ভাস্কর পাল
আবেগ
এগোও পায়ে পায়ে
শরৎ হেমন্ত ছেড়ে
আকাশ ঢেকেছে মেঘে
এগানো টা কজন জানে ?
আবেগে সেঁজুতি রঙ
এক হাতে সাদা ফুল
দমকা হাওয়ার ডাকে
মেয়েটার এলো চুল
এবার বাড়াও হাত
ছুঁয়ে দেবো আনমনে,
বসন্ত চলে এলে
এগানোটা কজন জানে ?
হৃদয়ে বসন্ত এলে
মনেও কোকিল ডাকে
একান্তে তাকে পেলে
কাছে নেব একটানে
অপরাজিতা
এবার জলপ্রপাতের নীচে দাঁড়িয়ে
ঋক স্বরে করে চলেছি মানব বন্দনা
চিৎকার করে বলেছি যে ঈশ্বর নেই,
যদিও সেই ঈশ্বরই
কোন এক হৃদয়ের অতল থেকে
এক নারীকে এঁকে বললেন
তাকে ভালবাসো ।
নারী, যার
পূর্ণতায় কম্পিত, শিহরিত হবে
আস্ত এক পাহাড় ।
ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায়
ষোড়শী নদী
পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ
খান্ডব দহন সেরে এগিয়ে দেই বুক
সাপের ছোবলে ছিল বিষ।
কিংশুক নীল
গাছের শিকড়ে ছিল তৃষ্ণা।
কৃষ্ণচূড়া লাল
ছোবল খেতে খেতে ছোবল খেতে খেতে
বুক ভরে ওঠে নীল অপরাজিতায়
আজ তোমার রাঙা হাত মাটি মাখা
কপালের লাল টিপ,
আলতা রাঙা পা
নীল পেড়ে শাড়ীর আঁচলে জড়ানো এক
তুমি
দক্ষিণের জানালায় দাড়িয়ে থাকা সেই তুমি
বাতাসে ঢেউ খেলানো তোমার চুল
উঠোন জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ধুলোয়
তোমার গভীর পায়ের ছাপ
অপরূপ এক আত্মবিশ্বাসের ইমন জাল বোনে
বাতাসে তখনও তোমার জুঁই মাখা গন্ধ
একটি পাখি,
পৃথিবীর সব অলিন্দ চিনে নিয়ে
ফিরে আসে নীড়ে
আর তুমি ?
আমার অপরাজিতা
সূর্য চেন তুমি ?
দৃশ্যমান..
দৃশ্যত তোমায় ঘৃণা করবো বলেই
আজ এই চৈত্রে আহ্বান করেছি
ঝমঝমে বর্ষা গোধূলির সূর্য পট
আকাশের খোলা পাতায়
বার কয়েক লিখেও কেটেছিলাম
তোমার নাম ......
ভেবেছিলাম ভাল যেহেতু বেসেছিলাম
হয়তো নিজের চেয়েও অনেক বেশি
আঁকতে চেয়েছিলাম ঘৃণার রঙ কে
মনের রঙ মিশিয়ে কবিতা লিখতে
যেভাবে তোমায় আমি ঘৃণা করি
সে তো ঘৃণা নয়ই-বরং ভালবাসা !
সময় ফুরোচ্ছে
গত 'সময়ে'র কাছে বর্তমান
'সময়'টা
বেচে দিয়ে
আমিও ফুরোবো ভাবছি.........
ক্রমাগত
যেদিন মানুষের আদর খেতে
পাথরের নুড়ি
অধিকার করে রুপোর সিংহাসন
আমরা নতুন করে হারিয়ে ফেলি
নিজেদের।
চারিদিকে এত উৎসবের ভিড়
তবুও আমরা পারিনা
আমাদের নিজের মৃত্যু উৎসবে
যোগ দিতে
যদিও শত উৎসব আতিশয্যে
আপ্লুত আমার অস্থিমজ্জা
আজকাল আমি হীন অবয়বকে
কেমন নপুংশক মনে হয়
সকালের ভেসলিন লাগানো ত্বক
জলজ মাংসের ভেতর প্রলম্বিত শয়নে
এলোমেলো আমার ২০৬ খানা হাড়
নির্বোধ রক্তপূর্ণ মেধাবী মাথার
খুলি,
খুঁজে চলেছে ক্রোমোজমের সিঁড়ি ধরে
অলৌকিক দেবতাদের কারখানা
এই বৈজ্ঞানিক মিডিয়ার যুগে
গেয়ে চলেছে বর্ণাশ্রমের গান ।
পাশে রাস্তায় একজন আর একজনকে মারছে,
তাকে প্রশ্ন কোরও না ,
মারলে ব্যথা লাগে কি না ?
