বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮

নরেশ মণ্ডল


নরেশ মণ্ডল

কলকাতা

কারখানার চিমনি ধোঁয়া ছাড়লে

অসুখ বাড়ে।


ফাস্ট ট্রেন ছাড়লে মানুষজন ফিঁকে হয়

এ শহর ক্রমশ পিছু হটে।

মা আমার, এসব কিছুই জানো না তুমি

প্রতিদিন পাঠিয়ে দাও

বেঁচে থাকার রসদ আনতে।

হিম হতে হতে ক্রমশ কঠিন বরফ,

প্রাগৈতিহাসিক চিহ্নের মতো জমে থাকে ফসিল।


মা আমার

এ শহরের শুরুই ছিল সুখের

ভালোবাসা মুড়ে দিয়েছিল

খোকার চিবুক,

ক্লান্তি ছিল না।

ভোরের আগেই কচি ঘাস ছোঁয়াতো পায়ে।

উপচানো উৎসাহে ছিল না ভাটা

নিয়ন আলোর মতো এক জোড়া চোখ

                            ছুঁয়ে যায়

হয়তো প্রতীক্ষায় ছিল  হয়তো বা না;

এসব কিছুই জানো না তুমি।


চিবুকে ছোঁয়ালে হাত

সজীবতা বাড়ে না তাতে,

শুদ্ধ উচ্চারণে ভয় ছিল একদিন।

মা আমার,

খোকার বুকের শব্দে রেখেছো কান

শব্দের অবিরাম খেলা

মাদলের দ্রিম দ্রিম.......

মিনিচেকারের শব্দ........

এক হয়ে গেছে কবে

জানো না, জানো না তুমি।


বসন্তও ছিল

কোন এক ডিসেম্বরের শেষ সন্ধ‌্যায়

সাদা চাদরে জড়িয়ে শরীর

বড় প্রিয় স্মৃতির গভীরে এখন।







ভেঙে পড়ছে কমিশন

গোরু খুঁজতে খুঁজতে লোকটা

হারিয়ে গেল গোরুর ভিড়ে

গোরু আর চোর, চোর আর গোরু

লুকোচুরির মধ্যে

লোকটা চেয়ে রইল বিপন্ন বিস্ময়ে।

একটার পর একটা কমিশন হবে

মাঝেরহাট ব্রিজ ভাঙা বিপন্ন মানুষ

দেখবে একসময় কমিশনও

ভেঙে পড়েছে ব্রিজের মতো

এক বিষণ্ণ বিপন্নতা নিয়ে

কেউ কেউ চিৎকার করে উঠবে

তারপর! তারপর হারিয়ে যাবে

গোরুর ভিড়ে

গোরু আর চোর, চোর আর গোরু

লুকোচুরির মধ্যে।



সমস্বরে চিৎকার উঠলে

মেঘের গর্জন, বজ্রপাত

পুড়িয়ে দিতে পারে অসভ্য অনাচার।






যুদ্ধটা কোথায়

হাতের অর্গল ভেঙে

পিঁপড়েরাও ডিম পাড়ে জানি।

তবুও হিসাব কষে এগতে হয়

যুদ্ধটা কোথায়

সঠিক চিহ্ণিতকরণ চাই।

নচেত ফিরে আসা

হিরোশিমা নাগাসাকির বীভৎস উল্লাসে

লক্ষ শিশুর মুখ ছুঁয়ে

বিকলাঙ্গ শরীর।

আজীবনের ক্ষয় নিয়ে

স্রোতহীন কোন হ্রদের সম্মুখে

                 আহত মানুষ।


আসলে যুদ্ধটা কোথায়

সঠিক চিহ্ণিতকরণ চাই।






উৎসবের চাষ চাই না

এখন আর তারার চাষ হয় না

চাষ হয় উৎসবের

উৎসব শেষ হলে পড়ে থাকে

লাশ হয়ে ফসলের মুখ

দু মুঠো অন্ন। হা অন্ন ফসলের

তিনগুণ লাভ হয় কোথায়

জানে না কেউ

কৃষকের মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে



এখন আর তারার চাষ হয় না

উৎসব শেষে পড়ে থাকে

আমার আত্মজার ছিন্নভিন্ন লাশ

পড়ে থাকে সাথিহারা সাইকেল

ভাঙা জীবনে কতটা জোড়া লাগায়

বাজুক এবার উৎসবের শেষ ঘণ্টা...

না হলে তারার চাষ হবে না

এখন তারার চাষ চাই

মাঠ ভরে যাক তারায় তারায়।






গভীর রাতে

এখন বড় কষ্টে আছি

দিন কেটে যায়

গভীর রাতে শব্দ শুনি

কড়ানাড়ার

বুকের ভেতর আরেক বুক

কষ্টে আছে

ঝিঁ ঝিঁ পোকার রাত পাহারা

কেউ জানে না

মানুষ কাঁদে

এই রাতে কি মানুষ জাগে?

মানুষ তুমি কষ্টে আছো

শব্দ শোনো কড়ানাড়ার

বুকের ভেতর আরেক বুক

কষ্টে আছে।