রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮

তাপস গুপ্ত


তাপস গুপ্ত

কর্কটরেখা

কতবার যে নিয়েছি

সমুদ্রের হাওয়া

অঞ্জলি ভরা ফেনায় কী সব ঝিনুক খেলেছে

হাতের রেখায়,

খুশিতে আকাশ ঝরায় আলো

তুচ্ছ জরা ব্যাধি জীবনবিমায়।


সেবার

অনুকূল সফেন স্রোতে

আঙুলের ফাঁকে

জমে থাকা বালি,

গোপন মোচড়ে খোলে সিন্দুক ব্যথা

ছবিটি বাঁধা ছিল আঁচলে,

সেই গোধূলির কোমল বাতাস

খেলেছিল এলোচুলে,

সূর্য রক্তিমা মেখেছিলো

লাল পাড় ধনেখালি তাঁতে,

অক্ষয় সিঁথি রাঙা উজ্বল রেখা টানা ছিল

সংসারী মুখের ভাঁজে।

ফেরার টিকিট ছিল কনফার্ম

তবুও

কি বিনয়ী ছিল সে অনুনয়

দুদিন আরো যদি থাকা যায়

হয়ত ভীত ছিল  সমুদ্রপ্রেম

তবু সে লহরী শব্দপাত অকৃত্রিম

ভরাট ছিল সে অতীত

ছিল জলের সোহাগী ধারাপাত;


সমুদ্র ভাঁটা টানে সরে যায়

জবাকুসুমে একই সূর্যোদয়

বাকিসব যে যার নিরালায়

বালুকায় মুছে গেছে দাগ

তিথি মেনে তুমি আছো

ক্রান্তি হীন কর্কট রেখায়।






আমার প্রেমিকাকে, ২২শে শ্রাবণ

একটা জলে ভেজা তরল পাতার মতন

তোমার প্রেম চেয়েছি,

সে প্রেম শরীর কি মনের

আমার জানার প্রয়োজন ছিল না

অথবা

প্রয়োজন নেই জানার,

কত কিছু না জেনে

আমরা ঘষটে টানছি জীবন,

যদি এটাকে জীবন বলা যায় তবেই,

যখন আমার মত কেউ

প্রেমের নামে ওঁ তৎ সৎ আচমণ সেরে

তোমার বা তোমাদের মতন

নারী শরীর চাটে,

পঁচিশে বৈশাখ বাইশে শ্রাবণ

তখন ফ্লোর প্লে হয়ে

অ্যাকাডেমিক সুগন্ধি আবহ ছড়ায,

প্লেটোনিক স্তর নড়ে কি

সুনামির আদুরে ঠ্যালায়!


আমি

পিপাসার্ত এবং পিপাসার্ত,

ভুল করে ক্ষুধার্ত ভেবো না


তাহলে এসো না।






মৌন বিদ্যুৎ

(কথা হল ডিস ফিগারেসান অফ লাইফ ইজ

এ সোস্যাল প্রসেস। প্রসেস মেকস এ ম্যান।

...বাংলা?

...মানুষের বিকৃতিকরণ। জৈব এবং যৌনে। চাকে

ও চাকায়, বুঝলেন?”

ঋণ: আবুল বাশার)



সমীপবর্তী ইচ্ছে মরণ

মুলতুবি থাক এখন

সে আত্মহনন,

সময়ে পিষ্ট অনুভূতি এখন

তুমি দুর সহস্র যোজন।

অনুস্মৃতি জুড়ে এখনও সেই কাজলরেখা

মুদিত চোখে ছুঁয়ে দেখা

সেই প্রত্ন গন্ধ আবহ

যদিও লুপ্ত জীবন বাসনা নভ লোকে,

খণ্ড জীবন ধরা দিল প্রাণে

স্মৃতিময় খোঁড়া খুঁড়ি অকারণে

যদি বাঁচানো যায় কিছু কথোপকথন;

