বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮

সোমা লাহিড়ী মল্লিক


সোমা লাহিড়ী মল্লিক

আমি আর কবিতা

কবিতার পুকুরে ডুব দিয়ে যেমন পেয়েছি শালুক, পদ্ম,
তেমনি আবার মাছরাঙার মতো ঠোঁট ঢুকিয়ে গভীর জল থেকে
কাদামাটি আর পাঁক ছাড়া কিছু তুলতে পারিনি
বিধাতার ঋণ শোধ করা বড় দায়, বাসা বাঁধছে অতৃপ্তি
আমি, কবিতা নামক এক গল্পের রচনা করে চলেছি ক্রমাগত
এ আমার অবোধের ঘরে জমে ওঠা বোধ, অবুঝের আবেগে বোঝা
পুকুরের খনন আজও শেষ হয়নি, জলেরা করছে কোলাহল,
হলাহল পান করে মহাদেব বসেছেন ধ্যানে, নীল ব্যপ্ত হচ্ছে দিকে দিকে
আমার মন ক্যামেরায় বেহাগের সুর, কানের দুলে গন্ধরাজ
পদ্মপাতায় টালমাটাল শিশির, প্রতিক্ষা করছে শ্রাবণের
আমার চোখে প্লাবন নেমেছে, শ্রদ্ধাবোধে আটকে আছে ভালোবাসা
আমি মিশে গেছি কবিতার শরীরে, মিশে গেছি অনন্তে
তবে কেন আজ এ হাহাকার,
কেন আজ অনন্তের মাঝে আমার এ বিলাপ!!







হারব না

আমি থামব না ভাই থামব না
তোমরা শত দুঃখ দিলেও
কাঁদব না ভাই কাঁদব না।
ভয় পেয়ে ওই ঘরের কোনে
থাকব না ভাই থাকব না
অপমানের জ্বালা নিয়ে
মরব না ভাই মরব না।
বোকার মত পরের কথায়
চলব না ভাই চলব না।
বিপদ বাধা যতই আসুক
হারব না ভাই হারব না।








লজ্জার ওপারে

হাত বাঁধা আছে দড়ি দিয়ে
বাঁধা হাতে দুই ফুটের মোটা লাঠি
ব্যবহারের মাপকাঠি লম্বদণ্ড
সুদৃশ্য পড়দা দিয়ে ঢাকা বড় ঘরের দরজা
কালো কাপড়ে ঢাকা তুলাদণ্ডের চোখ,
দিস্তা বোঝাই কাগজ আর
বিচারাধীন আত্মপ্রত্যয়।
ঘেরাটোপ পেড়িয়ে একা মনুষ্যত্ব
নতজানু হয়ে আশ্রয় চাইছে ভালোবাসার কাছে
মানুষ পাশবিক হলে সাজা হয়,
পশুর মানবিক আবেদন হয় বিচারযোগ্য
সময়ের ওপারে নারী আজ বিদ্ধ্বস্ত
কার কাছে সুবিচার চাইবে!
পুরুষের কাছে পরীক্ষা দেবে কি সতীত্বের!
পঞ্চ স্বামী পারেনি পাঞ্চালীর আব্রু বাঁচাতে!
এক স্বামী কি করে পারবে আজ!!
কোথা তুমি কৃষ্ণ কুটনৈতিক সখা,
বন্ধু চাই পাশে লজ্জার ওপারে।







মানুষ হয়েই থাকবো

এ পৃথিবীতে কেউ কারো নয় জেনেছি আগেই
নাহলে আজ যাকে তুমি খারপ বলছ
কালকে আবার তাকে নিয়েই দল গড়ো?
আজ যে চরিত্রহীন কাল সে চরিত্রবান !
তার মানে তো একটাই, দুমুখো তুমি-
গিরগিটির মতো রং বদলাও।
তাইকি তুমি এখনো বংশধরের মুখ দেখোনি!
মানুষ জন্মাতে ভয় পাচ্ছে অমানুষের ঘরে,
যদি একটা মেয়েমানুষ ভুলক্রমে জন্মে যায়
তাকেও কি তুমি ধর্ষণের রাস্তায় ঠেলে দিয়ে
পৌরুষত্ব দেখাবে ; তোমার মেয়েকে কি
ভাষাহীন করে দেবে তোমার লোভের চাবুক দিয়ে?
তোমার দেহে গিরগিটির রক্ত লেগে আছে
ওই রক্ত দিয়ে মানুষ পাবেনা, পাবে আর একটা গিরগিটি,
সেও ভাষা পাবেনা, কথা বলবেনা, শুধু রং পাল্টাবে,
আমি সরীসৃপ জন্ম চাইনা তাই গিরগিটিদের রংহীন করছি
যে ভাষা কেড়ে নেয় সে মানুষ হতে পারেনা
আমি অমানুষ চাইনা তাই পাশে মানুষকে ডাকছি।








বিচারাধীন সময়

কিছু কথা সব সময় বলা যায় না
বলতে গেলে আমাদের চারপাশে
নড়েচড়ে উঠবে মৃতদেহ।
তাদের কারো হাত নেই, কারো পা নেই
কারো মাথা নেই এমনি সব বিভৎস দেহ-
আরো ভয়ানক জ্যান্ত শব,
সবকিছু আছে অথচ নির্বাক
মরার উপরেও চলে খাঁড়ার ঘা
যে মেয়েটা তিন দিন কোমাতে ছিলো
তার মস্তিস্কের মৃত্যু হয়েছিল,
এখন সে জিবিত, কোষগুলো অক্সিজেন পেয়ে
প্রাণ পাওয়া দেহটাকে টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছে,
অনেক ঘটে যাওয়া অঘটনের কথা মনে করাচ্ছে
নিজেকে হত্যা করতে চেয়েছিল যে ভালোবাসার অভাবে,
আজ আবার তাকে হত্যা করল অন্ধবিশ্বাস
এখনো বেচে আছে সে, হত্যাকারী বিচারাধীন
অনেকগুলো হত্যাকারী ঘুরে বেড়াচ্ছে চারদিকে
কার কার বিচার হবে!
তবে শেষ থেকে শুরু হোক,
প্রথম সাজা পাক শেষ আততায়ী
যাকে সে বেশি বিশ্বাস করেছিল।
নিজের সাজাও হবে, নিজের ক্ষতির জন্য
ভালো মানুষ হবার জন্যেও শাস্তি দরকার
বিশ্বাস ঘাতক যেমন দোষি, বিশ্বাসকারি তেমনি
এমন অসময়ে বিশ্বাস যখন বিচারাধীন
যখন যুদ্ধের দামামা উঠছে বেজে
সময় বলে উঠছে বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সুচাগ্র মেদিনী
কালের গহ্বরে পতিত হচ্ছে মাতৃজঠর
কবে অকালে মাটি ভেদ করে বের হবে সুবিচার
আর প্রতিক্ষায় কালপাত করছে সংবেদনশীল মানবকুল।