রবিবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৮

মধুমিতা মুখোপাধ্যায়


মধুমিতা মুখোপাধ্যায়

একা

বোবায় ধরা নিশি
একঘেয়েমির আলমোড়া ভেঙে শোনে
ঝিল্লির কনসার্ট........
নীল তারার বুকে ওম খোঁজে
শ্রাবণী রাত.......
সময়ের সেকেন্ড কাঁটা
শব্দ জাগায়
                    একা....!








নিঃস্ব কালপুরুষ

শেষ কবে পাখীর ঠোঁট ছুঁয়ে তোমার শিহরণ মনে আছে ?
শেষ কবে লোমহীনবুকে প্রস্তরযুগের প্রজাপতি মেলেছিল ডানা ?
শেষ কবে সেই বুনোহাঁস উরুতে রেখেছিল একমুঠো ভেজা সোহাগ?
শেষ কবে গোধূলির রঙধনু দেখেছিল তোমার নীল আকাশ ?
শেষ কবে নদীর চরে জোৎস্নাঘেরা কাশের আঁচলে ডাহুক শিশুর স্তন্যপান ?
শেষ কোন্ রাতে স্বপ্নের গভীরে কজ্জল মেঘে কল্পনার বৃষ্টিযাপন ?

শেষ যেক্ষণে দুয়ারের পাপোষ থেকে ঝরে গেছে
তোমার মোহের ধুলো....... চিরমুক্তির এক অনিষিক্ত বটফল হয়ে
ঝাঁক ঝাঁক পতঙ্গের শরীর বেয়ে
নিরন্তর আশ্লেষে বপন করেছ আত্মসুখ........
অবিরত বহুগামীর কান্নাভেজা পদচিহ্নের ময়দানে
প্রত্যেক সন্ধ্যায় এদিক সেদিক পড়ে থাকা বাদামের খোলায়
গর্ভপাতে ফেলে এসেছো ভ্রূণ ভালবাসা.....!

এই শরতে ঊষসীর চুম্বন মাখা শিশিরবিন্দুতে
তোমার পিয়াসী সবুজ মনটা ধুয়ে দেখ....
তোমার দেউলটিতে শূন্যতার বিগ্রহের সামনে
কখনো জ্বলেনি একটাও রূপকথার সাঁঝবাতি
শঙ্খের ফুৎকারে ধ্বনিত হয়নি বিজয়ায় দেবীর বিসর্জন..
নিষ্পন্দ বাতাসে ওড়ে  নিঃশেষ চন্দনধূপের ছাই......
শিউলির বোঁটা থেকে বরণের সিঁদুর ঝরিয়ে
অহংকারী পারদের দ্যুতিতে পরিব্যপ্ত রেখেছ তোমার চারপাশ......

সেখানেই  নিঃসঙ্গ আলে লালচে দগ্ধ ক্ষত হয়ে
মধুর রোদ্দুরে অমল তুমি এক নিঃস্ব কালপুরুষ!








