মতিউল ইসলাম
তৃষ্ণা
নোনা ধরেছে পাঁজরে,
ঝুরঝুর ঝরছে আঝোরে,
বহুদিন আসে নি সোনা রোদ
বড়ো স্যাতস্যাতে হয়ে আছে মন.
ঝুল জমেছে হৃদয়ের কুঠুরিতে
নিকোনো হয় নি কতোকাল,
পাথরের গায়ে লটকে থাকা
মুর্তির মতো ভাবনা চিন্তা গুলো
স্থবির, যেন
ফেলে আসা দির্ঘশ্বাস.
আটকে আছি ঝুল বন্দী প্রতঙ্গের মতো,
যতোই ছটফট করছি ততোই
আটকে যাচ্ছি জালের গভীরে,
টিকটিকির মতো মৃদু পায়ে
এগিয়ে আসছে মহাকাল,
এক টুকরো সূর্য দেবে?
একটু আলো পান করতাম.
আমার আমি
আমার ভেতরে একটা আমি আছে,
তার কাম ক্রোধ লোভ আছে,
আর আছে আমার বিব্রত করার
দুর্নিবার আখাঙ্খা.
হয়তো বসে বসে পড়ছি শরৎ সমগ্র
হঠাৎ ভেতরের আমি বললো
একটা সিগারেট হয়ে যাক,
কিংবা একমনে একটা মালা গাঁথতে
চাইছি
হঠাৎ সে বললো ছিড়ে ফেল,
আমার ভেতরে একটা আমি আছে.
আমি ক্লান্ত হলে সে আমার দৌড় করাতে
চাই, বিষাদ এলে হাসাই.
অপমানের বদলা নিতে চাই অস্ত্র
হাতে.
যাকে ঘৃনা করি প্রানপনে সামনাসামনি
দেখা হলে হাসি মুখে বলি ভালো তো?
ভেতরের আমি খামচে ধরে আমার
হৃদপিণ্ড, বলে
ন্যাকামী.
স্পষ্ট কথা কষ্ট করে বলতে পারিনি
কখোনো,
ভেতরের আমি আমার দেখে হাসে
আট্টহাসি.
বলে সাবাস! এতো ভালো অভিনয়!
আমার মুখোশ টেনে খুলতে চাই সর্বদা,
আমার ভেতরে একটা আমি আছে,
ভেতরের আমি আমি হতে পারলাম কই?
দ্বিখণ্ডিত রয়ে গেল আমার আমি,
আমার আমি হয়ে উঠা হলো না.
একটি কবিতার জন্য
কবিতার জন্য শুধু একটি কবিতার
জন্য কাটাতে পারি হাজার বিনিদ্র
রাত,
পাড়ি দিতে পারি দুস্তর পারাবার.
একটি কবিতার জন্য ভুলে যেতে পারি
তোমার নরম স্পর্শ.
যে কবিতা সৃষ্টি করবে আকাশের বুকে
রামধনু,
ভরে দেবে মায়ের শূন্য কোল,
একটি কবিতার সন্ধানে রত আছি অবিরত ,
যা মুছে দেবে মসজিদ মন্দিরের
ব্যাবধান.
যার প্রতিটি ছত্র ছড়িয়ে পড়বে
দিগন্ত থেকে দিগন্তে,
মিশে যাবে হাজার ফুলের সুগন্ধে.
একটি কবিতার জন্য হতে পারি
ভবঘুরে,
যার মুর্ছনায় মাদলে উঠবে
মহুয়ার নেশা.
একটি কবিতার জন্য
ভুলে যেতে পারি জন্ম মৃত্যু কে,
যদি তা এনে দেয় মায়ের স্পর্শ.
একটি কবিতার জন্য শুধু একটি
কবিতার জন্য, তোমার হাত ধরে
হাঁটতে পারি এক পূর্ণিমা থেকে
আরেক পূর্ণিমা,
মাঝে যতোই আসুক লক্ষযোজন
অমাবস্যা.
তবুও
মৌমাছির চাকের মধু বের করার মতো
নিংড়ে নিতে চেয়েছি সুখ,
জ্বালিয়েছি আগুন, উড়িয়েছি
ধোঁয়া
সুখের সন্ধান পাইনি,
শুধু হৃদয় পোড়ার কটু গন্ধে
আচ্ছন্ন হয়েছে তামাম বোধ ।
আকাশে হাজার সাদা পায়রা উড়ানোর
মতো করে শান্তির খোঁজে পাড়ি দিয়েছি
দিক বিদিক,
শান্তি আজো অধরাই,
শুধু হাজার স্বপ্ন পথভ্রষ্ট হয়েছে।
প্রেমের জন্য নিঃস্ব করেছি নিজেকে,
নিজের ছোট্ট বাসা বানাতে গিয়ে
ধংস করেছি হাজার অরণ্য,
তাই আমার বাসায় ডাকে না কোন পাখি।
শুধু এক গভীর একাকীত্বে
তাজমহলের অভ্যন্তরে
অশ্রু ফেলে মমতাজ।
তবু আশা মেটে না
আর একটা ভুলের জন্য
আরো হাজার পদক্ষেপ
প্রার্থনা
মনের মাঝে জমে থাকা কষ্ট কে
যদি বৃষ্টির মতো ঝড়িয়ে দিতে
পারতাম বেশ হতো,
বেশ হতো হঠাৎ করে উড়ে আসা
মৃত্যু ভয় কে গলা টিপে ধরতে পারলে.
পারলে যাবতীয় অন্ধকার কে
দিতাম দূর করে,
সূর্যের কাছে আলো এনে রাঙিয়ে
নিতাম চারপাশ।
চারপাশে স্তাবক নয় ছড়িয়ে থাকুক
আপনজন,
ব্লাকহোলের অন্ধকার নয়,
আমার নিহারীকার উজ্জ্বলতা চাই।'
চাই বললেই পাচ্ছি কোথায়?
হয়তো বলবে এটাই জীবন,
জীবন যদি এমনই হয়
চাই না এ জীবন,
আমি আমরণ মায়ের আঁচলে
আশ্রয় নিতে চাই.
বিনিময়ে ছাড়তে পারি স্বর্গ, মত্য
,
জীবন.
সে আমার শ্রেষ্ঠ পাওয়া,
আমার সব পাওয়ার রূপকথার
দেশ।