অর্পিতা সরকার
নীল প্রেমিকের উদ্দেশ্যে
এক মাথা ঝুমকো মেঘ আঙুলে মেখে নিতে
নিতে
পাথরচোখে জলঘুম ডেকে দিয়েছিলে।
বোবা স্বপ্নগুলো গুছিয়ে নিতে
যেটুকু সময়__
রাতজাল দুহাতে সরিয়ে তোমাকে ছুঁতে
পারিনি নীল।
এক মাস হয়ে গেল আমরা অভ্যাসে
বদলেছি।
ভুলিনি এখনও।
নীল রঙ যতটা গভীর হলে তাকে
যন্ত্রণা নাম দেওয়া যায়
তার চেয়েও গহীন বিষাদে অযথা এঁকেছি
শ্যাম
পাঁজরখাতাতে।
গুঁড়ো চশমার কাঁচ
যত্নদাগ ফেলে গেছে অশ্রুকণার পাশে।
নীল, ইচ্ছেসুতো দুহাতে
জড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙলেও
রেশ থেকে যায়
বাস্তবের।
আসলে জলদাগে কখনো শ্যাওলা ভাসে না।
সহজও কখনো কখনো জটিলতর হয়ে
ভড়কে দেয় রোদেলা সাঁঝদিনের
গল্পদের।
দপ করে জ্বলে ওঠা ফানুস অন্ধকারের
আড়ালে
চুপিসারে মিশে যায় ধুলোঘাসের
অনিচ্ছায়।
আচ্ছা নীল, তুমি
কি জানো
ভালোবাসা আর ভালোলাগার মধ্যেকার
ফারাক
পথটুকুতে কতো রাতপাখি ডানা গুটিয়ে
নেয় ?
কতো পোড়োজমি নদী হয়ে যায়
নিঃশব্দে ...
নীল,
প্রেমিকারা স্বপ্নপূরণের চেয়ে
স্বপ্ন দেখতে বেশি ভালোবাসে...
এখনও।
এই জীবনে
ঝকঝকে কাঁচঠোঁটে আঁজলা ভরা
কষ্টচুমু সাজিয়ে ভালোবাসে মেয়ে।
নরম সকাল মেখে হেঁটে যায় সূর্যের
দিকে ।
সবুজ প্রেমিকজলে ফেলে আসে
বাবা বাবা ছায়া।
খুব চেনা গাছের গভীরে
দুহাত ডুবিয়ে
মেপে নেয় শিকড়ের তল।
শিখে নেয় চুপিসারে,
ঠিক কতটা ধুলোজল বুকে টেনে নিলে,
অনায়াসে ধরা যায় তুফানী বাতাস।
অবসর
অবসরের বুকপকেটে ভোরদুপুরের ধুলো,
উপচে নালিশ, আদর
সালিশ
ফিকে পাতায় পরত পালিশ
পেঁজা সুতোর কান্নাবালিশ,
আসমানিয়া চুপকথারা বেজায় উলোঝুলো।
দূরত্ব
দীর্ঘতর রাতগুলিতে কোনো ছাদে তারা
নামেনা।
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা আলোগুলির
মধ্যেকার
দূরত্ব বাড়ে।
অথচ কাছে আসাটা খুব প্রয়োজন।
একসময় দীর্ঘশ্বাসগুলিও অচেনা শহর
খুঁজে নেয়।
মেথীরঙা বাড়িটার গলিপথে জল জমে,
বয়ে যায় প্রেমিকার নাকছাবি,
তারপর ব্যস্ত সাইকেলে ঢেউ ভেঙে
নদীসড়কে।
কাছে আসাটা খুব প্রয়োজন__
জল ভেঙে
রোদ মেখে
রাত ছুঁয়ে
কাছে না এলে তো আগুন জ্বলবে না।
আঁধারের আড়ালেই পথ সরে যায়,
কুয়াশার মোহে ধ্রুবতারাও দিক ভুল
করে বসে।
শাশ্বত
কবিতার ক্লাসে সুধীন দত্তের বইয়ের
ওপর ভারী মাথাটা চেপে ধরে রহমান বলেছিল, " বড়ো জটিল। কিছুতেই
পড়বো না।"
তারপর বছরনদী পেরিয়ে বইটা বুকে
টেনে নিয়ে,
ঘুমবাড়ির কড়া নাড়তে নাড়তে আউরে গেছে,
" সে ভুলে ভুলুক, কোটি
মন্বন্তরে
আমি ভুলিব না, আমি
কভু ভুলিব না।"
এখন সে অপেক্ষার জোয়ার ভাটায় পা
মিলিয়ে চোখের মোহনায় এঁকে রাখে লবণের দাগ।বার্ষিকগতির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপ
বেড়েছে হলদে নক্ষত্রের। সময় পোড়া ছাই জমতে থাকে তার পাঁজরকোঠাতে।
বাতেনি ভালোবাসার কৌটো উপুড় করে
দিয়ে আজকাল সরলরেখায় শুয়ে থাকে সে। শিয়রে ফুরিয়ে যায় আশ্চর্য আঁধারি জ্যোৎস্নার
রাত।
বন্ধুতার পানসে আঙুল তলপেট খুঁড়ে
টেনে আনে ক্লান্তিকর তেজ,
ভালোবাসা নামে বাড়তি কিছু গুচ্ছ কবিতা। জলপটি অক্ষর সব নীরবেই গা ছুঁয়ে থাকে...
ঝাঁঝালো মৌতাত দিন ভুল ফেলে গেছে।
অবশেষে পালকে বহুরূপী হাওয়া জড়িয়ে সে ছেড়ে ফেলে অবিশ্বাসী পাতার পোশাক।
শাশ্বতী,গাছটার
মৃত্যু যন্ত্রণা টের পাচ্ছো ?