শেষ আকুতি

নিরন্তর কাটাকুটি খেলা..........
বিতৃষ্ণায় ছিঁড়ে দিয়ে অতীতের পাতা
কিলো দরে বেচে নিই অবহেলার রেজকি
চাওয়ার জঞ্জাল আর পাওয়া যত উদাসীন উপহার.....
শূন্যতার আকাশে নীল সন্ধ্যার নক্ষত্র হয়ে
তুমি খুলে বসতে যেই কবিতার পাতা......
আমি তো ভরেছি নিজেকে দুহাতে......
অযাচিত পাওয়ার উদ্দাম আশ্লেষে গভীরতর সুখে ....
ইছামতীর আঁজলা ভরা জলে ভিজেছি দিনভর.....
আবেশে....অনুরাগে...
তবে কেন অজানা এক তরঙ্গহীনতা আজ সাগরে ?
জমাট বাঁধছে নুনের পাহাড়.......ঢেউ নেই,
জীবনের চিহ্ন নেই......শুধু শকুনের কঙ্কাল নিয়ে
শৃগালের হুটোপাটি চরাচর জুড়ে.....
আমি তো যাই নি কখনো স্বেচ্ছায়.....
তবে আস না কেন শ্রাবণের বৃষ্টি নিয়ে
ওম নিতে..... আমার তৃষিত শরীর
বেয়ে নেমে যাওয়া প্রেমের আলোড়নে......
নষ্ট জীবনের আত্মসুখে আসো না ....
নাকি হৃদয় জুড়ে অণুরনিত আজ
বাউলিয়া গানের তান....
তাই  ব্যস্ততায় আসো না ?
অথবা আজকের যেটা নেশা কাল সেটা
থাকে না বলেই আর আসো না?
জানি এ ফেরা তো ফেরবার নয়
তবু একবার ফিরে এসো
চুপকথায় মুখরিত পথ বেয়ে.....
বৈশাখী সন্ধ্যার ঝড় হয়ে তুমি এসো
বাদলের কদমের ফুলে তুমি মেশো
ভোরের পাখীর গানে...
শিহরিত চায়ের কাপের আলাপনে তুমি এসো
গোধুলির পলাশরাঙা আকাশপ্রদীপে তুমি এসো
সহবাসে চাদরের আদরে ফিরে এসো !
তুমি এসো শুধু এসো ফিরে এসো........!
জীবনের স্রোতে ফল্গুর আবেগে একবার তুমি মেশো.....
সারাদিনের ব্যস্ততার ভিড়ে...
রাতের লাগামহীন আব্দারের নীড়ে তুমি এসো....!
জীবনের ঝাপসা মুকুরে জীবন্ত অবয়ব হয়ে এসো....
গ্রামের পানাপুকুরে গাছেদের ছায়া ঘেরা
একলা দুপুরে ফিরে এসো.....
তোমার উদোম বুকে নিঃশব্দে
পাহাড়িয়া উৎসবের উদযাপন.......
আমার ঘ্রাণের সাথে মিশে যেও ফাগুনের ফাগে.......
আর বিলম্বিত রাগে.....
তারপর শুধু একবার তুমি এসো
শুধু এসো ফিরে এসো.......জীবনের অন্তিম যাত্রায়
একটিবার নাম ধরে ডেকে....ফিরে এসো ......!








ইচ্ছে

ইচ্ছা জাগে আজ এক পশলা বৃষ্টিতে
নিজেকে ভেজাই আর একবার.......
বটের ঝুরি নামা একরাশ চুল থেকে
টুপটাপ ঝরে পরা জলবিন্দু
সবুজের উপত্যকা বেয়ে পৌঁছে যাক্
মহাসিন্ধুর 'পারে ! প্রাচীন সভ্য পথ ধরে
দখিনা হাওয়া ছুঁয়ে দেখবে পশ্চিমী প্লাবন!
আমি হরপ্পার ইতিহাসের পাতায় ছাউনি তুলে
ঘর বাঁধবো তোমার সাথে ! মনসিন্ধুর নয়নজুলিতে
তুমি কি ধারণ করবে আমায় পদ্মপাতা হয়ে....?
আমি একবিন্দু জল হয়ে তোমাকে জড়াবো.....!!!







মধুর স্বপ্নে

আমার রাত আকাশটা চিরদিনই মধুরস্বপ্নে
সুর তোলে কোমল রাগে....জানলার কাঁচে
ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোর প্রতিফলন....
আচ্ছা ভালবাসার রং নাকি হলুদ.....!
আমি অনুভুতির বুকে মনের লাল রং
মেখে নিয়ে তখন গোধূলির রংধনু...
সেজে ওঠে আমার ছোট্ট পৃথিবী.......
আহ্লাদে তখন জানলার কপাট খুলে দিই ...
সব তারা ঘুমিয়ে গেলে ঐ নিঃসঙ্গ নক্ষত্র আসে.....
আমাদের মিলন হয়... নারীজীবনের পূর্ণতা
তখন ঘাসের বুকে ঝরে পরে হীরক দ্যুতির বিচ্ছুরণে !
প্রথম রোদ্দুরের পুষ্টি তো এই পূর্ণপ্রেম থেকেই.... !