বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮

গোপাল চন্দ্র সাহা


গোপাল চন্দ্র সাহা

হৃৎপদ্মের নীল রং 

সম্মোহিত রসকলি সিক্ত ছিল শৃঙ্গারে

বিনকার কৌশলে মেঘ সুরম্য সুর,

নীল নীল ছায়ার নিরুপম রস, উত্তপ্ত প্রাণ

সে ছিল এক মায়াচ্ছন্ন বিম্ব

ধরে ছিল ক্ষনের প্রতিরূপ, আহুতি বিসর্জন

'সেদিনের ' মন্ত্রে গড়িয়ে আসে দ্রুত 'সুদূর' যাপন

তবুও আজ ধ্যানবিন্দু মিশে যাচ্ছে

আমার বৈষ্ণবীর প্রাচ্য স্বরে !

হে প্রভু ! আমিতো দিগম্বর কালাচারে

মোহ বিলীন, মুক্তি চেয়েছি চিন্ময়ী শৃঙ্গে

তবে কেন অহং পেল আকার

আমার বিস্তৃত রোমকূপে  !

বল প্রভু,

কেন সমাহিত হল নিঃসাড় বিচল-অনুভবে

হৃৎপদ্মের নীল রং মুছে দেব   কোন্ নিরীক্ষণে  !!







স্বপ্নীল পালক 

প্রখর তৃষ্ণা কয়েক ফোঁটা জলে আশ্রয় নিলে

কমে আসে রক্তের ঘনত্ব

ক্ষয়িষ্ণু নিশ্বাসে ধীর লয়ে নেমে আসে উপলক্ষ

এক অজ্ঞাত ভিন্ দেশ

দেহ পোড়া ধোঁয়ায় তখন নিশ্চিন্ত পেখম তোলে

পূর্ণ তন্দ্রিত চক্ষু পলক

উদ্যম নেয় অনাবিল সুখ, মন্দ বাতাসেও ভাসে

তিথীহীন নান্দনিক চিত্র

অথচ তেষ্টা আর ধোঁয়া দ্বিস্বরে অভিমান রাখে

পুড়ে যাওয়া মুহুর্তের কাছে

প্রসঙ্গ আড়ালে তুলসী পত্রদ্বয় তখন আপ্লুত

মহেন্দ্রমধুর দিব্য উৎসবে

এখনও, নাভির দীর্ঘশ্বাস ঝড়ে পড়ে বাসনা কুন্ডে

স্বপ্নীল পালক সন্ধানে  ।।







ফালতু স্ক্রিপ্ট  

ইচ্ছে, সাধ্য, সাধন - একেকটা চিহ্ন পার করে

পায়ে পায়ে কবিয়াল পাড়ায়, দ্যোতনায়

কাঠকাঠ গলার অবসাদে তৃষ্ণা অপচয়

গন্ধে রন্ধ্রে মৃত শুভ্র, 'চমৎকার' ছড়িয়ে

আগুনে-কবিতা খেলছে পরাভব রং,

সান্ধ্য রেখায় সৃজিত অক্ষর ঘেঁষে

নির্মোহ প্রান্তীয় বিবরন

জানি,

এরপর লিফাফা গহ্বরে একটা ফালতু স্ক্রিপ্ট

হাঁফিয়ে উঠবে, ঝুলমেখে বিদ্রূপ আস্তরণ

ভাবনা গুলো ডুব দিলে আলপনায়, মরচে রং

পদাঙ্কে থেকে যাবে শুধু বাষ্পায়িত সাগ্নিক উত্তাপ  ।।








নিস্তব্ধ  উত্তরন

যতদূর দৃষ্টি বিছিয়েছে ছোট্ট ডিঙি খানি

ভেঙে যায় পানকৌড়ির অনুছায়া,

ভেসে ওঠে সুনন্দ বৈভব ডুবন্ত ডানায়,

মিশছে খানখান নিস্তব্ধতা এই শেষবেলায়

স্তব্ধ-শৈলির পূর্ণধারায় নেমে এলে ইমনকল্যাণ

একটা নিরিবিলি ঢেউ জাগে রাত্রিমাস্তুলে

 উড়ে বসে দিনের ধুলট পল্লব

#

অলক্ষ্যে রয়েছে যে ছোট্ট চিতাগাছ

পৌরুষ অজয় আর মহানিশার মিলনচরে

এগিয়ে দিচ্ছে তুচ্ছ হাওয়া নির্দ্বিধায়,

দহনবেলার মহাপথে খসে পড়ছে কটাক্ষে

শরীরের ইতিবৃত্তিয় অজুহাত,

ওই তো হেঁটে যাচ্ছে মৃত্যুদাগ !

আত্মনির্বাণ তাইতো সেজেছে বৈজয়ন্তী মালায়,

নিস্তব্ধ উত্তরণে

আহা ! ছোট্ট ডিঙায় ভেসে আসছে অনন্ত উল্লাস

আমার মৃত্যু বরণে  ।।







বিপ্রতীপ 

চাঁদের এ'পিঠে গল্পের ইলসে গুড়ি জ্যোৎস্না

অলিন্দের জাফরানি আলপনায়

মৃদুল ছন্দ তল্লাশে,

স্নিগ্ধ প্রত্যাশা জমিয়ে

রাত্রি কঙ্কণে কেটে যায় ঋতুর গমনাগমন

শুভক্ষণী প্রাঞ্জল অন্তরাগে

উৎসুক চাহনি থমকে যায় যেখানে

চাঁদের ও'পিঠে

শূন্যতার বিক্ষিপ্ত ঝড়ে পেচিয়ে যায় সন্ধ্যাচারী

সেখানে এক খন্ড মেঘ আলেয়া ছায়ায় হাঁটে

তাল রেখে নিরুদ্দেশে

আর ক্রমাগত পুড়ে যায়

দুকুল ছাপিয়ে প্লাবিত কথারা ঘেমে ওঠে

ধমনীর গোলাপী অথবা বিবর্ণ কোলাজে

ধীরে ধীরে এ'পিঠ আর ও'পিঠ

দুই বিপ্রতীপ ডুবে যায় কোন একক প্রদর্শনে

ঘন অমা-রস কল্লোলে  ।।