অর্ধক্লিষ্ট জীবনের দুর্দশা দেখে
জেগে থাকে উদ্বাস্তু রাত
প্রশ্ন কোরও না, নগ্ন
মানুষ কেন
একা কাঁপছে হিম বিছানায় ।
এসো আমরা ফিরে যাই
আদিম গুহায়
আবারো নুড়িকে নুড়ি দিয়ে মেরে
জ্বালাই আগুন ।
অস্থায়ী মানচিত্র
৭ই ডিসেম্বর তোমার দেশে
বৃহস্পতিবার
বার্নিং ইনডেক্স ২৯৬ ছুঁই ছুঁই
আগুনের লকলকে জিভের ছোবলে উত্তপ্ত বেথেলহেম
এদিকে শীত নামছে আমার পৃথিবীতে
লেসবন সামোস চিয়োস ছুঁয়ে
শীত পড়ছে মানুস দ্বীপে
আমি চাঁদোয়ায় আগুন লাগিয়ে
তার নীচে শুয়ে আকাশের দুরন্ত নীল
দেখছি এখন
মরশুমি শীতের একএক সময় এক এক নাম
নির্ঘুম সকালের শীতের একটা নাম
ক্ষুধার্ত বিকেলের গায়ে লেগে থাকা
শীতের একটা নাম
গভীর রাতের প্রবল শীতের আবার
আরেকটা নাম
আসলে বর্ষা আর শীতের একটা অদ্ভুত
অন্ত্যমিল আছে
সেটা টুপটাপ কুয়াশা আর
বৃষ্টিফোঁটার ছন্দ
উষ্ণ শোণিতের প্রবাহে দুটোতেই আমরা
নিজেদের ঢেকে ফেলি
এখন বাইরের আকাশ সূর্যহীন
খুঁজে দেখলে তার পেছনেও পেয়ে যাবে
মেঘের গোপন কারসাজি
সৌম সমুদ্রের স্বরলিপির লাবন্য
ছুঁয়ে যেতে যেতে
উল্লাসে উল্কারা ভেঙে পড়লেই
বিদগ্ধ রাত মেতে উঠবে
কোল্যাটারাল ড্যামেজে
তবুও এগিয়ে যাওয়া
মানচিত্র নিখোঁজ
হাঁটলেই সমুদ্র সরে যায় ………
বিক্ষিপ্ত ভাবনারা তারা হয়ে ফোটে
যতিচিহ্নহীন আকাশে
বালিয়াড়ির প্রান্তরে পড়ে থাকা
ডাইনোসরের ফসিলেও
নীরবে কাঁদে পুরানো ইতিহাস
জাহাজ ফেরত প্রাচীন বুদ্বুদগুলো
কড়িকাঠ নাড়ে বিরামহীন
আমি মানুষ আঁকি রাত আঁকি রাতের গাল
ঠোঁট
একটু আড়াল আঁকি
নিজের চোখ মুছে নদীগুলোকে আরও ভরাট
জলে আঁকি
রাতের পর রাত চন্দ্রবিন্দু পতনের
মাপ নিতে নিতে
অন্তরের আগুন জ্বালাতে পারিনা
জানি একবার জ্বলে উঠলেই শীত চলে
যাবে
অ্যামিবা সময়ের হাত ধরে নদী
তীরবর্তী চরাঞ্চলে পৌঁছায় এসে
ইতিহাস বলে যায় তার পরের কাহিনী
প্রতিটি নাবিকের মুখে মুখে
দুনিয়ার নানা উদ্বাস্তু দ্বীপ আর
চর জুড়ে জুড়ে
গড়ে উঠবে গ্রাম
নতুন সূর্যের সুনামী ঢেউএ ভেসে
ভেসে গড়ে তুলবে দেশ
আমার নূতন স্বদেশ।