মতিউল ইসলাম
বড়ো আমোদে আছি
বড়ো আমোদে আছি হে বড়োই আমোদ,
নিত্য নতুন খবরে।
টেবিল চাপড়ে উচ্চস্বরে জাহির মত।
ভেঙ্গে পড়া সেতু, ধর্ষিতার
লাশে
বড়োই রসেবসে আছি।
সাবাস মিডিয়া
নিত্য নতুন চর্ব্যচোষ্যে প্রাতরাশ থেকে
রাত্রিকালীন আহার।
ঢেকুর তুলি সশব্দে।
সমকামী থেকে পরকীয়া, মাঝেরহাট
থেকে ইসলামপুর।
দিনের আয়ু ফুরোতেই বদলে যায় খবরও।
বড়োই আমোদে আছি হে বড়োই আমোদ।
যে ছেলেটা চাকরি পেল স্কুলে
বিসমিল্লার গলদ গেরোয় আটকে
ঘুরতে থাক মঙ্গল থেকে শনির কানাগলির গোলকধাঁধায়।
সন্তানের পাশের বালিশ ফাঁকা হলেই
প্রতিবেশী চিৎকার করে পরকীয়া।
বিচিত্র খবরের ঊর্দ্ধগতি টি আর পির সাথে
ঊর্দ্ধবাহু হয়ে ধেই ধেই নৃত্য করে
বড়োই আমোদে আছি হে বড়োই আমোদ।
সংবাদ পত্রের এককোণে
চোখে না পড়া ছোট্ট খবর
ওজোন স্তর আর নেই।।
বিপরীত চলন
তোর সাথে কতোদিন জমিয়ে ঝগড়া হয়নি,
কতোদিন চোখের জলে নাকের জলে
মাখামাখি
মুখখানি দেখি নি।
কতো দিন স্পর্শ নিই নি তোর শরীরের,
আমার দুদিনের না কাটা দাড়ি দেখে
কতোদিন বলিস নি পাগল একটা।
স্মৃতি তে পাথর চাপা দিয়েও লুকাতে
পারি না
অশ্রু,
তোর ঘর বাঁধার স্বপ্ন গুলো ঝুল হয়ে
ঝুলে আছে
আমার স্যাতস্যাতে নোনা দেওয়ালে।
লাল নীল স্বপ্ন গুলো কবেই হয়েছে
বিবর্ণ,
কবরে গজিয়েছে ঘাস, হাড়ে
ধরেছে ঘুণ,
খসে গেছে হাজার তারা,
তুই আগের মতোই খুনসুটি করতে করতে
আকাশের তারা হয়ে গেছিস,
আর আমি তোর দিকে চেয়ে চেয়ে
মানুষ থেকে ঘাস,আর
ঘাস থেকে পাথর।
মাঝে অভিব্যক্তি আর অভিযোজনের
হাজার বছরের বিপরীত চলন।
বয়েস বাড়ছে
বইয়ের পাতার ভাঁজ ছিঁড়ে যাচ্ছে
দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে,
ইতিহাসের পাতায় সহস্রাব্দের
অন্ধকার,
বয়েস বাড়ছে।
সূর্য ঢলে পড়ছে পশ্চিম দিগন্তে,
কতো পাখি নীড়ে ফিরলো না,
অন্ধকার আসছে নেমে,
বয়েস বাড়ছে।
চলে যাবার প্রস্তুতি শরীরের
প্রতিটি কোষে,
বাকি রইলো হাজার কাজ,
তবু একটি দিনের প্রার্থনা
বুভুক্ষের মতো,
বয়েস বাড়ছে।
ভীষন একা তবু সকলের সাথে থাকার
অভিনয়,
নদীর পাড় ভাঙ্গছে,
লোকালয় সরে যাচ্ছে দূর থেকে দূরে
বয়েস বাড়ছে, মায়া
বাড়ছে,
দিন ফুরিয়ে এলো।
টিউলিপ
আমি তো চেয়েছি ধানগাছের
আগায় লেগে থাকা শিশিরের মতো
তোমার জড়িয়ে থাকতে,
কিন্তু তুমি সূর্য হলে।
আমি তো শামুখের খোলের মধ্যে
গুটিয়ে নিয়েছিলাম আমার অস্তিত্ব
তুমি মুক্তোর খোঁজে আমার অনাবৃত
করলে,
সূর্যের তাপে আমার অনাবৃত শরীরে
সহস্রাব্দের পোড়া দাগ।
যেন হিরোসিমা নাগাসাকির ধর্ষিতা
ভূমি,
আমি টিউলিপ হতে পারলাম না।
পদ্মের জন্মকথা
ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছি
হাতের মুঠোয় উঠে আসছে পাঁক,
মুঠোর ফাঁক দিয়ে পিছলে যাচ্ছে
কই মাগুর আর জল,
ঠিক যে ভাবে পিছলে যায় সফলতা।
নিজের অপারগতায় প্রবল আক্রোশে
হিসহিস করছি, আরো
ঘোলা করছি জল,
জলের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে অহংকার
ডুবে যাচ্ছে বুভুক্ষ হৃদয়।
ডুব দিচ্ছি একবুক প্রশ্বাস নিয়ে
শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে উঠছি না
চেতনা অসাড় হয়ে আসতেই...
কখন যেন আমার বুক জুড়ে
শুভ্র পদ্মের মেলা বসে গেছে,
একশো আটটি পদ্ম।