রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮

মন্দিরা লস্কর


মন্দিরা লস্কর

আবর্তন

পৃথিবী বদলায়নি,
ঠিক যেমন ছিল তেমনটাই আছে।
একই কক্ষপথে গোল গোল ঘুরছে।
ঠিক যেমনটা আমার শোবারঘর কখনো  বাইরে,
আবার বাইরের বৈঠকখানা ভেতরে চলে আসে।

পৃথিবী বদলায়নি,
যখন দেখি  কলেজ পড়ুয়া কোন মেয়ের শুধু আবছা অন্তার্বাসটাই চোখে পড়ে।
আর একদল যুবক দুই হাতওয়ালা জীবের মত আবার গুহার পথে ফিরে যাচ্ছে।
          






ফেরারি

আরো দূরে চলো যাই
যতটা দূরে গেলে তুমি আরো কাছে আসবে।
আমি উবু হয়ে দেখি ছোট থেকে ছোট হয়ে যাওয়া এ  শহর।
জীবনমুখী গল্পে সাজানো  জনপদ।

অজুহাত না পেয়ে কত বিকেল ফিরে গেছে কথা না বলে।
কত কত সন্ধ‍্যা অপেক্ষায় নিশ্চুপ‌।‌‌‍‍‍‍‍‍
কাছে কাছে ঘেঁষে আছে মেঘলিবন্দ চা বাগান, হাওড়ার ভাঙা পাড়।
এখনো ছেঁড়া আ্যলবাম মুছে রাখে দিনের শেষে।

দূরত্ব পাশ ফিরে থাকা কাঁধে
কিছু খুচরো সময় জমা আছে নীল স্লিং ব‍্যাগেটায়।
গা ছুঁয়ে উবে যায় নি প্রিয় স্পিঞ্জ পারফিউম।
সকালের শিরোনামে লিখে দেই পলাতক,
গা ঢাকা দিয়ে ফেরারি হই।






দেখা হবে

হঠাৎ কখনো যদি হয় দেখা তোমার সাথে
খুব কাছে, নয়তো খানিক ব‍্যবধানে নয়তো অনেক দূরে। নক্ষত্রের মত।
ঘুর্ণায়মান দিনরাত্রি থেকে আলোক বর্ষ দূরে।

তুমি মেসোপটেমিয়ার থেকে ঘুরে আসবে প্ররিব্রজেকের মত,
ইতিহাস জমিয়ে রেখে দেশ থেকে দেশান্তরে।
অন্ধকারের দিস্তা খুলে
ব্রেইলি অক্ষরে লেখা আলোর উপাখ‍্যান হাতে।

মুখস্থ পৃষ্ঠা ভুলে গেলে
দেখা হবে হয়তো তোমার সাথে।
গুহা, কন্দর পেরিয়ে আদিম ঝলসানো চোখে।
যুগান্তরের ভগ্নাবশেষ থেকে তুলে আনা কোন এক নতুন সভ‍্যতার শুরুতে।







খোলা জানালা
 
                      (১)

উত্তরের বাতাস আসে পরিযায়ী গন্ধে।
ফু দিয়ে উড়াতে চায় পালকের মত।
নড়ে না কিছুই, এতোটা জমাট সব।
পাথর ভেবে ছুঁড়ে দিতেই দেখি
শিরায় শিরায়  অজস্র ফাটল।

                      (২)

বিভাজন চাইনা,
তাও ভাঙতে হয়, বৃক্ষ জীবন।
কোষে কোষে বাঁচার মন্ত্র।
ঝড় থামলে কলম হয়,
টুকরো টুকরো নতুন জীবন।

                    (৩)

ধূলো উড়লে ঝাপসা হয় সব
খোলা চোখে অজানা অসুখ।
ধূলো ঝেরে উঠে আসে প্রিয় মুখ
মাঝে বিরাট শুন‍্যতা,
দূরত্ব দেখায় ময়লা তর্জনী।

                     (৪)

নিঃসঙ্গতার জানালায় দাঁড়ায় না বাতাস
বেহিসেবী আনাগোনা। ভূত, ভবিষ‍্যৎ।
ঘর থেকে বাইরে, বাইরের থেকে ঘরে
হিসেবে হাঁটে সময়।
            






রিসাইকেল

উচ্ছে করলার যাপন শেষে
এক কৌটো ইনসুলিন যেন অনেকটা আশ্বাস‌।

মৃত‍্যুর ভয়ে কেবল বেঁচে থাকা।
খুব ধীরে ধীরে আমরা মানুষ হয়েছি আবার ধীরে ধীরে ফিরে যাচ্ছি একই পথে।
ঠিক যেমটা রিসাইকেল হয়।
নিজেরাই নিজেদের ব‍্যবহার করছি।
সারাই করছি,শান দিচ্ছি।

প্রতিদিন নতুন হয়ে নিজের সামনে দাঁড়াই।
এতটাই নিখুঁত মেরামত,
জন্মের দাগ খুঁজতে ভেঙে গুড়িয়ে যেতে হয় ঝুরঝুরে মাটির মত।