সবর্না চট্টোপাধ্যায়
ভোর ১
বিষাদের শিশির নামে
পিছল কার্নিশে মৃত সুখ।
হেমন্তের অন্ধকারে
মৃত্যুরা কথা বলে। গুটিশুটি
চাঁদের আত্মহত্যা দেখি...
সঙ্গমের পর সূর্য পাড়ি দেবে ঠিক
আরও দূর
মৃত্যুর উঠোনে সেদিন রৌদ্র
উল্লাস...
চিল
সংকোচ মাখা দুমুঠো বিবেক
থম মেরে গেছে পৃথিবী।
সন্ধে হলে পাল্টে যায় সাপেদের
চলাফেরা।
লক্ষ্মীর ঝাঁপি খোলে মৃত হাসানের
বউ। চোখে তার
দাঙ্গার ধর্মহীন ঈশ্বর।
শশ্মানের পাশ থেকে রোজ ধোঁয়া ওঠে।
বুড়ো শিবের থানে হত্যে দিচ্ছে যে
দুই ভিনদেশী,
সত্যি কি ঈশ্বর জানেন কার রক্তে কত
বিষ?
উড়ন্ত চিলের ঝাঁক
জ্বলন্ত আকাশ।
তবুও বুকে টেনে নিয়ে
মা’রা বলে ওঠে ঠিক,
‘ ঘুমো খোকা ঘুমো’।
ডুব
হঠাৎ আটকা পড়ে যাই বৃষ্টিতে
একবার দেখা হত যদি
আবঝা আলোয়
বিকেল নামিয়ে রাখে চোখ
কথা হল না আর। ভেবেছিলাম
যেতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়বে ঠিক।
বাঁশবনে শনশনে হাওয়া
ঝুমুর বেজে ওঠে।
আকাশের দিকে
আকর্ষ বাড়িয়েছে গাছ।
ডুবে যাওয়ার আগে
শেষবার ছোঁয়ার চেষ্টাটুকু ….
বাবা
(উৎসর্গ শ্বশুরমশাই)
এভাবে যেতে দেখিনি কাউকে
হেমন্ত রাত। ঠান্ডা লাগছিল খুব।
আর তোমার শরীর জুড়ে বরফের চাদর।
বাবা বলে ডেকেছি যাকে একদিন…
শুয়ে আছো, যেন
মার্বেল। সাদা।
বলিরেখাগুলো মিলিয়ে গিয়ে ক্ষীণ
চোখের গভীরে ধুধু মাঠ
ফুটবল খেলে
সবুজ ফরিদপুর…
মাছ ধরে আনে শিবুকাকা।
আমি দেখি মাটি থেকে ওঠে আসে পোকা
আর বাবা তুমি, জমে
যাচ্ছ চুপিচুপি।
আঙুল ছেড়ে দিই
সাদা চাদরে ঢাকা। বোজা চোখ
বাবা কাঁদছেন, যেন
ঈশ্বরের পায়ে!
চারখোল
আচমকা ছুটে গেল গাড়িটা
ধোঁয়ায় মুখ ভিজে যায় আর
খিলখিলে হাসি হাসে চারখোল।
লুকোচুরি খেলো থেকে থেকে
অর্কিড, ঝুলে
থাকি
রোদের আশায়…
কফি দিয়ে গেলে। নরম ঠোঁট। আর
বুকের ওপর গরম নিঃশ্বাস….
যতবার তোমাকে দেখি,
উড়ে আসে হলুদ ক্যানারি
চোখ তোলো। যতদূর পাহাড়ের বুকে
মাথা রাখে মেঘ, আমি
আরও দূর থেকে
চুম্বনে ভেজাই প্রতিরাত । আর ভোর
হলে
ভাবি, এখনও পাহাড় রয়ে গেছে দুজনের
মাঝে।