রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮

সুদীপ্ত বিশ্বাস


সুদীপ্ত বিশ্বাস

বাক্যহারা

রাতদুপুরে আসছে উড়ে একটা দুটো স্বপ্ন পাখি
হারানো সেই সোনালি দিন, এখন একে কোথায় রাখি!
আবছা আলোয় চমকে দেখি সেই যে তুমি মেঘের মেয়ে
কলসি নিয়ে দুপুরবেলা একটু দুলে ফিরছ নেয়ে
হাল্কা রঙা কল্কা শাড়ি, দুলছে বেণী ইচ্ছেমত
স্তব্ধ চোখে থমকে থাকি, আরে এটাই সেই ছবি তো!
সেই যে যেটা হারিয়ে গেছে একটুখানি অসাবধানে
আজ পুরোটা রাখব ধরে, আজকে লিখে রাখব প্রাণে।
গভীর রাতে আবছা আলো, হতেও পারে চোখের ভুল
বলো না তুমি সত্যি করে,তুমি কি সেই টগরফুল?
যাচ্ছে খুলে স্মৃতির পাতা,ডাগর চোখে দেখছি খালি
অরফিউস ও ইউরিডিসি, বুদ্ধদেব ও আম্রপালি...
স্বর্গ বুঝি আসল নেমে আবছা আলো ঘরের কোণে
না বলা কথা অনেক ছিল পড়ছে না যে কিছুই মনে।
হঠাৎ দেখি কাঁদছ তুমি, তোমার চোখে অশ্রুধারা
তোমার মুখে আমার ছায়া আনন্দেতে বাক্যহারা।







আজকাল

বিপদেরা চুপচাপ ওত পেতে থাকে,
নদীর প্রতিটি বাঁকে-বাঁকে।
সাবধান! সাবধান মাঝি
শ্বাপদের চেয়ে হিংস্র মানুষের কারসাজি।
মুখোশের আড়ালেতে ঢাকা সব মুখ
ঠকাতে শেখেনি যে,সে উজবুক।
আলো নেই,
চারিদিকে জমেছে আঁধার চাপচাপ
মানুষকে ভালবাসা ভুল নয়, পাপ।







অন্বেষণ

সাদা পৃষ্ঠার সামনে চুপ করে বসে আছি
যদি আসে... যদি ধরা দেয়
প্রজাপতির মত রঙিন একটা কবিতা!
যাকে ছুঁতে গেলেই উড়ে যায়
আনমনা হলেই চুপটি করে পাশে এসে বসে।
লুকোচুরি খেলতে খেলতে
রাত নিঝুম হল
তীব্র হল ঝিঁঝিঁর ডাক
চাঁদটাও ঢলে পড়ল দিগন্তে
তবু আমি চোখ জ্বেলে
রাতের পেঁচার মত খুঁজেই চলেছি
মেঠো ইঁদুরের মত
একটা জীবন্ত কবিতা...








কালচিত্র

নদীতেও সেই নাব্যতা আর নেই
কপট মানুষ মুখোশ তো পরবেই
মিথ্যে ভেজালে ভরে গেছে গোটা দেশ
আধমরা হয়ে তবুও তো আছি বেশ!
বন্ধুরা সব বন্দুক নিয়ে খাড়া
সুযোগ পেলেই শ্যুট করে দেবে তারা
চিয়ার্স বলে বাড়ায় মদের গ্লাস
খাঁটি অভিনয়ে চেনায় নিজের ক্লাস!
প্রেমিকাও জানে কিভাবে টানলে তবে
মাথা থেকে ধড় এখনি আলাদা হবে।
ভাই এর হাতেও লুকানো রয়েছে ছুরি
ধর্ষণ, খুন, রাহাজানি, জোচ্চুরি
বেড়েই চলেছে দিনরাত অবিরত
সবার মনেই মনখারাপের ক্ষত।


           




ফেরা 

মেঘ চাইতেই জল আসে না
জীবন বড় শুখা
অসম্ভবও চাইনি কিছু আমি।
যা ছিল তাও হারিয়ে গেল
হঠাৎ মরুঝড়ে
এখন চোখে স্বপ্নও নেই দামি।
অতীত এখন আকাশকুসুম
মন খারাপের খাতা
বর্তমানও দেয়াল হয়ে খাড়া,
অন্ধকূপে বন্দী হয়ে
মিথ্যে ছুটে মরি
হাজার ডেকেও পাই না কারও সাড়া।
মুখোশধারী বন্ধুরা সব
ট্রিগার দিল টিপে
বন্ধুতো নয়, বন্দুক সব আজ।
স্বার্থ লোভের হিংস্র থাবায়
মানুষ এখন পশু,
এখন মানুষ বড়ই ধাপ্পাবাজ।
চাইতে চাইতে পাথর হয়ে
চাই না রে আর কিছু
ভুলেই গেছি চেয়েছিলাম কি যে!
ঘুরতে ঘুরতে হন্যে হয়ে
আর ঘুরি না আমি
ফিরেও গেছি নিজের কাছে নিজে।







ভার্চুয়ালিটি

মানুষ এসেছে মানুষের কত কাছে
মুখোশের মাঝে হারিয়ে গিয়েছে মুখ,
আরাম এসেছে অনেক পশরা নিয়ে
জীবনের থেকে বিদায় নিয়েছে সুখ।

মুঠোফোন এল,মুঠোর বাড়ল জোর
হৃদয়ে-হৃদয়ে ব্যবধান গেল বেড়ে;
কত কাছাকাছি, তবু তা অনেকদূর
কাছের মানুষ মনের সীমানা ছেড়ে।

প্রতিবেশীরাও অচেনাই হয়ে গেল!
আরও বহুদূরে বন্ধুরা চলে যায়;
পরোয়া করে কে, মুঠোফোন কাছে আছে
হাজার-হাজার অচেনা বন্ধু পায়।

ভার্চুয়ালিটি, রিয়েলিটি হল যেই-
কেউ পাশে নেই,কেউ পাশে নেই কারও;
কত কাছাকাছি, পাশাপাশি বসে থেকে
মানুষে-মানুষে দূরত্ব বাড়ে আরও...






বন্ধু

খাদের কিনারে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছ।

টুসকি,একটা টুসকি দিলেই পড়ে যাব-
অন্ধকার অজানা জগতে।

পথ নেই, সামনে চলার পথ নেই;
পিছোতেও পারছিনা,
পথ নেই সেদিকেও।

একাই দাঁড়িয়ে আছি,
অমাবস্যা রাতে খাদের কিনারে।
                             হাত ধরবে  না?