শুভ্রাশ্রী
মাইতি
সম্পর্কবৃক্ষ
সম্পর্কবৃক্ষের
ডালপালার অগাধ বিস্তার জীবন ক্যানভাস জুড়ে।
ডালে
ডালে থোকা থোকা সবুজ পাতার সমারোহ ভরা আয়োজনে
আলো
ছড়ায় মনমাতানো রামধনু ফুল আর ফলের পূর্ণতা।
বাহারি
দেখনদারিত্বের চৌকাঠ ডিঙালেই
বনসাই
ক্যাকটাসের লুকানো অন্দরসাজের প্রাচুর্য।
ধূসর
মাটির আশ্চর্য প্রাণরসের অকৃত্রিম আশ্রয়ে
রোদ-বৃষ্টি-ঝড়-ঝঞ্ঝার
খেয়ালখুশির আলপনাতে
প্রাণ
পায় সম্পর্কবৃক্ষের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নউড়ান।
গাছের
ডাল,
পাতা, ফল, ফুলের আবডালে
হাতছানি
দেয় সম্পর্কের আলো-আঁধারি সোনাঝরা রোদ।
গাছে
ওঠার ঠিকঠাক কৌশলটা শিখতে হয়---
নাহলে
লুকানো কাঁটার গোপন আদরে
রক্ত
ঝরে শরীর আর মনের প্রতিটি কোষজুড়ে।
পাখির
নির্ভার উড়ানকে ডানায় বেঁধে যদি শুরু কর সম্পর্কযাত্রা
একদিন
না একদিন ঠিক ছুঁয়ে দেবে সম্পর্কবৃক্ষের ফুলফোটা মগডাল।
যেখানে
সম্পর্কশাখার অনন্ত ফ্রেমে আঁকা আছে একটা উদার, উন্মুক্ত আকাশ।
কথারা
ফুরিয়ে যায়
কলার
টিউনটা বার বার বেজে ওঠে মোহময়ী সুরে।
স্মার্টফোনের
আঙুল আদরে জ্বলে ওঠে ভার্চুয়াল নীল আলো।
শব্দ-কথা-ছবির
রঙবাহারী আবির আলপনায়
ভালবাসার
রামধনু রঙে ভরে দিগন্তের দুই মন আকাশ।
সমস্ত
দূরত্বকে জয় করে ম্যাগনেটিক ইথার তরঙ্গের নীরব অভিষেক---
উষ্ণতায়
ভালবাসা ছড়ায় লাল গোলাপের পাঁপড়ি।
তবু
নেমে আসে সময় রাজার অদৃশ্য শাসনদন্ড।
গোলাপী
কথায় জমে রোজনামচার কেজো ধুলো।
হৃদয়ের
শুকিয়ে আসা ঝরণার উৎসমুখে জমে আবেগের ক্ষয়ে আসা নুড়ি-পাথর।
মরচে
পড়া অনুভূতি উষ্ণতায় গলে না অভিমানের জমাট কঠিন বরফ।
মন-পুকুরে
কচুরিপানার অবাধ বিস্তার----
জল-আয়নায়
আর ভাসে না প্রিয়-মুখ।
না-বলা
কথারা লুকিয়ে যায় কাজের ভিড়ে
ইথারে
ইথারে ভেসে আসে কেজো সুরের গান।
আজও
ফোনটা বাজে মোহময়ী সুরে
আজও
চলভাষের নীল আলোয় চলে দিনগত পাপক্ষয়----
শুধু
না -বলা কথারা হারিয়ে যায়...
