শর্মিষ্ঠা
মুখার্জি
অধিকার
কিছু
কথার আড়ালে যদি বৃষ্টি এসে উড়িয়ে দেয় মনখারাপের মেঘ,
পাথরের
উপর দিয়ে চলে যাওয়া প্রবহমান নম্রতাকে যদি কাঠিন্য বলে ভুল করো,
তখন
তোমার বোহেমিয়ান স্বপ্নগুলো অগোছালো হয়ে আমার স্রোতের বিপরীতে বাষ্পাকারে উড়ে যায়
দিগন্তের সাথে নীলের মিশেলে,
কত
রাত তাকে আটকে রেখে শোনাতে চেয়েছি আমার নির্ভার কথকতা,
ব্যর্থতা
পেরিয়ে জ্বালতে চেয়েছি আলোর উৎসমুখ--
সবাই
যখন ঘুমিয়ে পড়ো,
আমি অতলান্ত জাগি
বাতাসের
কানে কানে ফিসফিস গুঞ্জনে,
বুকের খরা চৌচির করে কবিতার চাষ করি,
পীতবর্ণ
উত্তেজনা ডুকরে ওঠে পৃষ্ঠার ওপর!
ঘোর
ভেঙে দেখি রজনীগন্ধা সুবাস ছড়িয়েছে শীতল জলের স্পর্শে।
তখনও
ক্লান্তি নেই তোমাতে আমার
আমার
ঘুমন্ত মুখের উপর বিস্তার নেই কারো,
না
কবিতার,
না তোমার।
ইকো-
পর্যায়
ভার
সামলাও নিজের
কতদিন
আর বইবে লাঙল,
ফসল বিষের
ছোবলে
যেদিন শেষ হবে ঋণ পৃথিবীর--
সেইদিন
মনে পড়বে চাষার ব্যাটা
এক
অক্ষর লিখতে শিখিসনি,
বেমালুম
পানসে হয়ে যাবে জীবন;
একদণ্ড
টিকবে না মন,
হোগলা পাতার বেড়ার ঘেরায়!
নিরবিচ্ছিন্ন
ঠান্ডা ঘরের কম্পিউটার মর্গে জীবনের রকমারি ঘ্রাণ,
হাজার
বছরের ঝড়ঝাপটা নিয়ে প্রবাহের সঙ্গী --
বুক
দিয়ে আগলানো উচ্চ ফলনশীল ধান
ষাঁড়াষাঁড়ির
বান আর আশ্বিনের ঝড়ে
ভাসমান
নাবিক সবুজ বিপ্লব হলুদ করে দেবে;
চারিদিকে
বিষ আর বিষ
তারই
মাঝে শাল সেগুন দারুচিনি পলাশ
মাথা
উঁচু করা আশ্চর্য যত জড়িবুটি
পাখির
ঠোঁট ছুঁয়ে মাটি কামড়ে যুগান্তরের কানে কানে ফিসফিসিয়ে যায়--
সব
শিকড় তো মাটির কাছেই ঋণী;
সাধের
বীজ,
বাঁচার রসদ টুকু নিয়েই বাঁচতে চায়
অবক্ষয়ের
দিনে;
অট্টালিকার মত,
উত্তরণের
দুনিয়ায় স্তব্ধ কৃতজ্ঞতা!
তবু
বাঁচি মাটির কাছাকাছি
তপ্ত
বসুধার একবিন্দু জল,
একশ্বাস বাতাস
আর
পৃথিবীর অমলিন স্থাপত্য
সবটাই
ঋণী পুরোনো কোনো বকুলগন্ধের কাছে।
ভয়
জীবনের
পাত্র ভরে ওঠা সুধা যখন বুলি কপচায়,
মুক্তি
তখন নিজের জন্য জায়গা খুঁজে নেয়
আত্ম
আঙিনায়;
বৃষ্টি
তখনও সুর বদলায় না।
জীবনবোধের
সীমানা পেরিয়ে অধিবাস্তব ডাক দেয় বিষাদ বিকেলে
কিভাবে
থামাব'
তাকে!
