গাঁটে
চালে-ডালে যায় তা চলে
অভাব পিছু হাঁটে!
মস্ত দালান গজিয়ে ওঠে
পেয়ে সোনার ইটে !
আমাকে মেরোনা সখি!
কামরুখ কামাখ্যা যেতেই হবে দেখছি
হবে না?
তোমার যে তাতানো কড়াই, তাতে
ফোঁড়ন হয়ে ঝলসাবো কতো? যাই-
নিয়ে আসি তন্ত্র-মন্ত্র, বশীকরণ
তাগা
যাবো না?
সে কেমন করে হবে? আমি
যে কাম-কামনার দ্রোহের আগুন পুষি
আমি যে, তোমার
গরম ভাতের ঘি ! সমসত্ব দ্রবনের নির্ভাজ শরীর!
তবে ভাঁজ খুলে পরো আমায়?
হবে না?
যেতেও দেবে না- কামরুখ কামাখ্যার
জাদুটোনা তন্ত্র-মন্ত্র মাদুলি-কবচে?
তবে শোনো, দেবতারা
বিরহ নিয়েই সোনার মর্ত ছেড়েছে
আমি সামান্য মানুষ, মাটি
আর জলের জলদাস
আমি মরে যাবো!
আমাকে মেরোনা সখি!
সুখচানের সুখ
আতুড়ঘরে আগুন মালসা দে
কচি বউখান পোয়াতি
কোলে নিয়ে দুধের বাটি- রাজপুত্তুর
ছাওয়াল
ওরে সুখচান- দ্যাখ, ব্যাটা
তোর ক্যামনে ঘুমায়!
ওরে, মায়াবতী- ছায়াবতী,
ধূপ-ধুয়ো দে
সন্ধ্যে প্রদীপ জ্বাল, উলুধ্বনি
তোল সব নবোঢ়া রমনী
ভূত-পেত্নী-অমঙ্গল দূর দূর হোক; ভিটের
চেরাগ আমার সাত রাজার ধন
ওরে সুখচান- দ্যাখ, ক্যামনে
খ্যালায় ব্যাটা তোর, মায়ের আঁচলে!
সুখচান কিচ্ছু বলে না
দাওয়ায় বসে বিড়িতে কশে সুখটান দেয়!
বিড়ির ধোয়ার পাকে পাকে লীলাবতীর
সেই নাঙ্গের মুখ দ্যাখে,
যার জন্যে
বউ তারে ঢ্যামনা-মিনসে বলে গাল
পাড়ে আর মাঝরাতে অন্যপাশে বেঘোরে ঘুমায়!
জনকের কর্মদাহ কেউ বোঝে না
কার্তিকের বেশী বাকী নাই, বলে
গেছে কুত্তার পাল
হট্টোগোল, শক্তিমত্তা,
জেদ আর যৌনতার
দারুণ হিংস্রতা মানুষ শুধু আড় চোখে
দেখে!
পৃথিবীটা এমনই, এমনই
সব জীব আর এমনই জীবন
জৈবিকতার দাপটে সময় গড়ায়, আয়ূ
পায় সুফলা মাটির জমিন ।
ওসব মানতে চায় না কলম
খাতা চায় সফেদ, সাদা,
কলঙ্কহীন! রমনে-মৈথুনে, অর্ঘে-তপস্যায়
স্রষ্টার চোখে আনে কামজ্বর! কবিতা
বিগ্রহ হয়।
আর রক্তাক্ত সতিচ্ছেদে ঝরা
রক্তফোটার ঠিক নীচে
কবির নাম লেখে, হতবাক
কলম!
আমি যেনো শঙ্খচূড়, প্রগলভা
লাউডগার ইন্দনে
পলাগলি-বাহুবন্দি কারে যেনো
আশ্বিণীরাত জুড়ে দংশন করি! ছায়াপথে
ঝাঁক ঝাঁক নাগশিশু
বিষের স্বপ্নময় সম্ভাবনা নিয়ে কেবল
নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রে হাঁটে
জনকের কর্মদাহ তারা কেউ বোঝে না!