শ্রীলেখা মুখার্জ্জী
একগুচ্ছ ছন্দবাণী
(১)
জানলা গ্রীলে হাসছে আকাশ শিউলি ঝরা
ভোর
দোর পেরোলেই বটের ঝুরি বড়ো রাস্তার
মোড়
আমার আপনজন
বেড়ার ধারে নয়নতারা আগাছা ঘাসবন ;
আজও দুহাত ভরে ,
দিচ্ছে ছায়া সবুজ মায়া হৃদয় উজাড়
করে…
এদের ঘিরেই আমার যাপন জীবন জোড়া ঋণ
কৃতজ্ঞতার স্পর্শে ওদের ছুঁইনি
কোনোদিন—
'
(২)
তোমাকে ভেবেই হাঁটে , দেওয়ালে
ঘড়ির কাঁটা
এ সময় স্মৃতি ঘাঁটার , বুকেতে
কুটনো কাটার ;
ভুলগুলো ফুলের সাজে , ভাতঘুমে
গন্ধ ছড়ায়
নিষেধের কচকচানি , চোখ
বেঁধে পায়রা ওড়ায় ....
কুঁড়িটা ফোটার আগেই , আইনী
সিলমোহরে
পরিযায়ী করলো আমায় , ঠিকানা
ভিন শহরের--
কবেকার ইছামতী ফল্গু হয়েই ছিলো ,
নিরালা আস্কারাতে খোঁজ পেলো উজান
আলোর ;
এবারে তীরের ফলায় বিষ যে আগুন
বীজের ,
এতকাল বাধ্য থেকে ,হয়েছি
বিদ্ধ নিজে ...
ভালোবাসা ডাকছে কাছে। চৌকাঠ পেরিয়ে
যাবো।
মরণের কুটনো কুটে , আজ
আমি মন্দ হবো--
'
(৩)
নিঝুম দুপুর, ভিজে
এলোচুল
পুকুরের ডুবজল
নিরিবিলি কোণ শাপলার ফুল
যাক ভেসে আজ এ কূল ও কূল
অতলের টানে আঁকড়ানো ভুল
কুড়িয়ে বেঁধেছি আঁচল...
চোখ রাঙানো নিষেধের বেড়ি
ধুলো ছিটিয়েছি যতোটুকু পারি
হয়তো করেছি অতি বাড়াবাড়ি
মন ছোটে বেলাগাম
আজকে না হয় মন্দ হবার
সঙ্কল্প হোক সীমারেখা পার
বেপরোয়া হতে চাই বারবার
থাক পড়ে বদনাম--
'
(৪)
চলতে চলতে হঠাৎ নামে ছায়া
বিজন মায়া…
চোখের পাতায় গুছিয়ে তুলে রাখি
দেখবে নাকি
তোমায় ভেবে নিবিড় সাঁঝের আলো
কি জমকালো…
জারুল শাখায় জোনাক জ্বলা বাতি;
মাদুর পাতি
আকাশ ঘুমোয় রাতপাখিদের ডানায়
কানায় কানায়…
আলোর হাসি ছড়ায় চাঁদের ভাষায়
তোমার আশায়——
'
(৫)
সময়ের স্রোতে ভেসে যাওয়া দিন আমারও
তো ছিল স্বপ্ন রঙীন
আলোছায়া মেখে নিঝুম দুপুরে কাঁচা
পেয়ারার গন্ধ
চুপকথা যতো মুখে ফোটা খই রূপকথা
জমা বুকের গলুই
ডুবসাঁতারেই অতলের টানে নিষিদ্ধ
ছোঁয়া আনন্দ
পুকুরের জলে শাপলার ফুলে কিশোরী
আলোয় দুইবেণী খুলে
পড়ন্ত রোদে ঘাটের চাতালে বেগুনী
আবেশে মগ্ন
সাইকেল চাকা উড়ন্ত হাওয়ায় আতসকাচের
তাপ ছুঁয়ে যায়
দূর চলে আসে দ্রুত কাছাকাছি সে
ছিলো এমনই লগ্ন....