ইন্দ্রাণী সরকার
লিপি ও প্রতিলিপি
আমি অনবরত কড়া নেড়েছি, কিন্তু
তুমি সাড়া দাও নি।
আমি ভগ্ন থেকে ভগ্নাংশে সরে গেছি
আমি তোমার নৈশব্দপ্রিয়া হয়েছি
কবিতাগুচ্ছে জমিয়ে রাখি লিপি আর
প্রতিলিপি
তোমার কপাল থেকে সরে যায় একগুচ্ছ
চুল
আমি পাতায় তুলে রাখি তোমার বিষাদ ঠোঁট
অপূর্ব আলোয় ভরে যায় কনকফুলের
বাগান
আমি চৌখুপি ইটের ওপর এক পা এক পা
রেখে
অতিক্রম করে যাই গোটা একটা গ্রাম্য
চত্বর
সাঁকো পেরিয়ে নদীর ওপারে গিয়ে দেখি
অপূর্ব এক শহর।
রূপান্তর
দুর্বোধ্য কোনো বিষয়ের মত তোমায়
পড়তে চেয়েছি
সকালের টুপটাপ ঝরে পড়া ফুল,
বিকেলে মুদে আসা পদ্মকোরক
রাতের রজনীগন্ধার আতর সুবাস
বিপন্ন কৃষকের অপারগ কৃষিকাজ আর
খেয়াপারাপার
সবই গতানুগতিকতার কোনো সুচারু
নিয়মে
অভিধান খুলে শব্দের পর শব্দ
খুঁজেছি তোমায় মানাতে
পরিশেষে চোখ বুজে নিজের মনে প্রবেশ
করে দেখি
রূপ থেকে রূপান্তর, দেশ
থেকে দেশান্তর,
গ্রাম থেকে শহর, সেখানে
মানুষ আছে, শুধু তুমি আমি নেই।
পর্ণকুটীর
পর্ণকুটীরে আসিয়া দাঁড়ায়েছ
কে বা তুমি পথিক ?
বারেক ফিরায়ে চাও
আজি এ কোজাগরী জ্যোৎস্নাপ্লাবিত
রাতে
তোমার পায়ের মৃদুপরশটুকু দিয়ে
আমায় পূর্ণ করো
তোমার সুমনে আমার এই কিঞ্চিৎ
হৃদয়ের
ছায়াটুকু এঁকে যাও
দেখো সুনীল আকাশ, আঁধারে
প্লাবিত,
পল্লবিত আম্রকানন, হাসিভরা
মম
তন্ময় মুখশ্রী, কাজল
পেতে রেখেছি দু চোখে
একবার এই সুহাসিনী বদন
তুলিয়া নাও ও মোর বকুল ফুল
আমায় গৌরবান্বিত কর হে প্রভু !
শ্রীতে ভরে উঠুক আমার এ শ্রেয়সী
নন্দিত কানন।
প্রেতাত্মার ঘুঙুর
আসলে চেয়েছিলাম প্রেতাত্মার
বাতাসের মতন
তার ঘুঙুর সর্বত্র বাজুক
সব অলিগলি, চোরাগলি,
কানাগলি
শুধু তার নিজের গলি ছাড়া।
আমরা নড়ব না —
আমরা হাইওয়েতে দাঁড়াব,
ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়াব,
কবরের পাশে প্রেমিকার সাথে
রতিক্রিয়া করব,
নর্তকীর ঘরে অম্ল-মধুর চেখে যাব,
বিঁড়ির দোকানে জটলা করব,
ফ্যানেদের সাথে মিশরের ফারাও হয়ে
ফ্যানে ভাত খাব,
একদম নিজেদের আসন থেকে নড়ব না।
ল্যাপটপ মোবাইল থেকে জনে জনে
শয়ে শয়ে কবিতার তীর ছুড়ে দেব।
শুধু সে আহ্লাদী প্রেতিনী হয়ে, আপন
ঘরবাড়ি ভুলে
নর্তকী হয়ে আমাদের চোখের সামনে
দিয়ে নেচে নেচে বেড়াবে।
দিন ফুরিয়ে রাত
ঘুমে জড়ানো অন্ধকার ভোর
আকাশে ছিটেফোঁটা আলোরও অভাব
চোখের পাতায় ঘুমের রেশ
অবকাশ নেই কোন আলটপকা স্বভাব।
অন্ধকার দিনের সঙ্গে সখ্যতা
বাহারি ফুল ফোটানোর বেহিসাবী
ভাবনায়
আঁধার মুছে আলোয় ভরবে দিন
এই ভেবে মন চেয়ে দেখে তার আয়নায়।
ভোরের আলোয় জ্যোছনা নামে
অনেক দূরের ওই নীল আকাশের কোনে
পুবের আকাশ যেন রক্তে রাঙা
নতুন দিনের শুরুতে এমন মধুর ক্ষণে।
দিনের কাজে নিত্য মত্ত মনন
জানিনা কেমনে কেটে যায় অনন্ত এই
বেলা
দিনশেষে মধুর এক আবেশে
মন ভরে আকাশে হেরি আলোছায়ার খেলা।