বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮

শ্রীমন্ত দে


শ্রীমন্ত দে

অধিকার

কুয়াশার চাদর জড়িয়ে দিলে দু চোখে
আধো আলোয় অপরিচিত হল সব
অনুভূতির সোপান জুড়ে পরিচিতের আগম
এ এক অন্য অনুভূতি, অবিচ্ছেদ্য প্রেম।
আমাকে আজ এতটা ভালো বেসো না,
তোমাকে ভালো করে দেখি মনের চোখ দিয়ে
এ ভালোবাসায় কতটা একনিষ্ঠতা আছে,
না কি এ ভালোবাসা শুধু কামনার জন্য।
তোমার শরীরের উত্তাপ আমাকে শিহরিত করে,
নদী মোহনায় প্লাবন আসে দুকূল ছাপিয়ে,
ভিজে যায় শুষ্ক মাটি, কুঞ্চিত তৃণ কেশ,
এবার ভরাট করে দাও আমার তৃষিত গহ্বর।
নিয়ন আলোয় ছায়া শরীর কাঁপে,
আলিঙ্গনে, চুমুতে আর মিলনে রসসিক্ত সব
এ তৃপ্তি, এ প্রেম স্বর্গের সুখ নিয়ে আসে,
এবার থামো, আবার নিজেকে সাজাতে হবে।
দৈনন্দিন দুঃখ-ব্যথা কোথায় যেন হারিয়ে যায়,
রাতের গায়ে লেখা হয় ভালোবাসার পদচিহ্ন,
দিবস, সে তো অপরিচিত পরপুরুষের মত,
তুমি আঁধারেই এসো, আঁধারে লজ্জা করে না।
এই প্রেম, এই যে দুটি দেহের মধুর মিলন
এ তো চিরন্তন, এ যে কাঙ্ক্ষিত সবার কাছেই,
আমার মনের গ্লানি উড়ে যায় ঝরা পাতার মত
আমার শরীর জুড়ে শুধুই তোমার একান্ত অধিকার।








অপাপবিদ্ধ হৃদয়

অপাপবিদ্ধ হৃদয়ের মাঝে পাপের পেরেক ঢুকে গেছে,
অনন্ত যন্ত্রণা প্রিয়ার মত নিত্য সঙ্গী,
পাঁকের মধ্যে চলাফেরা করলে পাঁক তো লাগবেই,
পাশ কাটিয়ে পথ চলতে গিয়ে বিপদের মাত্রা বাড়ে।
অগণিত প্রাণে হাহাকার রাশি সদা মথিত হয়,
জীবনের যবনিকা টানতে চায় অদৃশ্য সূত্রধরের দল,
ক্রীড়নক হয়ে বেঁচে থাকা বড় অসহ্য লাগে,
আজ আর কঠিন শিলায় পুষ্প প্রস্ফুটিত হয় না।
হেলায় হারিয়ে ফেলি প্রকৃত সুখের নরম আতিশয্য,
নকলকে আসল ভেবে আলিঙ্গন করি নিরন্তর,
সাধারণ সবকিছু অসাধারণ হয়ে সম্মুখে দাঁড়ায়,
চেতনাচেতন বিচার ক্ষমতা অদৃশ্য হয়ে গেছে।
পাপের বোঝা নিয়ত বাড়ে, ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে মন,
বিষাক্ত পোকা কামড় দেয়  অহরহ অর্ধমৃত সত্তার গায়ে,
আকাশটা হঠাৎ ভেঙে পড়ে নগ্ন মাথার উপরে,
তবু স্বচ্ছতা নেই, শান্তি নেই, স্বস্তি নেই, এক আকাশ হাহাকার।








অমলিন আশা

দুঃখ পোকা সুখ কুঁড়ে খায়
মর্মে ভীষণ জ্বালা
আসছে ধেয়ে কালবোশেখী
প্রাণটা ঝালাপালা।
নীড়ের খোঁজ দিক ভুলেছি
আশার আশায় থাকি
দুখের ঘরে জমজমাটি
সুখের ঘরে ফাঁকি।
তবুও ভাবি আসবে সুদিন
ময়লা ধুলো ধুয়ে
সুখের বাণে ভাসবে জীবন
সুখ শয্যায় শুয়ে।







উত্তরের খোঁজে

জীবন জিজ্ঞাসা জিজ্ঞাসা হয়েই পড়ে থাকে,
আষাঢ়ে গল্প আগাছার মত মাথা তোলে,
প্রকৃতের বহিরাবরণ নারিকেল ফল সম,
সকলের মনেই পাকা বেল আর কাকের কাহিনী।
কোথায় দাঁড়িয়ে আছি জানা আছে কি?
চেয়ে দেখো শরীরে-মনে নর্দমার কীট জমে আছে,
সুগন্ধি দ্রব্যে আকাশ-বাতাস সুগন্ধিত,
কিন্তু অন্তঃকরণে পাঁকের গন্ধ ভেসে আসে।
আড়াল করে বাঁচা নিত্যনৈমিত্তিক,
মৃত্যুর ঘ্রাণ নরম সুখের ডানা ভাঙে,
অনন্ত শয্যায় শায়িত ভীষ্ম হতে হতে
খুঁজি পার্থকে, এক বিন্দু শীতল বারির জন্য।
যমদূত নটরাজ নৃত্য করে অহরহ,
নিথর সতীর দেহ সম কাঙ্ক্ষিত পুণ্যের দেহ,
কবে কোন্ নারায়ণ ছিন্নভিন্ন করেছে শব,
আজও খুঁজে চলি গতিশীল জগতে অমূল্য উত্তর।








জানা অজানার ইতিহাস

আসা যাওয়ার মধ্যিখানে কিছু বিরতি থাকে,
সেই বিরতিতেই অভিনয় চলে কত,
মান-অভিমান অন্তরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে,
কত রসের প্লাবন ডেকে আনে নিরন্তর।
সভ্যতার চাকচিক্যের প্রলেপ নজরকাড়া,
সমাজের অর্ধমৃত দেহ আর কম্পিত হয় না,
পাতাবাহার গাছে ফল নেই, ফুল নেই,
নিষ্ফলা অভিনয় বড় একঘেয়েমি লাগে।
পথ চলতে চলতে মন বড় ক্লান্ত হয়ে ওঠে,
আবাহনের মাঝে বাজে বিরহ রাগিণী,
হিসেব নিকেশ সব ভুল হয়ে যায়,
দুদিনের জীবন জুড়ে গড়ে ওঠে জানা অজানার ইতিহাস।