শুচি স্মিত সে শব্দ প্রক্ষেপণ

পাবে বরাভয় পরিশুদ্ধি প্রাণিত জীবন,

আঁখি কটাক্ষে ছিল ফালা করা বিদ্যুৎ প্রেরণ

অবসরে হানা দেয় স্মৃতি নিমজ্জ্ব মন।


অভিসারিকা পুরুষ মহুয়া মাতাল

বুঝেছে তখন

রত্নময় প্রেমের বিকিরণ ,

কল্পনা সাঁতরিয়ে ওপারে কল্পনা

নকশী কাঁথায় পিরীতিবোনা

কেনো জানিনা,

ডি অ্যাক্টিভেট যৌনতা

জীবন জেনেছে শায়িত স্মৃতির

বিদ্যুৎ মৌনতা।




শ্রাবণ অক্ষর

(হঠাৎ বুক চলকে সারা শরীরে রক্ত ঝরে যায । শ্বেত পাথরের মত সাদা ঘাটের প্রথম পৈঠায তারা এসে দাঁড়ায়। মেম ছাঁট ফ্রক পরণে, পায়ে চটি। কাঁধে সাদা...খুব সাদা টার্কিশ তোয়ালে। কী নরম বিলিতি পুতুলের মত অবিশ্বাস্য সুন্দর দেখায় তাদের। পৃথিবীর কোনও মানুষ তাদের ছুঁতেও পারে না। অহংকারে তাদের শরীর হেলে দোলে। তারা হাঁটে না। যেন ভেসে ভেসে সিঁড়ির ওপর দিয়ে নেমে যায় নীল জলের কাছে।

রাখী আর পাখি , কলকাতার ডায়সেসান স্কুল থেকে বাড়ি আসে বছরে একবার কি দুবার।

ঋণ - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও লোচন দাস)


ঘন অক্ষর হয়ে এসেছিলে

ভিজে শ্রাবণ ধারায়

নিটোল সে দেহ সাজাতে চেয়েছি

অক্ষর মালায়,

কত পদাবলী খেলেছিল কামনায়,

করতালি সেবায় যতনে মজেছিল সাধনে

অবুঝ তর্জনী গর্জেছিল তড়িৎ প্রবাহে

বারণ বাধায;

তুমি বুঝেছিলে এ বর্ণমালায়

হারিয়েছে প্রেম কান্তি ময় দ্যুতি তার

অবারিত নির্বাধ কামনা কলুষ

অব্যর্থ সে অনুভব নির্ভর, বলেছিলে ঘোষণায়

হিয়া নহে থির মন্মথ জ্বরে ভোর

অশ্রু ঝরেছিল কোঁকানো যাতনায

বিদ্ধ অক্ষর মল্লার মূর্ছনায়

নেমেছিল সেই শ্রাবণ সন্ধ্যায়।






শূন্য শূন্য ছায়া

ফেলে যাওয়া শূন্যতা গুলো

বেড়াল আদরে ঘরময় ঘোরে

দেয়াল জুড়ে,

মোমবাতির আলোক শিখায়

সে ছায়া আস্ফালন দীর্ঘতা পায়,

কংক্রিটের ছাদ ভেঙে

যোজন বিস্তৃত প্রান্তর জুড়ে

সে এক কিম্ভুত প্রতিধ্বনি

আঁধারে হারায়।


শব্দ ছায়ায় আঘাত অসাড় ফাটল

বিস্তৃতি পায়,

সেই সব শূন্য ছায়া ছাই ভস্ম

স্মৃতির শরীর জুড়ে ঘুরে ঘুরে

ঘুরে ঘুরে মরে

ফাঁপা এক শরীর খোঁজে

আলিবাবার প্রত্ন গুহায়।


আমি তখন বরফে ঢালা

শীতলপাটি চড়ে

আলোক

আলোকবর্ষ দূরে।