পেরিয়ে
এসেছি অনেক শীত
অনেক
মেঘ সরিয়েছি জং ধরা লাঙলের ফলায়,
তবু
অদৃশ্য শিকলের ভয়,
শিরায়, মজ্জায়।
অবলোকন
সভ্যতার
গিলেটিনে যে সাবধানবাণী অনুচ্চারিত ছিল,
রাত্রি
নেমেছিল ধোঁয়াশা ঢাকা আয়নার কাচে,
অ্যাসফল্টের
রাস্তায় অহংকারী বি.এম.ডব্লু. পিছলে যায় স্পর্ধিত মধ্যরাত্রে,
চুপিচুপি
কেউ তখন বলেছিল এত অহংকার ভালো নয়।
বীভৎসতার
মোড়কে বাঁধা উলঙ্গ ক্ষয়,
ইটের
পাঁজর সরিয়ে কখনো গোলাপের সাধনা করবে না,
ঘৃণিত
ভগ্নস্তূপ সংক্রমনের গ্লানি ছুঁয়ে
মুখ
ঢেকেছে নীলাভ লজ্জায়,
তাই, নিভৃত
শালবনে আজও শোনা যায় মর্মরধ্বনি
আধুনিক
যন্ত্রণা তামার তবকে
নিরন্তর
পাঠোদ্ধার করতে করতে
অতীতের
ফসিল ঘেঁটে উদ্বোধন করবে
কালহীন
এক কবন্ধ প্রাসাদের প্রস্তর।
দু-এক
টুকরো আগুন
ধিকিধিকি
জ্বালছে যারা আজও
তাদেরই
তো ভালোবেসে ইচ্ছেপূরণ বলে ডাকি।
বৃষ্টি
আজ নতুন কৃষির দাবী নিয়ে এসেছে,
চাঁদের
আলোয় তাই ঝলসে ওঠে নিবিড় নির্মাণ।
দহন
ক্ষতস্থান
ফুঁড়ে আসা অব্যক্ত অবসাদে
অধর্ম
যদি বা জানত,
তার মধ্যযাম পেরিয়ে গেছে,
মাছের
কঙ্কালের সাদা সাদা হাড়ে,
আঁশটে গন্ধ মেছুয়াদের টিমটিমে ঘরে,
অস্থির
পতঙ্গের দল শুষে নিতে ছুটে যায় আলেয়ার আলো
কুয়াশা
জাড়ানো মেদুরতায় নিজেকে শঙ্খ ঘোষ মনে করে উন্মত্ত প্রপিতামহ,
পলাশ
ফোটা আলোতে দেখা যায় দূর বসন্তের অঞ্চল
অস্তাগত
শতক পেরিয়েও নতুন দিনের শুরু রোজই।
তবু
পৃথিবীর ঘোর দুর্দিন
কিছু
ব্রহ্মতালু পুড়ছে প্রখর দহনে,
নতুন
সূর্য তবু দিক বদলায় না।
অসুস্থ
মনের টানাপোড়েন আর রক্তবীজ বিষ নিহিত শ্বাসপ্রশ্বাস দিগ্বিদিক অস্থির ছুটোছুটি
করতে থাকে শিকড়ের খোঁজে।
সজীব
যত প্রাণ,
জাফরানের মত দামি তারা
মালঞ্চে
একদিন বসন্তের গানে নতুন পৃথ্বী গড়বে নতুন প্রত্যয়ে,
সেখানে
আঁশটে গন্ধে মাছের কঙ্কাল ভাসবে না আকাশে---
চিতাপোড়া
কাঠের ভগ্নাবশেষ স্থির আকাশে নিশ্চুপ হয়ে গুণে যাবে নীহারিকাপুঞ্জ,
জীবনের
রূপকথা লেখাতে তারই তো অধিকার
যে, ঝিনুকের
মাঝে থাকা একখন্ড মুক্তো।