না-শোনা
কথারা ফুরিয়ে যায়...।
অক্ষরের
আকাশ
রাস্তার
কালো পিচে গর্জন করে ছুটে চলা মেঘ-গাড়িগুলোর ঠিক পাশে
বিবর্ণ,ছেঁড়া
একফালি প্লাস্টিক ঘিরে,
শেষ
বিকেলের আলোয়
রোজ
নেমে আসে অক্ষরের আকাশ।
খেতে
না পাওয়া শুকনো তিনটি কচিমুখের মেঘ-কালো যন্ত্রণা ছিঁড়ে
এক
আকাশ সোনা রোদ্দুরে হেসে ওঠে
বর্ণপরিচয়ের
কালো কালো অক্ষরের উচ্ছলতা।
নিয়ন
আলোয় ঝলমল করা চকচকে চোখে
শাণিত
তরবারির ঝলসানি---
বীজধান
ছড়াতে থাকে মানুষ হওয়ার শস্যসবুজ স্বপ্নগুলো।
কাগজ
কুড়ানির ত্রিপল ঢাকা তাপ্পি মারা সংসারে
অনেক
‘ নেই ’-এর ভিড়ে আলো করে থাকে গুপ্তধনের স্কুলব্যাগ।
ত্রিপল
ঢাকা গুমোট অভাবী জীবনের
নিকষ
কালো খনি আঁধার এক ফুঁয়ে মিলিয়ে যায় মহাশূন্যে----
যখন
মাথার ওপর অক্ষরের আকাশ আলোর আঁচল মেলে
ধরে।
আলোর
হাত
জন্মলগ্নের
সবটুকু আনন্দ,বিস্ময় বুকে নিয়ে
শুরু
হয় জীবনের চরৈবেতি যাত্রা।
ইচ্ছেনদীর
ঢেউয়ের দোলায়
পাল
তোলে জীবনের ময়ূরপঙ্খী নাও।
জীবননদীর
ঘাটে ঘাটে ঠেকে নৌকা।
বিকিকিনির
হাট জুড়ে চলে সম্পর্কের ওঠানামা,
হাতে
হাত মিলিয়ে চলে কত না হাতের মিছিল।
সময়
ধারাপাতের পাতায় পাতায়
বিশ্বাস,ভালবাসা,নির্ভরতার আশ্বাসে
আলো
হয়ে ওঠে কিছু কিছু হাত....।
সেই
আলো হাত কখনও মাঝি হয়,দাঁড় বায়।
হাল
হয়,পথ দেখায়----
কখনও
বা হয় পাল,রুখে দাঁড়ায় সমস্ত ঝড়ের বিপরীতে।
ঢেউয়ের
উদ্দামতার টুঁটি টিপে
পার
করে দেয় জন্মযাত্রার তরঙ্গবিক্ষুব্ধ পথ।
বন্ধুত্বের
আলো হাত একবার ছোঁয়ার মত ছুঁয়ে দেখ
হৃদয়
হয়ে উঠবে সোনা ঝরা আকাশ---
যে
আকাশে ভালবাসার রামধনু রঙ কখনো ম্লান হয় না।
অভিমন্যু
শৈশব
ঝকঝকে
কনভেন্ট স্কুলের অ্যারাবিয়ান নাইটসের আশ্চর্য প্রদীপ ঘষে
দল
বেঁধে বেরোতে থাকে ক্লান্ত শৈশবের সারি।
মোটা
মোটা বইখাতার দশমণী বোঝায় হাঁসফাঁস করে
নাচ-গান-আবৃত্তি-খেলায়
তুখোড় হয়ে ওঠার কঠিন চাপ।
এক
কোচিং থেকে অন্য কোচিং
এক
টিউটোরিয়াল থেকে অন্য টিউটোরিয়াল
যত
এগোবে তত খুলতে থাকবে চিচিং ফাঁক দরজা।
হতে
হবে ভাল,আরও ভাল,নাম্বার ওয়ান।
প্রতিযোগিতার
ইঁদুর দৌড়ে মধ্যবিত্তরা নেহাতই ব্রাত্য।
আকাশ
ছোঁয়ার নগ্ন চাহিদায় দূরত্ব বাড়ায় অভিমানী শৈশব।
হাতছানি
দেওয়া খেলার মাঠ
উথলে
ওঠা নদীর পাড়
সোনা
রোদের সবটুকু উষ্ণতা পেছনে ফেলে
অন্ধকার
চক্রবূহ্যের গভীর থেকে আরও গভীরে
পথ
খোঁজে অভিমানী অভিমন্যু শৈশব।
সে
মরণফাঁদ কেটে আলোয় আসার কৌশল
আজও
অধরা আজকের সুভদ্রার কাছে।